You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.11 | পুংলীতে ভারতীয় ছত্রীসেনা অবতরণ, টাঙ্গাইল - সংগ্রামের নোটবুক

পুংলীতে ভারতীয় ছত্রীসেনা অবতরণ, টাঙ্গাইল

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ময়মনসিংহ জামালপুর-টাঙ্গাইল অক্ষে চাপ বৃদ্ধির ফলে পাকিস্তানীদের পশ্চাদপসরণ অবধারিত হয়ে পড়ে। রোড ব-ক দিয়ে তাদের সমুলে ধ্বংস করার জন্যই টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার পুংলী এলাকায় ভারতীয় ছত্রীসেনা অবতরণ করে।
মিত্রবাহিনীর লক্ষ্য ছিল পাকবাহিনীর দুর্বল অবস্থান এবং স্বল্পতম সময়ে ঢাকা পৌঁছানোর প্রয়োজনে ব্যবহৃত কমুনিকেশন জোন দুর্গাপুর-ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল এবং জামালপুর টাংঙ্গাইল অক্ষে অগ্রাভিযান পরিচালনা করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতীয় সেনাবাহিনীর তদানীন্তন ক্যাপ্টেন ‘ঘোষ’ বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং ‘পিটার’ ছদ্মনাম নিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সাথে ধলেশ্বরী নদীর মোহনায় নৌকায় বসে আলোচনা করে ভারতীয় ছত্রীসেনা অবতরনে বঙ্গবীরের সাহায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করে ভারতে চলে যান। ৭ ই ডিসেম্বর ব্রিগেডিয়ার শান্ত সিং বেতার যোগে কাদের সিদ্দিকীকে ছত্রীসেনা নামানোর বিষয়টি অবহিত করেন।
কালিহাতি পুংলী এলাকায় ১১ ই ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় গৌরাংগি মাঠে ১ + ১ বর্গ/কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এক ব্যাটালিয়ন ছত্রীসেনা অবতরণ করে। সন্ধ্যার পূর্বেই পুংলীতে রোড ব্লক স্থাপন করা হয়। ছত্রীসেনা অবতরণ প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০/১২ জন ছত্রীসেনা মৃত্যুবরণ করেন। অন্যদিকে ভারতীয় মিগ বিমানের গোলাবর্ষণে পাকবাহিনীর চলন্ত জিপ, পিকাপ ও বাস শক্রসহ লৌহজং নদীতে ছিটকে পড়ে। পুরা যুদ্ধে এত অল্প সময়ে এত অধিক ক্ষয়ক্ষতি পাকবাহিনীর আর কোথাও হয়নি। ১২ ই ডিসেম্বর সকালে পাকবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়কের নেতৃত্বে আনুমানিক ২০০ জনের একটি দল আত্মসমর্পণ করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যামবুশ এবং গোলাবর্ষণের কারণে পশ্চাদপসরণরত তিন শতাধিক পাকসেনা হতাহত হয়।
মিত্রবাহিনী পুংলীতে ছত্রীসেনা অবতরণের মাধ্যমে পাকবাহিনীর জেনারেল নিয়াজীর উপর মনস্তাত্বিক চাপ প্রয়োগে সমর্থ হয়। জেনারেল নিয়াজী একটি একটি ব্রিগেড অবতরণ করেছে মনে করে ঢাকা প্রতিরক্ষার জন্য ৯৩ ব্রিগেডকে দ্রুত পশ্চাদপসরণের আদেশ দেন এবং জরুরী সাহায্যের জন্য সেনাপ্রধানের নিকট তারবার্তা পাঠান। ছত্রীসেনা পুংলীতে সফল রোড ব-ক স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ জন পাকসেনাদের হতাহত করতে সমর্থ হয়। ছত্রীসেনাদের পক্ষে ১০/১৫ জন হতাহত হয়। অন্যদিকে মিত্রবাহিনী বিমান আধিপত্যের সুযোগে বিকালের পরিবর্তে সকালের ছত্রীসেনা অবতরণ করলে শক্রর মূলদলের পশ্চাদপসরণে বাঁধা প্রদান সম্ভব হতো। পুংলীতে এক ব্যাটালিয়নের পরিবর্তে এক ব্রিগেড ছত্রীসেনা নামালে তারা নিজেরাই ১০১ কমিউনিকেশন জোনের সাহায্য ছাড়াই অগ্রাভিযানে সমর্থ হতো। তাতে তখন পর্যন্ত অরক্ষিত ঢাকার পতন আরও আসন্ন হতো। এ ব্যাপারে জেনারেল নিয়াজীর বক্তব্য উল্লেখযোগ্য।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত