বসুর হাট যুদ্ধ, নোয়াখালী
আগস্ট মাসের ১৪/১৫ তারিখে সীমান্ত পার হবার সময় গুণবতীর দক্ষিণে আব্দুল হাফেজ, মোজাম্মেল হোসেন বাচ্চু, আহমেদ সুলতান খান, মোস্তফা ভুঁইয়া রাজাকার ও শান্তি কমিটির হাতে ধরা পড়েন। সেসময় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানী হানাদার ক্যাম্পে। তাদের উপর চলে শারীরিক নির্যাতন। তাদেরকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। সন্ধ্যা নামার পরেই শুরু হয় তল্লাশি। আহমেদ সুলতানের কাছে পাওয়া যায় রিভলবার, মোস্তফা ভুইয়ার কাছে পাওয়া যায় জয় বাংলার প্রচারপত্র যেখানে জরুরি তথ্য ছিল। কাগজে লেখা ছিল অপারেশনের তারিখ, কলাকৌশল এবং কিভাবে অস্ত্র নিয়ে আসবে নুরুজ্জামান চৌধুরীর কাছে তার বিবরণ। পাক মেজর কুতুবকে তাদের রাতেরবেলা গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ দিল। কুতুব মেজরের সামনে তাদের নানা ধরনের গালিগালাজ করল এবং বলল মৃত্যুই তাদের একমাত্র শাস্তি। কিন্তু রাত হবার পর যখন পাক মেজর চলে গেলেন তখন কুতুব তাদের চারজনকে ক্যাম্প থেকে বের করে অনেক দূর পর্যন্ত এনে নিরাপদ স্থানে পৌছে দিয়ে বললেন, ‘এবার বাড়ি যাও, আমি মেজরকে বলব, তোমাদেরকে গুলি করে তোমাদের লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছি’। ঠিক একই দিনে নোয়াখালী কোম্পানি কমান্ডার লুৎফুর রহমানের নির্দেশে জনাব রফিক কমান্ডারের নেতৃত্বে এ.বি.সি.ডি. জোনের মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে নোয়াখালির বসুরহাট বাজারস্থ পাকবাহিনী ও রাজাকার ক্যাম্পে এক বৃহৎ অপারেশন চলায় চালায়। জনাব মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ‘সি’ জোনের ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা বসুরহাট অপারেশনে অংশ নেন। এই যুদ্ধে একলাশপুরের জনাব আবু সুফিয়ান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। স্বাধীনতার কিছু পরে সরকার তাঁকে বিদেশ পাঠালে সেখানে তিনি মারা যান।
পাকবাহিনীর সাথে লক্ষীপুর বাগবাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের দুইঘন্টা ব্যাপী যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে হানাদারবাহিনীর অনেক ক্ষতি হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, বেগমগঞ্জের উত্তরাঞ্চলে সুবেদার লুৎফুর রহমানের ক্যাম্প থাকার কারণে হানাদার বাহিনীর জোন ভাগের আগেও বগাদিয়া ও রামগঞ্জ পর্যন্ত পরপর কয়েকটি বড় অপারেশন করে এবং উভয় পক্ষের অনেক ক্ষতি হয়।
[৪৪] জোবাইদা নাসরীন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত