You dont have javascript enabled! Please enable it!

বরিশাল রনাঙ্গণ

পাকসৈন্যরা এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি মাদারীপুর শহর দখল করে নিয়েছিল। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ওরা মিলিটারী ভ্যান নিয়ে বরিশাল জেলার সীমানায় এসে প্রবেশ করল। খবর পেয়ে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য মুক্তিবাহিনী গৈরনদী থেকে মার্চ করে এগিয়ে চলল। এদের মধ্যে যুদ্ধ-বিদ্যায় অভিজ্ঞ কেউ ছিল না-সকলেই কাঁচা, সকলেই অনভিজ্ঞ। মাস খানেকের রাইফেল ট্রেনিং আর নিরভীক দেশপ্রেম, এইটুকুকেই সম্বল করে তারা এই দুর্দর্শ শক্রদের মোকাবিলা করতে চলেছে। বরিশাল আর ফরিদপুর জেলার সীমান্তরেখায় ভুরপাটা গ্রাম। পাকসৈন্যবাহিনী বেলা এগারোটার সময় এই ভুরপাটার সেতু পেরিয়ে ইল্লা গ্রামের দিকে চলে এসেছে। দু’পাশের গ্রামবাসীদের মনেও আত্নকের সঞ্চার করে ভ্যানগুলি গর্জন করে ছুটে আসছে। রাইফেল, মেশিনগান, মর্টার সবকিছুই আছে তাদের সঙ্গে। কুড়ি-পচিশটা রাইফেল আর বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ-বিদ্যালয় অশিক্ষিত একদল তরুণ তাদের প্রতিরোধ করতে চলেছে। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি তরুণ এই সীমান্ত এলাকার গ্রামে গ্রামে ঘুরে সংগঠনের কাজ করে চলেছিলেন। দু’জনেই কলেজের অধ্যাপক। মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য অধ্যাপনার কাজ ছেড়ে দিয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে এসেছেন। আজ সকল কর্তব্যের বড় কর্তব্য মুক্তিযোদ্ধে সামিল হওয়া। শক্র সৈন্যরা যে বরিশাল জেলার মাটির উপর এসে গেছে, এ খবরটা তখনও তারা জানতে পারেননি। আক্রমণ আসন্ন, ভুরপাটা গ্রামের সেতুটাকে এখনই ভেঙ্গে ফেলা দরকার। সেতুটাকে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখবার জন্য তারা দু;জন রকশাযোগে ভুরপাটা গ্রামের দিকে চলেছিলেন। হল্লা গ্রামে এসে পৌছতেই মিলিটারী ভ্যানের গর্জন শুনে চমকে উঠলে তারা। সরে পড়ার সময় ছিল না, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে দ্রুতবেগে ছুটে আসা ভ্যানগুলি তাদের দৃষ্টিগোচরে এসে গেল। আর ঠিক সেই সময় একটা বুলেট তাদের দু’জনের মাঝখান দিয়ে রিকশার গাঁ ভেদ করে বেরিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে দু’জন রিকশা থেকে পথের দু’পাশে ছিটকে পড়লেন। বরিশাল জেলার বুকে শক্রপক্ষের এই প্রথম গুলিবর্ষণ।
তারা দু’জন হামাগুড়ি দিয়ে উঁচু সড়ক থেকে নিচে নেমে এলেন। তাদের ভাগ্য ভাল, তারা শক্রদের নজরে পড়ে যান নি। তারা গুণে গুণে দেখলেন। ১০তা ভ্যান, তার পেছনে একটা এম্বুলেন্স গাড়ি। ভ্যানগুলি সম্ভবত গৈরনদীকে লক্ষ্য করে ছুটে চলে গেল। এরা দু’জন গ্রামের পথ ধরে পেছন পেছন ছুটলেন।
বারথী গ্রামের সামনে গিয়ে ভ্যানগুলি দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর একদল সৈন্য ভ্যান থেকে নেমে গ্রামের ভেতর ঘুরে ঘুরে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়ে চলল। যাকে সামনে পেল তাকেই মারল। তখন কালীপূজার সময়। ওরা পূজাবাড়িতে গিয়ে পূজায় রত দু’জন পুরোহিতকে হত্যা করল। এই ‘পবিত্র’ কর্তব্য সুসম্পন্ন করে ভ্যানগুলি আবার তাদের গন্তব্যস্থলের দিকে যাত্রা করল।
বারথী থেকে মাইল দুই দূরে কটকস্থল নামে একটি গ্রাম। মুক্তিবাহিনীর যে যোদ্ধারা শক্রসৈন্যদের প্রতিরোধ করবার জন্য গৌরবদী থেকে যাত্রা করেছিল, তারা সেই সময় এই কটকস্থল গ্রামে ধারে বসে বিশ্রাম করছিল। ভ্যানগুলি এগিয়ে আসতেই প্রতিদ্বন্ধী দু’পক্ষ পরস্পরকে দেখতে পেল। পাকসৈন্যরা তাদের লক্ষ্য করে প্রথমেই গুলি ছুঁড়ল। প্রতিপক্ষ যে কোন সময় তাদের উপর এসে চড়াও হতে পারে, এমন একতা অবস্থার জন্য মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা প্রস্তুত ছিল না। সেজন্য তাদের মূল্য দিতে হয়েছিল। কিন্ত একটু বাদেই তারা তাদের পজিশন নিয়ে নিল। তারপর পরস্পর অজস্র ধারায় গুলি বিনিময় চলল। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে এই যুদ্ধ চলেছিল। কিন্ত পাকসৈন্যরা যখন ভারী মেশিনগান ব্যবহার করতে শুরু করল, তখন রাইফেল সর্বস্ব মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সামনে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। দাঁড়িয়ে থাকাটা সমীচীনও ছিল না। তারা পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ পেছনে ফেলে রেখে গ্রামের অন্তরালে অদৃশ্য হয়ে গেল।
কটকস্থল গ্রামের যুদ্ধের দিন কয়েক পড়ে গৌরনদী পাকসৈন্যদের দুখলে এসে গেছে। এখানকার ঘাঁটি সুদৃঢ় করে নিয়ে এবার তারা বরিশাল শহর দখলের অভিযানের জন্য তৈরি হচ্ছে। ওপর দিকে বরিশাল শহরে মুক্তিবাহিনীও চুপ করে বসে নেই। হামলাকারী শক্রদের প্রতিরোধ করবার জন্য তারা তাদের পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করে চলছিল।
বরিশাল শহরের মুক্তিবাহিনী গৈরনদীর মুক্তিবাহিনীর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ও অস্ত্রবলের দিক দিয়েই নয়, তাদের মধ্যে যুদ্ধবিদ্যায় শিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ লোকও ছিল। ছাত্র ছাড়াও বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ই.পি.আর. বাহিনীর জওয়ান, পুলিশ, আনসার ইত্যাদি নিয়ে এই বাহিনী গড়ে উঠেছিল।
মুক্তিবাহিনীর নেতারা প্রতিরোধ প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে এসে এক নতুন রণকৌশল উদ্ভাবন করেছিলেন। এই কৃতিত্বের জন্য অবশ্যই তাদের প্রশংসা করতে হবে। সি এন্ড বি রোড বরিশাল শহরকে ফরিদপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত করেছে। শক্ররা এই পথ দিয়েই বরিশাল শহর আক্রমণ করতে আসবে, তাদের গতিপথকে রুদ্ধ করে দেবার জন্য এবং তাদের অচল করে ফেলবার জন্য ইতিপূর্বে এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে নানাভাবে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়েছিল। মুক্তিবাহিনীর নির্দেশে সেই সমস্ত গ্রামের লোকেরা উদ্যোগী হয়ে সেই কাজে হাত দিয়েছিল। কিন্তু মুক্তিবাহিনী শেষ মুহূর্তে হঠাৎ তাদের এই পরিকল্পনা বাতিল করে দিয়ে এক নতিন রণকৌশল নিয়ে শক্রপক্ষের জন্য এক মায়ার ফাঁদ পেতে বসল। দেখতে দেখতে সমস্ত ব্যারিকেডগুলিকে সরিয়ে নিয়ে এই রাস্তাকে যানবাহন চলবার পক্ষে সুগম করে দেওয়া হলো। শক্ররা যাতে বিনা বাঁধায় এবং নিশ্চিন্ত মনে এগিয়ে আসতে পারে, সেজন্যই এই ব্যবস্থা করে হয়েছিল।
বরিশাল শহরে আসতে হলে পর পর দুটো নদী পেরিয়ে আসতে হয়। প্রথমটা শিকারপুরের নদী, দ্বিতীয়টা দোহারিকা নদী। এই দু’য়ের মাঝখানে দশ মাইল স্থলপথ। এইখানে মায়ার ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে। পথে কোথাও কোন বাঁধা পাওয়া যাবে না, কোন ব্যারিকেড সরিয়ে আসতে হবে না, কোন ভেঙ্গে ফেলা পুল সরাই করে নিতে হবে না এমন কথা পাকসৈন্যরা ভাওবতেও পারেনি। এমন সহজ সুগম পথ পেয়ে তারা মহা খুশি। তাদের সৈন্যবাহী গাড়িগুলো স্বচ্ছন্দে শিকারপুরের নদীর পাড় পর্যন্ত চলে এল।
ফেরী বোটে করে এই নদী পাড়ি দিয়ে ওপারে যেতে হবে। ওরা উল্লসিত হয়ে দেখল ফেরীঘাটের মাথায় পাকিস্তানের পতাকা উড়ছে। ফেরীবোটের লোকেরা ওদের আসতে দেখে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’বলে জয়ধ্বনি তুলল। তখনকার মতো দুরদিনে এমন সাদর সংবর্ধনা পাবে, এটা ওরা কল্পনাও করতে পারেনি। আনন্দে ডগমগ হয়ে ওরা ফেরীবোটের সাহায্যে নদী পার হতে লাগল। মুহূর্তের জন্য তাদের মনে এই সন্দেহ জাগেনি যে, এই ফেরী বোট যারা চালিয়ে যাচ্ছে, তারা সবাই মুক্তিবাহিনীর লোক ; মুহূর্তের জন্য ও তারা ভাবতে পারেনি যে তারা ইতিমধ্যেই প্রতিপক্ষের রচিত মায়ার ফাঁদে পা দিয়ে বসেছে।
এমনি করে ক্রমে ক্রমে নব্বই জন সঈন্য আর চালকসহ গাড়ি পাড়ি দিয়ে ওপারে গিয় এউঠল। এখানেও কোন বাঁধা নেই, ওরা স্বচ্ছন্দে এগিয়ে চলল। একটু দূরে গিয়েই ওরা থামল। তাদের গোয়েন্দারা চারদিকটা ভাল করে পরীক্ষা করে দেখে নিল- না, কোথাও কোন বিপদের আশঙ্কা নেই। সবাই গ্রামে ঢুকে পড়ল, নিঃশঙ্কচিত্তে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। পেছনে পড়ে রইল ন’খানা মিলিটারী ভ্যান ও তাদের চালকরা। সৈন্যদের মধ্যে কেউ কেউ গৃহস্থদের দিয়ে ডাব-নারিকেল, কলা এবং নানারকম খাদ্য আনতে লাগল, তারপর সেইখানেই তাই দিয়ে ভোজের উৎসবে মেতে গেল। কেউ কেউ গৃহস্থদের ভয় দেখিয়ে হাঁস-মুরগী, খাসী ইত্যাদি এনে জড়ো করতে লাগল। আবার আর একদল গৃহস্থ-বধুদের কাছে সোনা-দা, গয়না যা পেল সবকিছু লুটে-পুটে আনতে লাগল। এই শান্ত, ঠান্ডা আর ভেড়ার মতো নিরীহ মানুষগুলি এর প্রতিবাদে একটি কথাও বলল না। ওরা তখনকার মতো যুদ্ধবিগ্ররহের কথা ভুলে গিয়ে ভোজের উৎসবে মেতে গেছে, সৈনিকেরা শৃঙ্খলাবোধ হারিয়ে ফেলেছে। খেয়ে-দেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে আরামে এলিয়ে দিয়েছে দেহ। এমন সময় হঠাৎ একই সঙ্গে বহি রাইফেলের আওয়াজ শান্ত প্রকৃতির নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে উঠল সৈন্যরা। তাদের উপর বৃষ্টিধারার মতো গুলিবর্ষণ চলছে। শুরু রাইফেলের আওয়াজ নয় তারই সাথে সাথে শত শত দৃপ্তকন্ঠের ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি আকাশ বাতাস মুখরিত করে চলেছে। অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হতে হতে ওদের অনেক সময় কেটে গেল। অস্ত্র চালাতে গিয়েও প্রতিপক্ষের দেখা পেল না, ওরা গোপনে আশ্রয়ের অন্তরালে অদৃশ্য হয়ে একটানা গুলিবর্ষণ করে চলেছে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে আহত ও মুমূরষ পাকসৈন্যদের দুর্বল প্রতিরোধ কোন কাজেই আসেনি। সেই যুদ্ধে একটি মুক্তিযোদ্ধাও মারা যায়নি।
মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ। হামলাকারী পাকসৈন্যরা বরিশাল আর ফরিদপুর জেলার নানা জায়গায় ঘাঁটি করে গ্রামাঞ্চলে ছড়য়ে পড়েছে। এই নৃশংস মানুষ শিকারীর দল গ্রামের পর গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে, লোকের যথাসর্বস্ব লুট-পাট করে নিচ্ছে, আর যেখানে বিন্দুমাত্র বাধা পাচ্ছে, সেখানে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। এ এক অসহনীয় অবস্থা। গ্রামের লোক ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এই অসহায় নিরুপায় মানুষগুলি কি করবে, কোথায় যাবে পথ খুঁজে পাচ্ছে না।
গৌরনদী থানায় যে মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠেছিল, ইতিমধ্যে তা ভেঙ্গে চূরে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় তরুন জনকয়েক তরুণ কর্মী আবার নতুন করে মুক্তিবাহিনীকে গড়ে তুলবার জন্য আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। তবে এবার শুধু গোউরনদী থানা নয়, বরিশাল জেলা গৌরনদী আর ফরিদপুর জেলার কোটালীপাড়া ও কালকনী এই তিন থানার কর্মীরা পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিল। সেই সময় গৌরনদী থানার পূর্ব নবগ্রামের একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।
পূর্ব নবগ্রামটি বরিশাল জেলা আর ফরিদপুর জেলার সীমান্ত স্থলে অবস্থিত। পূর্ব নবগ্রামের উত্তর দিকে একটি সরু খাল তার গা ঘেষে চলে গেছে। এই খালের অপর পারে ফরিদপুর জেলার নবগ্রাম। পূর্ব নবগ্রাম থেকে মাত্র মেইল দেড়েক দূরে মেদাকুল, সেখানে পাকসৈন্যরা ঘাঁটি করে বসে আছে। এটি একটি নমঃশূদ্র অঞ্চল। এখানকার লোকদের মধ্যে অধিকাংশ কৃষক হলেও শিক্ষিত সম্প্রদায়ও আছে। তাদের মধ্যে কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও আছে। মাত্র মেইল দেড়েক দূরে শক্রদের ঘাঁটি। এখানকার বাসিন্দারা প্রতিমুহূর্তেই ওদের আক্রমণের আশঙ্কা করছিল। বাইরের লোকে কোন কিছু আভাস না পেলেও কয়েকদিন থেকে এদের ভেতরে ভেতরে একটি প্রতিরোধের প্রস্তুতি চলছিল।
সরকারী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক সিদ্ধেশ্বর সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তারা স্থির করেছিল, যদি সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে তারা ওদের বিরুদ্ধে একহাত দেখে নেবেন। পূর্ব নবগ্রামের শিক্ষিত তরুণ ও সাধারণ কৃষকরা এই উদ্দেশ্যে সংকল্পবদ্ধ হয়ে একজোট হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বরিশাল আর ফরিদপুরের নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের লোকেরা ছেলেবেলা থেকেই লাঠি, সড়কি, লেজা ইত্যাদি অস্ত্র চালনায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। পূর্ব নবগ্রামের যেসব তরুণরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে তারাও এ বিষয়ে আনাড়ি নয়, তারাও এই সমস্ত অস্ত্রচালনার অভ্যাসটা হারিয়ে ফেলেনি। এই দুঃসাহসী তরুণরা সঙ্কল্প নিয়েছিল যে, যদি সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে সড়কি, লেজা ইত্যাদি অস্ত্র নিয়েই ওদের রাইফেলের সঙ্গে মোকাবিলা করবে। প্রবীন সিদ্ধেশ্বর সরকারের উদ্যোগে এবং অর্থব্যয়ে এই সমস্ত অস্ত্র তৈরি হচ্ছে। উত্তেজনায় সারাটা গ্রাম গরম হয়ে উঠেছে। রাইফেলের বিরুদ্ধে সড়কি আর লেজা- এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।
এরা উপযুক্ত সুযোগের জন্য প্রতীক্ষা করছিল। সেই সুযোগ একদিন এসে গে। ১৩ই মে তারিখে মেদাকুলের ঘাঁটি থেকে মাত্র চারজন সৈন্য পূর্ব নবগ্রামে এসে প্রবেশ করল। সাধারণ রাইফেল নয়, ওদের সঙ্গে একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেলও ছিল। এখানকার গ্রামাঞ্চলে আসার পর থেকে পাকসৈন্যরা এ পর্যন্ত কোন দিক থেকেই কোন বাধা পায়নি। গ্রামে ঢুকেই ওরা প্রথম সিদ্ধেশ্বর সরকারের বাড়িতে গিয়ে হামলা করল। সিদ্ধেশ্বর সরকার বাড়ি ছিলেন না, তিনি তখন এদের উপযুক্ত অভ্যর্থনার জন্য উদ্যোগ আয়োজনে অন্যত্র ব্যস্ত। সরকার বাড়িতে যা কিছু মূল্যবান জিনিস পেল তা লুট পাট করে নিয়ে ওরা খালের ওপারে নবগ্রাম গ্রামের বিশ্বাস বাড়িতে লুটপাট করতে গেল। বিশ্বাস বাড়িতে লুটপাট করতে গেল। বিশ্বাস বাড়ির চিলেকোঠা ছিল। এখানকার ছাত্রদের বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি করবার ল্যাবরটরী। দুটি ছেলে সেখানে বসে তাদের সংগ্রহীত যৎ সামান্য রাসায়নিক মাল-মশলা দিয়ে হাতবোমা তৈরি করত। তাদের মধ্যে আরেকজন ছিল পাশ করা ডাক্তার। সৈন্যরা বিশ্বাস বাড়ি আক্রমণ করতে আসছে এ-সংবাদ পেয়ে তারা তাদের তৈরি কতকগুলি হাতবোমা নিয়ে বিশ্বাস বাড়ির কাছে একটা ঘন গাছপালায় ঢাকা ঝোপের আড়ালে গিয়ে দাঁড়াল। সৈন্যরা তাদের নাগালের মধ্যে আসতেই তারা তাদের লক্ষ্য করে পর পর কয়েকটি হাতবোমা ছুঁড়ল। বিস্ফোরণের শব্দে গ্রামের শান্ত আবহাওয়া কেঁপে উঠল। ভয়ে কেঁপে উঠল পাকিস্তানী সৈন্যরা। ওরা প্রাণের ভয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটল। কিন্তু ইতিমধ্যে উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক থেকে পূর্ব নবগ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা আকাশ-ফাতানো গর্জনধ্বনি করতে করতে ছুটে আসছে।
এইভাবে আক্রান্ত আক্রমণকারী সৈন্যরা অবিরল ধারায় গুলিবর্ষণ করতে করতে পেছনে হটে যেতে লাগল। যে কোন ভাবেই হোক, ওদের মেদাকুরের ঘাঁটিতে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা ওদের গুলিবর্ষণকে অগ্রাহ্য করে ক্রমেই কাছে, আরও কাছে এগিয়ে আসছে। অর্ধচন্দ্রকারে ঘেরাও করে এসেছে। সৈন্যরা কোন দিকে লক্ষ্য রাখবে ঠিক করে উঠতে পারছে না। তাছাড়া তাদের ঘন ঘন ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে ওরা মাথা ঠিক রাখতে পারছিল না। ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কয়েকজন দুঃসাহসী মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে একেবারে সামনে এসে পরে। তাদের মধ্যে একজন মাত্র হাত দশেক দূর থেকে একজন সৈনিক তাক করে তার হাতের সড়কি ছুঁড়ল। অব্যর্থ লক্ষ্য। সঙ্গে সঙ্গে দানবের মতো বিরাট দেহ পাঞ্জাবী সৈন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল।
যে দুঃসাহসী যুবক সড়কটি ছুড়েছিল, তার নাম অমুল্য মল্লিক। ইতিমধ্যে আর একজন সৈন্য এগিয়ে এসে অমূল্যকে লক্ষ্য করে তার হাতের রাইফেলটা তুলেছে। অমূল্যকে রক্ষা করার জন্য মধ্যবয়েসী দেবেন সরকার দু’লাফে সামনে এগিয়ে এল। এসেই পেছন থেকে জাপটে ধরল সেই সৈন্যটিকে, কিন্তু ততক্ষণে সেই রাইফেলের গুলি তার লক্ষ্যস্থলে গিয়ে পৌছেছে। গুলিবিদ্ধ অমূল্য মল্লিক চিরতরে চোখ বুজল, তার মাতৃভূমির বুকে শিশুর মতো ঘুমিয়ে পড়ল ইতিমধ্যে প্রফুল্ল সরকার সেই সৈন্যর হাত থেকে সেই মৃত্যুবর্ষী রাইফেলটাকে ছিনিয়ে নিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই লেজার ঘায়ে সেই সৈন্যটির ভবলীলা সাঙ্গ হল।
চারজন সৈন্যর মধ্যে বাকি রইল দু’জন। ওরা পেছন দিকে ছুটতে ছুটতে সামনে একটা খালের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল। খালের পাড়টা খাড়া, তার মধ্যে নেমে পড়া সহজ কিন্তু সেখান থেকে ওঠাতা সহজ নয়। তাছাড়া একগাল জলে দাঁড়িয়ে ওরা ওদের রাইফেল চালাতে পারছিল না। এই মরণের ফাঁদ থেকে ওরা উঠতে পারল না, মুক্তিযোদ্ধাদের সড়কির ঘায়ে সেইখানেই তাদের সলিল সমাধি ঘটল।
বরিশাল আর ফরিদপুর জেলার যে কর্মীরা সম্মিলিতভাবে মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলবার চেষ্টা করেছিল, পূর্ব নবগ্রামের এই প্রতিরোধ সংগ্রামের সঙ্গে তাদের প্রথম থেকেই যোগাযোগ ছিল। পাকসৈন্যদের বিধনপর্বের মধ্য দিয়ে তাদের উৎসাহ আরও বেড়ে গেল। ইতিমধ্যেই পূর্বোক্ত তিনটি থানার করমীদের নিয়ে মুক্তিফ্রন্ট সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। এই তিনটি থানা থেকে পঞ্চাশজনের মতো তরুণ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লিখিয়েছেন এদের মধ্যে মুসলমান, হিন্দু, খৃষ্টান সকল সম্প্রদায়ের লোক আছে। ছাত্রও আছে কৃষকরাও আছে। আরও অনেক লোক দলে আসবার জন্য উন্মুখ। কিন্ত এ বড় কঠিন জিনিস, অনেক দেখে শুনে, অনেক ভেবে-চিন্তে লোক বাছাই করতে হয়। ফ্রন্টও গঠিত হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারাও সামনে এগিয়ে এসেছে, কিন্তু না আছে অস্ত্র, না আছে ট্রেনিং। পূর্ব নবগ্রামে যা-ই হোক না কেন, ওদের বিরুদ্ধে সত্য সত্যই তো আর সড়কি আর লেজা নিয়ে লড়াই করা চলবে না। চাই রাইফেল, নিদেনপক্ষে বন্দুক। যে করেই হোক তা সংগ্রহ করতে হবে। মুক্তিফ্রন্টের সেক্রেটারী জনৈক তরুণ অধ্যাপক। এক বিরাট দায়িত্ব তার মাথার উপর এসে পরেছে। চারজন পাকসৈন্য এভাবে খতম করতে পারার ফলে পূর্ব নবগ্রাম ও নিকটবর্তী গ্রামগুলিতে উৎসাহ ও আনন্দের ঢেই বয়ে যায়। কিন্তু তা একটুকু সময়ের জন্যই। পরমুহুরতেই সকলের মনে পড়ল যে সামরিক কতৃপক্ষ ব্যাপারটিকে কিছুতেই এত সহজে হজম করে নেবে না। মাত্র দেড় মেইল দূরে ওদের ঘাঁটি, ওরা এক্ষুনি সদলবলে এসে হানা দেবে এবং কঠিন হাতে এর প্রতিশোধ নেবে। ওদের প্রতিহিংসার আগুনে পূর্ব নবগ্রাম আর নবগ্রাম এই দুটি গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। এরপর এখানে জনপ্রাণীকেও ওরা বেচে থাকতে দেবে না। এ অবস্থায় প্রাণে বাঁচতে হলে এক্ষুনি, এই মুহূর্তে কোন নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে হবে। একটা জায়গা আছে বটে, সেটা হচ্ছে এখানকার বিল-অঞ্চল। সেই বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্যে ডাঙ্গা থেকে বহুদূরে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে বিল এলাকার ছোট ছোট গ্রামগুলি। সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিলে ঝড়ের এই প্রথম ঝাপটাটা হয়ত সামলে নেওয়া যাবে। পাকিস্তানী সৈন্যরা টের পেলেও ওখানে যেতে সাহস করবে না। বেশি চিন্তা করবার সময় নেই, যা করবার এই মুহূর্তেই করতে হবে। দেখতে দেখতে সমস্ত এলাকা জনমানবশূন্য হয়ে গেল। ওরা যা ভেবেছিল তাই ঘটল, খবর পাবার সঙ্গে সঙ্গেই হিংস্র পাকসৈন্যরা শস্যের ক্ষেতে পঙ্গপালের মতো এসে ছেয়ে ফেলল, গ্রামের পর গ্রামে হানা দিয়ে চলল। পাশাপাশি ক’তা গ্রাম ওরা একেবারে উচ্ছন্ন করে দিল। এত বড় ঘা খেয়েও মুক্তিফ্রন্টের লোকদের মনোবল কিন্তু ভাঙ্গেনি। একটা জিনিসের দিকে তাদের বিশেষ লক্ষ্য ছিল, যে চারজন পাকিস্তানি সৈন্য এখানে নিহত হয়েছে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে রাইফেল ছিল। সেই চারটা রাইফেলের মধ্যে একটা ছিল চীনা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। এই অস্ত্রটি দুর্লভ। এই অস্ত্রটিকে হাত করতে পারলে শুধু সেটা দিয়েই বহু কাজ হাসিল করতে পারা যাবে। আপাতত তাদের হাতে রাইফেল বা বন্দুক জাতীয় একটিও অস্ত্র নেই। ওই চারটি রাইফেল এই গ্রামেই আছে, ওইগুলিকে খুঁজে বের করে হস্তগত করতে পারলে মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধাদের হাতে খড়িরকাজ শুরু হতে পারবে। সবাই যখন জান-প্রাণ নিয়ে পালাতে ব্যস্ত, মুক্তিবাহিনীর সেক্রেটারী তখন সেই রাইফেলগুলির সন্ধান উঠে-পড়ে লেগে গেলেন। হাতে সময় নেই শক্র সৈন্যরা যে কোন সময় এসে পড়তে পারে, তার আগেই এই অস্ত্রগুলিকে খুঁজে বের করতে হবে। অস্ত্রগুলির সম্পর্কে প্রথমে কেউ কোন কথা বলতে চায় না। বহু মিনতি আর রাগারাগির পর অবশেষে একটি একটি করে সব ক’টির সন্ধান পাওয়া গেল। সবচেয়ে আনন্দের কথা, সেই চীনা স্বয়ংক্রিয় রাইফেলটিকেও পাওয়া গেছে। মুক্তিফ্রন্টের সেক্রেটারি উত্তেজনা আর উল্লাসে অধীর। আর চিন্তা নেই এবার এই ক’টিকে পুঁজি করেই তারা কাজ শুরু করে দেবেন। আরও আনন্দের কথা এই যে, রাইফেলগুলির সাথে এক পেটি ভর্তি বুলেটও পাওয়া গেছে, যার অভাবে রাইফেলগুলি অচল হয়ে থাকত। অস্ত্রগুলি যাদের হাতে এল, তাদের কিন্তু রাইফেল চালনা সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। কারও কাছ থেকে এ বিষয়ে সাহায্য নেবে, এমন লোকও হাতের কাছে নেই কিন্তু তাতেও তারা ঘাবড়াল না। তাদের উৎসাহ অদম্য। সারারাত জেগে রাইফেলগুলিকে ন্নিয়ে নানাভাবে নাড়াচাড়া করতে করতে রাইফেল থেকে গুলি ছুড়বার কৌশলটা বেরিয়ে এল। এ তাদের কাছ এক মহা আবিষ্কার। সাফল্যের পর সাফল্য। ভাগ্যলক্ষ্মী তাদের উপর সুপ্রসন্ন হয়ে তাঁর ভাণ্ডারের বন্ধ দরজাটা এবার তাদের সামনে খুলে ধরেছেন। ইতিপূর্বে মার্চ মাসে গৌরনদী থানা এলাকায় যে মুক্তিবাহিনী গরে উঠেছিল তাদের হাতে বেশকিছু রাইফেল আর বন্দুক ছিল। সেই মুক্তিবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অধিকাংশ কে কোথায় চলে গেছে তাঁর কোন পাত্তা নেই। তাদের মধ্যে অনেকেই হয়ত বর্ডারের ওপারে নিরাপদ আশ্রয়ে আছে। কিন্তু তাদের অস্ত্রগুলিকে কোথায় রেখে গেছে তারা? শোনা যায়, এই অঞ্চলেই কোথায় নাকি লুকিয়ে রেখে গিয়েছিল। নবগঠিত মুক্তিফ্রন্ট তার জন্মের পর থেকেই এই নুরুদ্দেশ অস্ত্রগুলির অনুসন্ধান করে চলেছিল। অবশেষে সেই পুরনী দলের একটি ছেলের সাহায্য নিয়ে সেই মহামূল্য গুতপ সম্পদগুলিকে আবিষ্কার করা গেল। সহজ ব্যাপার নয়, রাইফেল আর বন্দুকে মিলিয়ে সতেরখানা। নিহত পাকসৈন্যেদের কাছ থেকে পাওয়া চারটি রাইফেল আর এই সতেরখানা, মোট একুশখানা। মুক্তিবাহিনী এখন একুশটি অস্ত্রের অধিকারী। অস্ত্রের সাথে সাথে বেশকিছু বুলেটও পাওয়া গেছে। তাই দিয়ে অনেকদিন কাজ চলবে। একতা নিরালা জায়গায় ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করে এক মাসের ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হতে লাগল। বহু খোঁজাখুজির পর ট্রেনিং দেওয়ার জন্য একজন প্রাক্তন সৈনিকের সন্ধান পাওয়া গেল। অনেক সাধ্য-সাধনা করে রাজী করান গেল তাকে। আপাতত প্রথম রাউন্ডে তাকে দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি ক’টি গ্রাম একেবারে জনমানবশূন্য। ট্রেনিং-এর গোপন ক্যাম্প প্রতিষ্টা করবার মতো নিরালা জায়গাও মিলল। কিন্ত সমস্যা দাঁড়াল এই যে, পঞ্চাশটি তরুণ এক মাস কাল ধরে ট্রেনিং নেবে, তারা খাবে কি ? এই দুঃসময়ে যারা তাদের অর্থ দিয়ে, খাদ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারত, তাদের মধ্যে অনেকেই গ্রাম থেকে পালিয়ে বিল অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। অর্থ ও খাদ্য সংগ্রহের জন্য মুক্তিফ্রন্ট অর্থ সাব-কমিটি গঠন করেছিল। তাদের চেষ্টায় ক্রটি ছিল না বটে কিন্তু এই কঠিন সময়ে যথাশক্তি চেষ্টা করেও তারা তাদের এই দায়িত্ব পূরণ করে উঠতে পারছিল না। তা সত্ত্বেও একমাস ধরে এই ট্রেনিং চলল। প্রতিটি স্বেচ্ছাসেবকের ঐকান্তিক নিষ্টা ও দৃঢ়সংকল্প এই অসাধ্য সাধন করতে সক্ষম হয়েছিল। সত্য কথা বলতে কি, তারা অধিকাংশ সময়ে আধ-পেটা খেয়ে এবং সময়ে না খেয়েও এই সামরিক ট্রেনিং নিয়ে চলছিল।
প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মুক্তিবাহিনী এবার কাজে নামল। তারা প্রথমে সমাজ বিরোধী শক্রদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযানে নামল। তারা এই সমস্ত দালাল ও দুরবিত্তদের নামের একটা কালো তালিকা তৈরি করে নিয়েছিল। পর পর কয়েকটি ঘটনা ঘটে গেল। ১২ই জুন তারিখে মুক্তিবাহিনী গইলা অঞ্চলের দু’জন কুখ্যাত দালালের বাড়িয়ে হামলা করল। এদের হাতে প্রথম বাড়িতে আরজান ও তার দু’ছেলে এবং দ্বিতীয় বাড়িতে গিলার প্রতাপশালী চেয়ারম্যান আফতাবুদ্দিন মুন্সি নিহত হল।
এইভাবে বিভিন্ন স্থানে দালাল হত্যার পর সারা অঞ্চলে সাড়া পড়ে গেল। লোকে বুঝল, সামরিক সরকার মুক্তিবাহিনীর হাত থেকে তাদের দালালদের রক্ষা করতে অসমর্থ। অবস্থা দেখে অন্যান্য দালালরাও ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। তাদের অনেকের কাছ থেকে মুক্তিফ্রন্টের নেতাদের নামে চিঠি আসতে লাগল। কালো তালিকার কথাটা সকলের কাছেই প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল। আতঙ্কগ্রস্ত দালালরা তাদের সেই সমস্ত চিঠিতে এই মিনতি জানাত যে, তাদের নাম যেন ওই কালো তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। মুক্তিফ্রন্ট যদি তাদের রেহাই দেন, তাহলে তারা মুক্তিফ্রন্টেকে অনেক টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করবে।
এইভাবে দালালদের দমন করে মুক্তিবাহিনী এবার তাদের আসল কাজে নামল। ইতিমধ্যে একটা অনুকূল যোগাযোগের ফলে মুক্তিবাহিনীর শক্তি আশাতীতরূপে বেড়ে গিয়েছিল। আপনা থেকে বিরাট সুযোগ তাদের হাতে এসে গেল। মুক্তিফ্রন্ট তাদের সংগ্রাম শুরু করবার কিছুটা আগে আর একটি ছোট দল অনুরূপ আদর্শ নিয়ে কার্যক্ষেত্রে নেমে গিয়েছিল। দলটি ছোট হলেও গুণের দিক দিয়ে উন্নত পর্যায়ের। দলের নেতার নাম হেমায়েতউদ্দীন। হেমায়েতউদ্দীন প্রাক্তন সৈনিক। ২৫-এ মার্চ ঢাকায় যখন প্রথম আক্রমণ শুরু হল, সেই সময় হেমায়েতউদ্দীন ঢাকাতেই ছিলেন। তার কিছু আগেই তিনি কি করে একটা মেশিনগান ও একতা সাব-মেশিনগান যোগাড় করে নিয়েছিলেন, একমাত্র তিনিই তা জানেন। এছাড়া কয়েকটা রাইফেলও তার হাতে এসে গিয়েছিল। ঢাকার হামলার পর এই দুটি ভারী অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে হেমায়েতউদ্দীন চলে এলেন ফরিদপুর সেই প্রাথমিক অবস্থায়। অস্ত্রবলের দিক থেকে এরা ছিল খুবই শক্তিশালী। তাছাড়া এই দলের ছিল যুদ্ধবিদ্যায় সুশিক্ষিত ৪জন সৈন্য। কিন্তু তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি দলের নেতা হেমায়েতউদ্দীন। পরিচালনা শক্তি, বৃদ্ধি ও সাহসের দিক দিয়ে তার কমই মেলে। মুক্তিফ্রন্টের বহু ভাগ্য, এক বন্ধুর মধ্যবর্তিতায় তাদের সঙ্গে হেমায়েতউদ্দীনকে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার বা সেনাপতি পদে নির্বাচিত করল। অস্ত্রশক্তির দিক দিয়ে এবং সামরিক শিক্ষাব্যবস্থার দিক দিয়ে মুক্তিবাহিনী এবার যথেষ্ট সমৃদ্ধ হয়ে উঠল। মুক্তিফ্রন্টের এই বাহিনীতে যোগ দেবার আগে হেমায়েতউদ্দীণ তার এই ছোট্ট দলটিকে নিয়ে নিজের বুদ্ধি অনুসারে কাজ করে চলেছিলেন। কোন রাজনৈতিক দলের লোক নন তিনি। তাহলেও সারা প্রদেশব্যাপী স্বাধীনতা আন্দোলন তাদের মুক্তিসংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল। তারপর বর্বর পাকসৈন্যদের নৃশংস অত্যাচার তাঁকে ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল। যে করেই হোক এদের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতেই হবে- এই প্রতিজ্ঞা তার ধ্যান, জ্ঞান আর জপমন্ত্র হয়ে দাঁড়াল।
এইভাবে মুক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে হেমায়েতউদ্দীনের এই ছোট্ট দলটি একান্ত ভাবে নিজেদের শক্তির উপর নির্ভর করেই কাজে নামল। ৯ই মে তারিখে তারা ফরিদপুরে কোটালীপাড়া থানা আক্রমণ করেছিলেন। থানায় সশস্ত্র পুলিশরা ছিল, দু’চারজন মিলেটারি লোকও ছিল। কিন্তু মেশিনগানের গুলিবর্ষণের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করবার মতো হিম্মত তাদের ছিল না। তারা আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে থানা ছেড়ে প্রাণ নিয়ে পালাল। হেমায়উদ্দীন সেখানে বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র ও গুলি পেয়ে গেলেন। পাকসৈন্যরা একটা পর একটা অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল। তাদের অধিকার পাকাপোক্ত হয়ে বসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মুসলিম লীগ পন্থী ও জামাত-পন্থী দালালের দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে লাগল। গুন্ডা ও লুটেরা দলও তাদের সঙ্গে হাত মিলাল। হেমায়েতউদ্দীনের প্রথম চোখ পড়ল এদের উপর। তিনি বললেন, এই ঘরের ইদুরগুলিকে খতম করতে না পারলে মুক্তিসংগ্রামের পথে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। তাই প্রথমেই এদের শায়েস্তা করতে হবে। এ শুধু কথার কথা নয়, তিনি যা বললেন তা কাজেও পরিণত করে চললেন। অদ্ভুত তার সাহস, প্রকাশ্যে দিবালোকে এক হাট লোকের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তিনি এই সমস্ত দেশদ্রোহী দালালদের উপর কড়া দাওয়াই প্রয়োগ করতেন। তাদের মধ্যে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
কিছু দিনের মধ্যে মুক্তিবাহিনীর নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। সাধারণ মানুষ উৎসাহিত হয়ে উঠল, দালালদের হৃৎকম্প জাগল। ওদিকে সামরিক কতৃপক্ষ চুপ করে বসে ছিল না। মুক্তিবাহিনীকে চূর্ণ করে দেবার জন্য তারা সদলবলে তৈরি হচ্ছিল। প্রধানত এই উদ্দেশ্যে তারা কোটালীপাড়া থানায় তাদের মূল ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। সৈন্যরা একা নয়, তাদের সঙ্গে ছিল পুলিশ আর রাজাকার বাহিনী। এদিকে মুক্তিবাহিনীও তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। এবার তাদের সামনে অগ্নিপরীক্ষা। এতদিন তারা এখানে-ওখানে ছোটখাট আক্রমণ চালিয়েছে, কিন্তু এবার হতে সত্যিকারের যুদ্ধ। মুক্তিফ্রন্টের গোয়েন্দা বিভাগের চরেরা সংবাদ নিয়ে এসেছে যে, সৈন্য, পুলিশ আর রাজাকার মিলিয়ে বেশ বড় একটা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। একটা সুখবর, ওদের সঙ্গে মেশিনগান নেই। একমাত্র রাইফেলের উপরই তাদের নির্ভর। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর হাতে আছে একটা মেশিনগান আর একটা সাব-মেশিনগান। তাছাড়া রাইফেল তো আছে। মুক্তিফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিল, আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ নয়, আগ বাড়িয়ে ওদের উপর আক্রমণ চালাতে হবে। ওদের অপ্রস্তুত হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে ওদের চমকে দিতে হবে। তারিখটা ছিল ১৪ জুন। গভীর রাত্রিতে মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা নৌকাযোগে শক্রদের মূল ঘাঁটি কোটালিপাড়া থানার দিকে যাত্রা করল। তাদের ছোট ছোট এক মাল্লাই নৌকাগুলি রাত্রির অন্ধকারে অতিসন্তরপনে নিঃশব্দে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু ঠিক সেই রাত্রিতে পাকসৈন্যবাহিনীও আক্রমণমূলক পরিকল্পনা নিয়ে রাত্রির অন্ধকারে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটির দিকে এগিয়ে আসছিল। এই দুই দল হরিণহাটি নামক গ্রামের কাছে এসে পরস্পরের সম্মুখীন হল।
ওদের আটখানা বড় বড় ছিপ নৌকা ছপ ছপ করতে করতে এগিয়ে আসছে। নৌকাগুলির মধ্যে সৈন্য, পুলিশ আর রাজাকার মিলিয়ে প্রায় দু’শো জন লোক ছিল। মুক্তিবাহিনীর ছোট ছোট নৌকাগুলি প্রথমে ওদের নজরে পড়েনি। ফলে মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা প্রথমে আক্রমণের সুযোগ পেয়ে গেল। এরকম আকস্মিক আক্রমণের জন্য ওরা একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। কমান্ডার হেমায়েতউদ্দীনের দক্ষ পরিচালনায় মুক্তিবাহিনীর মেশিনগান ও সাব মেশিনগান দুটি একই সঙ্গে ছিপগুলিকে লক্ষ্য করে অবিরক ধারায় গুলিবর্ষণ করে চলেছে। ওরা একটু বাদেই প্রথম ধাক্কাটা সামনে নিয়ে তার প্রত্যুত্তরে রাইফেল চালাতে লাগল। কিন্তু ওদের মনোবল আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিল। তাছাড়া ওদের পুলিশ আর রাজাকারদের মধ্যে শৃঙ্খলা বলতে কোন কিছু ছিল না। তারা সবাই যে যার প্রাণ বাঁচাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। অপর দিকে মুক্তিবাহিনীর মেশিনগান আর রাইফেলগুলি ওদের ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। অপর দিকে মুক্তিবাহিনীর মেশিনগান আর রাইফেলগুলি ওদের উপর আশ্রান্তভাবে মরণ-আঘাত হেনে চলেছে। এই প্রবল আক্রমণের মুখে ওরা সংখ্যায় বেহসি হলেও বেশিক্ষণ লড়াই চালিয়ে যেতে পারল না। ওরা প্রান বাঁচাবার জন্য নৌকা থেকে খালের জলে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। সৈন্য, পুলিশ আর রাজাকার সবাই এই একই পন্থা অনুসরণ করল। এইভাবেই হরিণহাটি যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটল, মুক্তিবাহিনীর জয়ধ্বনিতে হরিণহাটির নৈশ আকাশ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে চলল। যুদ্ধের ফলাফল দেখে
