বসন্তপুর দাসপাড়ার যুদ্ধ, কুষ্টিয়া
গড়াগঞ্জ ব্রিজের শোচনীয় পরাজয়ের পর হানাদার বাহিনী আরও শক্তি সঞ্চয় ও সৈন্য বাড়িয়ে শৈলকুপা থানার সমগ্র অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। শৈলকুপা থানা, রেজিস্ট্রি অফিস হাসপাতাল এবং গাড়াগঞ্জ বাজারের একটি বিশাল গুদামঘর পাকবাহিনী ও এদেশীয় দালাল রাজাকার আলবদর বাহিনী স্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে। বিশেষ করে গাড়াগঞ্জ এলাকায় আলবদর বাহিনীর জেলা প্রধান বর্তমান জামাতে ইসলামীর শৈলকুপা থানা আমির খন্দকবাড়িয়া গ্রামের প্রধান বর্তমান জামাতে ইসলামীর শৈলকুপা থানা আমির খন্দকবাড়িয়া গ্রামের অধ্যক্ষ সিরাজ আলীর নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে সিরাজ বাহিনীর প্রত্যক্ষ ইঙ্গিত, মদদ ও সহযোগিতায় হত্যা, অপহরণ, ছিনতাই, রাহাজানি, অগ্নিসংযোগ ব্যাপকভাবে ঘটতে থাকে। গাড়াগঞ্জ বড়দাহ এবং হামদামপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমানের বাড়িসহ শত শত বাড়িতে তারা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। অগ্নিসংযোগের আগে হ্যান্ড মাইকে কোরানের আয়াত পড়ার পর বহ্নুৎসব শুরু করা হতো।
২ জুলাই পাক হানাদার ও এদেশীয় রাজাকারদের দ্বারা সংঘটিত বর্বরতার কথা এখনো স্থানীয় মানুষের স্মৃতিতে অম্লান। বর্তমানে যেখানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, তারই পূর্ব-দক্ষিণে ১ কিলোমিটার ভেতরে বসন্তপুর গ্রাম। এই গ্রামের দাসপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাধান্য থাকায়, সেখানে ইসলামের সেবক পাকিস্তানবাদী, কথিত জামায়াত চক্রের তথাকথিত দেশপ্রেমিক রাজাকার মওলানা নুরুন্নবী হামদানি (স্বাধীনতার পর দুর্নীতির দায়ে দল থেকে বহিষ্কৃত), মৌলবী মোশাররফ হোসেন ও তাদের সহযোগী সিরাজ আলীর প্রত্যক্ষ ইঙ্গিতে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। বসন্তপুরের অধিবাসীদের একমাত্র অপরাধ তারা হিন্দু। তাই তারা ইসলাম আর পাকিস্তানের শক্র। তাদের হত্যা করা জায়েজ ঘোষণা দিয়ে ‘নরায়ে তাকবির’ শ্লোগান দিয়ে বর্বরতার চরমতম নজির স্থাপন করা হয়। সেদিন বসন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গ্রামবাসীদের জড়ো করে ঘাতক বাহিনী নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালায়। মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে দাসপাড়া পরিণত হয় বিরানভূমিতে। এই গণহত্যার একজন প্রত্যক্ষদর্শী খাতের আলী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলী জানান, সেদিন বসন্তপুর এলাকার ১৯ ব্যাক্তিকে নির্মম অত্যাচার করার পর গুলি করে হত্যা করা হয়।
[৫৭] সদরুল আইন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত