You dont have javascript enabled! Please enable it!

বংশীতলার যুদ্ধ, কুমারখালী, কুষ্টিয়া

সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকেই (৫ সেপ্টেম্বর) সদর থানার বংশীতলাতে পাকসৈন্যদের সাথে মুক্তিবাহিনীর এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সদর থানার মির্জা জিয়াউল বারী নোমানের সার্বিক নেতৃত্বে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে জাহিদ হোসেন জাফরের পরিচালনায় সদর ও কুমারখালী থানার বেশ কয়েকটি গ্রুপ অংশগ্রহণ করে। যোদ্ধারা নিজ নিজ গ্রুপ কমান্ডারের অধীনে রাস্তার পাশে এবং আশেপাশের গ্রামে অবস্থান গ্রহণ করেন। কুষ্টিয়া শহর থেকে আর্মি আসার সম্ভাবনা ছিল, তাই সদরের কিছু গ্রাম এবং কুমারখালীর বেশ কিছু গ্রাম থেকে যুদ্ধের প্রয়োজনীয় রসদ ও খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর পাকসেনা ও তাদের সহযোগী রাজাকার কুষ্টিয়া থেকে বাশগ্রামে এবং সেখান থেকে পান্টির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় তাদের অবস্থান আরও মজবুত করার জন্য। সৈন্যদের প্রথম অংশটি মুক্তিযোদ্ধাদের এমবুশে পড়ে প্রথমেই ধ্বংস হয়। এতে ক্যাপ্টেন জামিলসহ ১০/১৫ জন নিহত হন। কিছু ব্যাজ, একটি ৩৪ রিভলবার ও কয়েকটি চায়না রিভলবার পাওয়া যায়। কিন্তু তাদের কাভারিং গ্রুপ খুব দ্রুত অবস্থান নিয়ে অগ্রসরমান মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবস্থান পরিবর্তনের সময় সদরের বীরপ্রতীক দিদার আলীসহ ৯ জন এবং কুমারখালীর আবদুল মান্নান (বানিয়াপাড়া) এবং অসমসাহসী বীর তাজুল ইসলাম (দুরগাপুর) শহীদ হন। এছাড়া আহত হন কুমারখালীর মোকাদ্দেস হোসেন, আ. মালেক, হোসেন আলী, মজিবর রহমান (শালঘর মধুয়া), শেখ আ. আজিজ (নাতুড়িয়া) সহ সদর থানার অনেক মুক্তিযোদ্ধা। আট ঘন্টা একটানা যুদ্ধের পর পাক সৈন্যরা কুষতিয়া ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পাকবাহিনী ও রাজাকাররা এর প্রতিশোধস্বরুপ শালঘর মধুয়ার পরশউল্লাহ, আজমত আলী, লতিফ মোল্লা, কিয়ামউদ্দিন মোল্লা, শাহাদত হোসেন, সামসুদ্দিন মোল্লা, পলান জোয়ারদার, সোলেমান শেখ, জুলমত শেখ, জিয়ারুদ্দিন বিশ্বাস, অমূল্য কুমার বিশ্বাস, প্রফুল্ল বাবু ও পরেশউল্লাহর বাড়িসহ এলাকার অনেক বাড়ি সম্পূর্ণরূপে জ্বালিয়ে দেয়। অশীতিপর বৃদ্ধ জুলমত শেখের মাকে মধ্যেই পুড়িয়ে হত্যা করে। এছাড়া রাজাকাররা বাড়ি থেকে জোরপূর্বক মেয়েদের ধরে নিয়ে পাকসেনা ও মিলিশিয়াদের হাতে তুলে দেয়। শালঘর মধুয়ার বীরঙ্গনা রাবেয়া খাতুন এবং নাতুড়িয়ার বীরঙ্গনা মজিরন নেসা বিকৃত মস্তিষ্ক নিয়ে আজও নরপশুদের নির্যাতনের সাক্ষী হয়ে রয়েছেন।
[১২] এ.টি.এম.যায়েদ হোসেন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!