পাতারাইলে পাকসেনাদের আত্মসমর্পণ, ভাঙ্গা, ফরিদপুর
৮ ডিসেম্বর মাদারীপুর থেকে পাকসেনাদের ৫০ জনের একটি দল পায়ে হেঁটে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার পাতারাইল গ্রামের একটি বাড়িতে ওঠে। তারা খাবার চাইলে গৃহকর্তা তার ব্যবস্থা করেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে খবর পাঠান। মুক্তিযোদ্ধাদের পরামর্শক্রমে তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ত্যাগ করে। মিয়াপাড়া গ্রাম থেকে সানোয়ার মোল্লা, দরশাহ বাজার থেকে আবদুল জব্বার মাতুব্বরের নেতৃত্বে যথাক্রমে ২৫ ও ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা বাড়িটির চারপাশে অবস্থান গ্রহণ করে। পড়ে আবদুল খালেকের নেতৃত্বে আরো ২০/২৫ জনের একটি দিল যুদ্ধে শামিল হয়। ওই যুদ্ধে জাহাঙ্গীর শহীদ হন। এ প্রসঙ্গে ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা দুলাল চন্দ্র রায় লিখেছেন, ‘আমরা খুব সাবধানে বৈঠকখানার পেছনের দিকটার ঝোপের মধ্যে গিয়ে আশ্রয় নিলাম। এতটা গোপনীয়তা সত্ত্বেও ওরা কিন্ত আমাদের উপস্থিতি তের পেল। তাই আমাদের সবার পজিশন নিতে নিতেই বৈঠকখানা ঘরের দিক থেকে গুলি শুরু হয়ে গেল। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে দু’পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হওয়ার পর ওরা কাবু হয়ে এলো। ওদের তুলনায় আমাদের অবস্থান ছিল তুলনামুলকভাবে সুবিধাজনক। এ সময় ও তরফ থেকে গুলিবর্ষণ বন্ধ হয়ে গেল। ততক্ষণ আমরা তিন দিন থেকে বৈঠকখানা ঘিরে ফেলেছি। কেউ কেউ সাহস করে আরো এগিয়ে যেতে চাইছে। ওপক্ষ থেকে তবুও কোনো সাড়াশব্দ নেই। অতি উৎসাহী ক’জন উদ্যত রাইফেল হাতে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। কিন্ত মিলিটারিদের বাধা দেবার ইচ্ছা বা ক্ষমতা বোধ করি কোনটাই ছিল না। সঙ্গীদের রক্তাক্ত মৃতদেহের পাশে হাতের অস্ত্র রেখে মাথার ওপর দু’হাত তুলে সব দাঁড়িয়ে আছে। পঁয়ত্রিশ জনের মধ্যে সম্পূর্ণ অক্ষত আছে মোট এগারোজন, আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে নয়জন, বাকিরা মৃত অথবা মুমুরষ, সেগুলোকে গ্রামের লোকেরা দা-কুড়ালের আঘাতে ভবলীলা সাঙ্গ করল’। জব্বার গ্রুপের একেএম সুলতানুল আলম, মোহাম্মদ আবুল হোসেন, দুলাল চন্দ্র রায়, ইসকেন্দার আলী, বেনজীর, আবুল বাসার মিয়া ও সারোয়ার গ্রুপের রোকণউদ্দিন মোল্লা, বেলায়েত হোসেন, হারুন মিয়া, নূরুল হক, রেজাউল ইসলাম মোল্লা, গিয়াস উদ্দিন এবং খালেক গ্রুপের আনোয়ার হোসেন, শেখ ইয়াদ আলী, বাকী মিয়া, আজিজুল হক, সাহাবুদ্দিন বাহার, সোবহান খান, ইসকেন্দার প্রমুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৬ ডিসেম্বরের পর বন্দি পাকসেনাদের গ্রুপকে কড়া প্রহরায় রাখা হয় এবং তাদের খাদ্য সরবরাহ ও থাকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাদের ১৮ তারিখে ফরিদপুর পুলিশ লাইনে ভারতীয় বাহিনীর কাছে সমর্পণ করানো হয়।
[১৫] আবু সাঈদ খান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত