বটিয়াঘাটা থানা দখল, খুলনা
এপ্রিল ও মে মাস জুড়ে বটিয়াঘাটার বিভিন্ন গ্রামে পাকিস্তানী বাহিনী গণহত্যা ও নির্যাতন চালালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এ এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে তখন থেকে বটিয়াঘাটার উপর পাকিস্তানী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত হয়। খুলনা শহরের নিকটবর্তী ও খুলনা-মংলা নৌপথের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত এ থানায় তাদের সহজ বিচরণ আগষ্ট মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে এ পথ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের চলাচল বিপদ হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা বটিয়াঘাটার উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে মে মাস থেকে সচেষ্ট হলেও আগস্ট মাসের পূর্বে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। আগষ্ট মাসে ভারতের টাকিতে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন বটিয়াঘাটা থানার পুলিশের নারী নির্যাতনের এক নির্মম ঘটনা শুনে ক্ষুব্ধ হন এবং বটিয়াঘাটা থানা আক্রমণের দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ করে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয়। তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল নিয়ে সরাসরি বটিয়াঘাটায় আসেন এবং থানা ভবন ঘিরে ফেলেন। তিনি পুলিশ সদস্যদেরকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলে থানা অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা আত্মসমর্পণে অস্বীকার করে। ফলে বাধ্য হয়ে আফজাল থানায় আক্রমণ করে। কিছুক্ষণ যুদ্ধ চলার পর পুলিশ গুলি বর্ষণ বন্ধ করে আত্মসমর্পণে রাজী হয়। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা থানায় প্রবেশ করে ৭-৮ জন পুলিশ সদস্যকে বন্দি করে। এ যুদ্ধে ১৫-১৮ জন পুলিশ নিহত হয়। ২০-২৫টি রাইফেল ও অনেক গুলি মুক্তিযোদ্ধারা হস্তগত করে। বটিয়াঘাটা থানা দখল করে আফজাল ভারতে ফিরে যান।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত