You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাউসমারী অপারেশন, কুড়িগ্রাম

আবুল ওহাব তলুকদার ছিলেন কুড়িগ্রাম মহাবিদ্যালয়ের ইসলামের হতিহাস বিভাগের শিক্ষক। তিনি শুধু শিক্ষকতা করেইন ক্ষান্ত হননি,তিনি দেশ ও জাতির মঙ্গলের কথা ভাবতেন.১৯৬৯ সালে গনঅভ্যুথানকালে কুড়িগ্রামে একজন নেপথ্য সংগঠক ছিলেন।তিনি আসীম সাহসীকতায় সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান। ১৯৭০ এর নির্বাচনে,১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দলোনেও তাঁর ভুমিকা গৌরবউজ্জল।
পাকিস্থানী সেনারা কুড়িগ্রামের দখন নিলে তিনি তাঁর পরিবারকে ভারতে রেখে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। তিনি বামনহাটে যুদ্ধ শিবিরে ছাত্র,যুবকদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে প্রেরণ করতেন।তিনি বামহাটে যুদ্ধে শিবিরের মূল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭১ সালের জুলাইতে তিনি তথ্য পান পাকিস্থানী সেনারা বাউসমারী শিংমাড় গ্রামে এসে নারী ও পুরুষের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে এবং লুটপাট করছে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্থানী সেনাদের বাউসমারী ও শিংমাড়েই অ্যামবুশ করতে হবে। সৈন্যরা কখন আসে যায়,কতজন থাকে, কি ধরনের অস্র ব্যবহার করে এসব তথ সংগ্রহ করার জন্য রেকি কার্যক্রমের দায়িত্ব নেন আব্দুল ওহাব তালুকদার। তাঁর জন্য এ কাজটা সহজ ছিলো কারন তাঁর নিজের বাড়িও বাউসমারি গ্রামে। তিনি গেলেন গ্রামে সবার অজান্তে,অতি সন্তপর্ণে।সাথী ছিলেন সহযোদ্ধা ডা.মজিবর রহমান ও আর একজন।সীমান্ত অতিক্রম করে পরিত্যাক্ত রেলপথ ধরে হাঁটছিলেন কিন্তু প্রকাশ্যে না। তারা জংগলাকীর্ণ স্থান দিয়ে পার হচ্ছিলেন কিন্তু জানালার আড়ালে পাকিস্থানী সৈন্যরা আত্নগোপন করে ছিলো।
তাঁদের উপলব্দি টের পেয়ে আব্দুল ওহাব তালুকদারের অপর দুই সহযোগী আত্নগোপন করতে পারলেও তিনি পারলেন না।পাকিস্থানী সৈন্যরা অত্যন্ত কাছে এসে ব্রাস ফায়ার করে তাঁর সমস্ত দেহ ঝাঝরা করে দেয়।অন্য মুক্তিসেনারা গুলির শব্দে দ্রুত সেখানে আসে কিন্তু তাঁর আগেই পাকিস্থানী সৈন্যরা পালিয়ে যায়।জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে আবিস্কার করা হয় নিবেদিত প্রানশিক্ষক দেশপ্রেম ও মানব প্রেমে উদবুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব তালুকদারের দেহ।হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থী তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে চিরতরে শায়িত করে বামনহাট সীমান্তবর্তী ভারতের কালমাটি গ্রামে।
[৪৭] গুলনাহার তুহীন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!