যোদ্ধের ফলাফল দেখে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেরাই বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল। এতবড় সাফল্যের কথা তারা কল্পনাও করতে পারেনি। পরদিন সকালবেলা নৌকার মধ্যেও জলের উপর শক্রপক্ষের ৫০টি মৃতদেহ পাওয়া গেল। ১৮ জন তাদের হাতে বন্দি হয়েছে। বাকি সবাই প্রাণ নিয়ে পালিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মাত্র একজন মারা গেছে। তার নাম ইব্রাহিম। মুক্তিবাহিনী ওদের নৌকার ভেতর থেকে ৫টি রাইফেল ও বেশ কিছু বুলেট উদ্ধার করল।
এ সম্মন্ধে কারও মনে কোন সন্দেহ ছিল না যে, শক্ররা পর পর দু’বার ঘা খেয়ে ক্ষান্ত থাকবে না, তাদের আক্রমণ আসন্ন। সেজন্য অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। পরদিন ১৬ জুন তারিখে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি খালের পূর্বদিকে কোদালধোয়া গ্রামে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল। কিন্তু এই সংবাদটা শক্রদের অগোচর রইল না। খবর পাওয়া গেল তারা সেদিনই তাদের বর্তমান ঘাঁটির দিকে লক্ষ্য করে এগিয়ে আসছে। ওদের লঞ্চ সেখান থেকে এক মাইল দূরে পয়সারহাট বাজারে এসে ভিড়েছে। শক্রদের লঞ্চ এই খালের উপর দিয়ে আসবে। মুক্তিযোদ্ধারা খালের দু’পাশে স্থানে স্থানে পজিশন নিয়ে তৈরি হয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। এইভাবে ঘন্টাখানেক সময় কেটে গেল, কিন্ত সেই লঞ্চটির আর দেখা নেই। শেষে খবর পাওয়া গেল যে, ওরা পয়সারহাট বাজারে খানাপিনার উৎসবে মেতে গেছে। এই বাজারে যে সমস্ত খাদ্য দ্রব্য মেলে ওরা তা জবরদস্তি করে লুটে পুটে নিচ্ছে।
কমান্ডার হেমায়েতউদ্দীন স্থির করলেন, মুক্তিবাহিনীর একটা দল এখানেই মোতায়েন থাকবে। অবশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি দু’মাইল পথ এগিয়ে যাবেন এবং সেখানে গিয়ে লঞ্চসহ শক্রদের ঘেরাও করে ফেলবেন। এই পরিকল্পনা নিয়ে তার দল সবেমাত্র কিছুদূর এগিয়ে গিয়েছে, এমন সময় শক্রসৈন্যবাহী লঞ্চটা তাদের কাছাকাছি এসে পৌছল। জায়গাটা এমন যে, সেখানে দাঁড়িয়ে পজিশন নেওয়ার খুবই অসুবিধা। কিন্তু উপায়ন্তর না থাকায় সেখানেই তাদের পজিশন নিতে হল। শক্ররা তাদের দেখতে পেয়েছে এবং দেখার সঙ্গে সঙ্গে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে দিয়েছে। মুক্তিসেনাদের মেশিনগান ও রাইফেলের গুলিও তার প্রত্যুত্তর দিয়ে চলল। তাদের প্রবল গুলিবর্ষণের ফলে লঞ্চটা জায়গায় জায়গায় ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত অবস্থা বেগতিক দেখে শক্ররা তাদের লঞ্চ নিয়ে পৃষ্টভঙ্গ দেবার চেষ্টা করছিল। কমান্ডার হেমায়েতউদ্দীন পলায়মান লঞ্চের পেছনে পেছনে ধাওয়া করলেন, কিন্ত শেষ পর্যন্ত সেই লঞ্চ তাদের আক্রমণের নাগালের বাইরে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। ঘন্টা দেড়েক এই যুদ্ধ চলেছিল। তাতে হানাদারদের মধ্যে ছয়জন সৈন্য নিহত ও অনেক সৈন্য আহত হয়।
সেই দিনই বিকালবেলা দু’দল পাকসৈন্য দু’দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে মুক্তিফ্রন্টের ঘাঁটি কোদালধোয়া গ্রামটিকে লক্ষ্য করে এগিয়ে আসতে থাকে। একটি দল মাদারীপুর স্পীডবোট বোঝাই করে আসছিল । তারা অনেক দূর পর্যন্ত চলে এসেছিল বটে, কিন্ত তাদের দালালদের মুখে মুক্তিবাহিনীর মেশিনগানের পরিচয় পেয়ে তারা আর বেশিদূর এগুতে ভরসা করল না। শেষ পর্যন্ত তাদের মনের ক্ষোভ মেটাবার জন্য তারা পীড়রবাড়ি গ্রামে হামলা করে, সেখানকার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়ে স্বস্থানে ফিরে যায়। অপরদিকে গৌরনদী, উজিরপুর, কোটালীপাড়া ও গোপালগঞ্জ থেকে চারটি স্পীডবোট বোঝাই করে বহু পাকসৈন্য আর একদিক দিয়ে কোদালধোয়া গ্রামের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। মুক্তিফৌজ সামনে এগিয়ে গিয়ে এই হানাদার শক্রদের প্রতিরোধ করে দাঁড়াল। দু’পক্ষে প্রবল সংঘর্ষ হয় এবং শেষ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী শক্রদের পয়সারহাট থেকে আট মাইল দূরে তাড়িয়ে দিয়ে জয়-গৌরবে ফিরে আসে। এই যুদ্ধে নয়জন পাকসৈন্য মারা যায়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!