You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাইকগাছা থানা দখল, খুলনা

বিনা যুদ্ধে ও রক্তপাতহীনভাবে গড়াইখালীর রাজাক্র ক্যাম্প দখল ও কিছু অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা এরপর পাইকগাছা থানার অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করতে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী জুলাই মাসের ৮ তারিখ পাইকগাছা থানায় আক্রমণ চালানো হয়। বাবর আলীর নেতৃত্বে এতে অংশগ্রহণ করে আশাশুনি থানার হেতালবুনিয়া ক্যাম্পের (শহীদ কাজল ক্যাম্প) ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। এখানে উল্লেখ্য যে, পাইকগাছা থানার পুলিশ বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে পাকিস্তান সরকারের অনুগত থাকে এবং পিস কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সাথে এলাকার সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালায়। তারা মুক্তিযোদ্ধা গাজী রফিকুল ইসলামকে ধরার জন্য তার আত্মীয়দের বাড়িতে হামলা চালায়। কমান্ডার স.ম বাবর আলী থানার পারিপার্শ্বিক অবস্থা, প্রতিরক্ষা ব্যবিস্থা পুলিশের তৎপরতা ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় পর্যবেক্ষণ করার জন্য দুজন গোয়েন্দা নিয়োগ করেন। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে ৫ জুলাই বৈঠকে কমান্ডার স.মবাবর আলী, আবুল কালাম আজাদ, আশোক রায়, কে.এম মুজিবর, স.ম ইউসুফ, সোহবান ও গাজী রফিকুল ইসলাম পাইকগাছা থানা অপারেশনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। তারা ৭ জুলাই পুনরায় বৈঠক করে ৮ জুলাই বিকালে পাইকগাছা থানা আক্রমণের তারিখ নির্ধারণ করেন এবং পরিকল্পনা মোতাবেক ৮ জুনাই দুপুরের পর ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে স.ম বাবর আলী পাইকগাছা থানা অভিমুখে নৌকাযোগে রওয়ানা হন। বিকাল ৪টায় তারা থানার কাছাকাছি এক স্থানে পৌঁছে তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে থানা ঘিরে পজিশন নেন। মুক্তিযোদ্ধা সোবহান পাইকগাছার টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন অফিসের পি. সি. ও’তে যেয়ে ওয়ারলেস অপারেটর আফজালুর রহমানকে ওয়ারলেস সেট বন্ধ করতে বাধ্য করে। ফলে পাইকগাছার সাথে সকল স্থানের টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আক্রমণের শুরুতেই স.ম বাবর আলী কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে চিৎকার করে বলেন যে, পুরো থানা মুক্তিবাহিনী ঘিরে ফেলেছে, যারা বাঁচতে চাও আমি ৩০ পর্যন্ত গননা করার সাথে সাথে মাঠে এসে হাজির হও, নতুবা সকলকে গুলি করে হত্যা করা হবে। এ ঘোষনা দেয়ার সাথে সাথে থানার পুলিশ সদস্যরা সকলে মাঠে এসে দাঁড়ায়। এরপর ফ্লাগ পোস্ট থেকে পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে ফেলা হয়। বাবর আলীর নির্দেশে থানার ১৯টি রাইফেল, ৫৭টি বন্দুক ও প্রচুর পরিমাণ গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট হস্তান্তর করে সন্ধ্যার মধ্যে অপারেশন শেষ হয়। পি.সি. ও থেকে সোবহান ওয়ারলেস সেটতি নিয়ে এসে মূল বাহিনীর সাথে যোগ দেয়। সবাই জয়বাংলা শ্লোগান দিতে দিতে বাবর আলীর নেতৃত্বে নৌকাযোগে কাজল ক্যাম্পে প্রত্যাবর্তন করে। এভাবে আরো একটি সফল অভিযান পরিচালিত হয়। এ অভিযানে উপরে উল্লেখিত মুক্তিযোদ্ধাগণ ছাড়া কামরুল ইসলাম, আইনউদ্দিন, আবু বকর সিদ্দিকী, হামিদ উল্লাহ, মোহাম্মদ আলী, নূর মোহাম্মদ, আব্দুল লতিফ, আব্দুর রব, মনোরঞ্জন, হান্নান, হায়দার, আরশাদ, মান্নান, কে.এম. খলিলুর রহমান, আনিস, রশীদ, আক্কাস আলী, মোকসেদ আলী প্রমুখ অংশগ্রহণ করে। এ অভিযানের পর এ থানার পুলিশ বাহিনীকে খুলনায় ক্লোজ করে অন্য একদলকে পাঠানো হয়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!