পাকুল্লা ও জামুরকি সেতু দখল, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানায় পাকুল্লা জামুরকি সেতু অবস্থিত। ১৯ শে নভেম্বর কমান্ডার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকুল্লা ও জামুরকি সেতু দখলে পরিকল্পনা সফলতা লাভ করে। পাকুল্লা সেতু দখল অভিযানে কমান্ডার হাবিবুর রহমান শক্রর সাথে চার ঘন্টাব্যাপী রক্তক্ষয়ী লড়াই চালিয়ে ও প্রথম ব্যর্থ হয়।
অবশেষে রাত এগারটায় অবরোধ উঠিয়ে একমাইল উত্তরে জামুরকি সেতু আক্রমণ করে। মাত্র দশ মিনিটের ঝাটিকা আক্রমণে জামুরকি সেতুর প্রতিরোধ পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। পূর্ব থেকেই সেতুতে পাহারারত ত্রিশ-চল্লিশজন রাজাকার, জামুরকির সুলতান ও পাকুল্লার লতিফের সাথে যোগাযোগ করে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তুতি ছিল। কমান্ডার হাবিব সেতুতে আঘাত হানতেই আত্মসমর্পণে ইচ্ছুক ৪০/৪২ জন রাজাকার আস্তে আস্তে তাদের বাঙ্কার ছেড়ে রাস্তার পশ্চিম পাশের পাড়ার দিকে সরে যায়। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা দ্রুত শক্র পরিত্যাক্ত বাঙ্কারে অবস্থান নেয়। অন্য একটি দল বুকে হেঁটে পুলের অপর পাড়ে গিয়ে শক্রর বাঙ্কারে হাতবোমা ছুড়তে থাকে। এছাড়াও দশজন সহযোদ্ধাসহ হাবিব জামুরকি স্কুলের পাশ থেকে শক্রর বাঙ্কারে প্রায় পাঁচমিনিট অবিশ্রান্তভাবে এলএমজির গুলি চালান কমান্ডার হাবিবের গুলিবৃষ্টির মুখে সেতুর উত্তর-পূর্বের বাংকার থেকে পাকবাহিনীর গুলি ছোঁড়া একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। তারা মাথা তুলতে পারেনি। আক্রমণের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে বাকি রাজাকার ও মিলিশিয়ারা সড়কের পশ্চিমপাশ ঘেঁষে উত্তর দিকে পালাতে শুরু করে। কিন্ত তাদের পক্ষে পালিয়ে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ নাটিয়াপাড়া ও জামুরকির মাঝামাঝি যেতেই পাখির খাঁচায় ঢোকার মতো। মুক্তিবাহিনীর ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে যায়। তবে এখানে রাজাকাররা কোনো প্রতিরোধের চেষ্টা করেনি। বরং তাদের সঙ্গে থাকা বারোজন মিলিশিয়াকে নিজেরাই ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করে এবং পঁচিশজন রাজাকার নিজেরাও আত্মসমর্পণ করে।
জামুরকি সেতু দখলের পর পাকুল্লা সেতুতে পুনরায় সময় পাকুল্লা সেতুর দিক থেকে আঘাত হানা হয়েছিল। কিন্ত দ্বিতীয় অভিযানে একদিন থেকে আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। কমান্ডার হাবির তার কোম্পানির বাছাই করা বিশ জন যোদ্ধাসহ শুধুমাত্র গ্রেনেড নিয়ে ক্রলিং করে পুলের উপর উঠে পড়েন। ভারী অস্ত্র নিয়ে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা পুলটির উত্তর ও পশ্চিম দিক আগলে রাখে। বিশজন মুক্তিযোদ্ধা অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে পাক সেনাদের বাঙ্কার গুলোর নিকটবর্তী হয়ে একের পর এক গ্রেনেড ছোঁড়ে। সেতু পাহারায় নিয়োজিত ৩০ জন পাকসেনা ও ৫০ জন রাজাকারের মধ্যে ২০ জনের দেহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অবশেষে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এভাবে ২০ শে নভেম্বর পাকুল্লা সেতু হানাদারমুক্ত হয়। এই যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হয়।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত