You dont have javascript enabled! Please enable it! বড়ইতলীর যুদ্ধ, সিরাজগঞ্জ - সংগ্রামের নোটবুক

বড়ইতলীর যুদ্ধ, সিরাজগঞ্জ

বড়ইতলী সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার গান্ধাইল ইউনিয়নের একটি গ্রাম। উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এই দুটি অংশে গ্রামটি অবস্থিত। মুক্তিবাহিনী এই গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে (উত্তর-পশ্চিম দিকে ভাঙ্গা কালভারটের নিকট চারজনের রাত্রিকালীন প্রহরী রেখে) রাতে বিশ্রাম নিত। রাজাকারদের সহযোগীতায় হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ধ্বংস করার মানসিকতায় অতর্কিত হামলা চালায় এবং মুক্তিযোদ্ধারা আত্মরক্ষার তাগিদে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। যুদ্ধের বর্ণনায় জানা যায় ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় পাকবাহিনীর একটি দল বড়ইতলী ঘিরে ফেলে এবং ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে তৎকালীন ছাত্রনেতা (পরবর্তীতে মেজর, চাকরিচ্যুত) মোজাফফর হোসেন। এই দলে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ছিল। পরবর্তীতে ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি দল (১০ থেকে ১৫ জন) সোহরাব হোসেনের নেতৃত্বে কাজিপুর থেকে আগত যারা এই গ্রামে অবস্থান নিয়েছিল, সংঘর্ষের সময় তারা এসে এ দলে যোগদান করে। মূল ঘটনার তিন রাত পূর্বে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান ইমাম আলীর (শান্তি কমিটির সদস্য) বাড়িতে হানা দেয়। ঘটনার রাতে তাকে না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়ে বড়ইতলী গ্রামে ফিরে যায়। সেখানে কে এম হাসান আলীর সহযোগীতায় মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। তখন রমজান মাস ছিল। পাক হানাদার বাহিনীর আনুমানিক ১০০ জনের দল শেষ রাতের দিকে হঠাৎ আক্রমণ চালায়। প্রথমে তারা রাত্রিকালীন প্রহরীকে অতঃপর গ্রামের সকল ঘরবাড়িতে অবস্থানরত সাধারণ জনতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপরে আক্রমণ করে। অতর্কিত হামলায় মুক্তিযোদ্ধারা ঘরবাড়ি ছেড়ে বড়ইতলি গ্রামের উত্তরে খালের পাড়ে ও পূর্বে অবস্থান নেয় এবং সেখান থেকে শক্রর ওপর পাল্টা হামলা চালাতে সক্ষম হয়। গ্রামের সাধারণ জনতা (এমনকি শিশুসন্তানকে ফেলে রেখেও) জীবনের ভয়ে পালিয়ে যায়। আনুমানিক ১১টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে এবং ১টার সময় রবিলাল নামে এক মুক্তিযোদ্ধা (বাড়ি তারাকান্দি) নিজেদের দলের ক্রসফায়ারে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। উত্তর দিকে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করতে ব্যর্থ হওয়ায় পাকবাহিনীর সৈন্যরা উত্তর-পশ্চিমে অবস্থানরত ৪০-৫০ জন যোদ্ধাকে ঘিরে ফেলতে সমর্থ হয়। তখন মুক্তিযোদ্ধারা ব্রাশফায়ার করে এবং পূর্ব-দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয় এবং কামারপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেয়। ১১টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকহানাদার বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে টিকতে না পেরে গান্ধাইল চিলগাছা হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণে গজারিয়াতে আশ্রয় নেয়। ১১টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকহানাদার বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে টিকতে না পেরে গান্ধাইল চিলগাছা হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণে গজারিয়াতে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে আরো ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে কাজিপুরের বাসকানের চরে আশ্রয় নেয়। এরপর হানাদার বাহিনী গ্রামের সকল বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। এই যুদ্ধে আরো যে সকল মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন তারা হলেন শফিকুল ইসলাম শফি, আমিনুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন, হাবিলদার আজিজ (নং ৩৯৩৭৭৬৪,৪ ইস্ট বেঙ্গল), মোঃ জুরান শেখ, হাসান আলী, শাহ আলী, রহমত-ই-হুদা (নং ৩৯৩৮৪০৯, ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট হতে পলাতক), হাজী ইসহাক আলী প্রমুখ।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত