You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.03 | ফুলছড়ির যুদ্ধ, গাইবান্ধা - সংগ্রামের নোটবুক

ফুলছড়ির যুদ্ধ, গাইবান্ধা

৩ ডিসেম্বর শামসুল আলমের সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে ঐদিন বিকেলেই রোস্তম কোম্পানীর অন্তর্ভুক্ত ৬টি প্লাটুন যৌথভাবে গাইবান্ধার ফুলছড়ি আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কোম্পানী কমান্ডার রোস্তম আলী খন্দকার সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খানের পরামর্শ ও পরবর্তী নির্দেশ গ্রহণের জন্য এবং আরো যোদ্ধা ও অস্ত্র আনার জন্য তখন মানকারচর গিয়েছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে প্লাটুন কমান্ডার পর্যায়ে আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, কোম্পানী কমান্ডারের আগমনের অপেক্ষা না করে ঐদিনই ফুলছড়ির উপর সর্বাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করা হবে। সে সময় কোম্পানীর টুআইসি ছিলেন গৌতম চন্দ্র মোদক। সেদিনের এই অভিযানের তিনি নিম্নলিখিত বর্ণনা দিয়েছেন: “আমি অভিযানের উদ্দেশ্যে অভিযানের মূল লক্ষ্য, দায়িত্বপূর্ণ এলাকা, অবস্থান, রাস্তা, বিভিন্ন প্রকার সংকেত, পাসওয়ার্ড, করণীয়-বর্জনীয় বিষয়সহ অভিযান শেষে মিলিত হওয়ার স্থান বিষয়ে বিস্তারিত ব্রিফিং দিয়ে অভিযানের সাফল্য কামনা করে তাদেরকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ প্রদান করি। সেদিনের যুদ্ধে ৬ প্লাটুনের কমান্ডাররা ছিলেন (১) শামসুল আলম, (২)মহসিন আলী, (৩) নাজিম উদ্দিন, (৪) তছলিম, (৫) এনামুল, (৬) ময়েজ উদ্দিন (প্লাটুন কমান্ডার রফিকের অনুপস্থিতিতে)। ৬টি প্লাটুন সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন (১) আব্দুল জলিল তোতা, (২) আবু বকর সিদ্দিক, (৩) হামিদুল হক কাদেরী। আমরা ৬টি প্লাটুনের যোদ্ধাদেরকে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদী পার করে ফুলছড়ির উদ্দেশ্য রওনা হই। প্রথমে ঘাঘট রেল ব্রীজের হানাদার বাহিনীর সাথে তছলিম ও ময়েজের প্লাটুনের যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণে হানাদার বাহিনীর ফুলছড়ি হতে বিতাড়িত হয়ে ওয়াপদা বাঁধ দিয়ে পাখীমারার দিকে পিছু হটতে থাকে। যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ২৩ জন নিহত হয় ও ব্যাপক সংখ্যক আহত হয়। আমাদের দলের বাদল, আফজাল, সোবহান, কাবেজ আলী ও আনছার আলী শহীদ হয়”। মুক্তিযোদ্ধা বজলু স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাঘাটা থানার সগুনা ইউনিয়নের ধনারুহা গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ৫টি কবরে সমাহিত করেন। পরবর্তীকালে কোম্পানী কমান্ডার রোস্তম কবরগুলি পাকা করেন এবং কবরের পার্শ্বে শহীদ মিনার করেন। ১৯৮৭ সালের এক গেজেটের মাধ্যমে শহীদদের সম্মানে সগুনা ইউনিয়নের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিনগর ইউনিয়ন করা হয়।
[৫৮০] ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত