You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.14 | ফকিরহাট যুদ্ধ, কুমিল্লা - সংগ্রামের নোটবুক

ফকিরহাট যুদ্ধ, কুমিল্লা

১৪ জুন রাতে কুমিল্লার ফকিরহাট রেলওয়ে ষ্টেশন (বর্তমান নাম রসূল পুর রেলওয়ে ষ্টেশন) থেকে ৭০০/৮০০ গজ উত্তরে শক্রর একটি দল দুপুরে বখশী মাইল গ্রামে পেট্রোলিংয়ের জন্য যায়। বখশি মাইল গ্রাম থেকে সন্ধ্যার সময় পাকসেনাদের দলটি ফকিরহাটে নিজেদের অবস্থানে ফেরার পথে মুক্তিযোদ্ধাদের পুঁতে রাখা মাইনের মধ্যে পায়ের চাপ পড়ে মাইনগুলি বিস্ফোরিত হতে থাকে। এতে পাকদের অনেক সৈন্য হতাহত হয়। তাদের মধ্যে ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মাইনগুলি ফাটার শব্দ নিকটবর্তী অবস্থান থেকে পাকসেনারা শুনতে পায়। রাতের অন্ধকারে তারা এ বিস্ফোরণের সঠিক কারণ বুঝতে পারেনি। মুক্তিবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে ভেবে পাকসেনারা প্রচণ্ডভাবে গোলাগুলি ছুঁড়তে থাকে। এই গোলাগুলি চলে রাত ৮টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত। পাকসেনারা নিজেদের লোকদের উপর শত শত মর্টার ও কামানের গোলা ছুঁড়তে থাকে। এ সময় দূরে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি পেট্রোল পার্টি ‘ইয়া আলী’‘ইয়া আলী’“বাঁচাও বাঁচাও” প্রভৃত ধ্বনি শুনতে পায়। পড়ে মুক্তিযোদ্ধারা পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকদের কাছ থেকে জানতে পারেন এই মাইন বিস্ফোরণে ও নিজেদের গোলাগুলিতে পাকসেনাদের ৪০/৫০ জন হতাহত হয়। ১৫ জুন সকালে কুমিল্লা থেকে পাকসেনাদের একজন ব্রিগেডিয়ার এ অবস্থানটি পরিদর্শন করতে যান। পাকসেনাদের এই দুর্ঘটনার পর রাজাপুর রেলওয়ে ষ্টেশনের চতুর্দিকে এবং ফকিরহাট (রসুলপুর) পর্যন্ত তাদের পেট্রোলিং আরো জোরদার করে। মতিনগরে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা শক্রদের এর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। ১৬ জুন সকালে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্লাটুন পাকসেনাদের পেট্রোলিং পথে উপর এমবুশ পাতে। সকালে ৯টায় পাকসেনাদের একটি দল রাজাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে রওনা দেয়। দলটি মুক্তিযোদ্ধাদের এমবুশের মধ্যে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে পাকসেনাদের উপর হালকা মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্রের সাহায্যে গোলাগুলি চালায়। এই গোলাগুলিতে শক্রদের ৮ জন নিহত এবং ১ জন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, টেলিফোন সেট, ড্রাইসেল ব্যাটারী ও অন্যান্য জিনিষপত্র হস্তগত করেন। ১৬ জুন মতিনগর হেড কোয়ার্টার থেকে ৬ জনের একটি দল গেরিলা দল কুমিল্লার দক্ষিণে ইলেকট্রিক পাইলন উড়ানোর জন্য আসে। তারা ২১ জুন ২টি ইলেকট্রিক পাইলন ধ্বংস করে, এতে নোয়াখালী বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
[১৮] আবুল কাশেম হৃদয়

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত