পাইকগাছা হাইস্কুল অপারেশন, খুলনা
আগস্ট মাস কপিলমুনি থেকে একদল রাজাকার এসে পাইকগাছা থানা সদরে অবস্থিত পাইকগাছা হাইস্কুলে অবস্থান নেয়। এ রাজাকাররাই ২৭ জুলাই কপিলমুনির ঘাঁটি থেকে এসে শেখ মাহাতাব উদ্দিনসহ অনেককেই হত্যা করে। এবার এখানে তারা ক্যাম্প স্থাপন করায় এলাকায় এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাজাকারদের অত্যাচারে সাধারণ লোকজন বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে থাকে। ফলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা গড়াইখালী ইউনিয়নের পাতাবুনিয়ায় অবস্থিত মুজিব বাহিনীর ক্যাম্পের স্মরণাপন্ন হয়। এ ক্যাম্পে তখন অবস্থান করতেন মুক্তিবাহিনীর খুলনা জেলা প্রধান শেখ কামরজ্জামান টুকু। তিনি উক্ত রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন এবং নভেম্ভর মাসের প্রথম সপ্তাহে গভীর রাতে অভিযান চালান। এ অভিযানে শেখ কামরুজ্জামান টুকু নিজেই নেতৃত্ব দেন। আক্রমণের আগের দিন তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে রাতে কাটিপাড়ায় জৈনক আমল বোসের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তিনি তার যোদ্ধাদেরকে কয়েকটি দলে ভাগ করে নিজে আক্রমণকারী দলের দায়িত্ব নেন। গভীর রাতে শেখ কামরুজ্জামান টুকু পরিকল্পনা মোতাবেক উক্ত হাই স্কুলের চারদিকে ঘিরে ফেলেন। একটি দল স্কুল ভবনের দেওয়ালে বিস্ফোরক লাগাতে গিয়ে অন্ধকারে দেওয়ালের পরিবর্তে জানালার উপর লাগায়। ফলে এর বিস্ফোরণে ভবনের তেমন ক্ষতি না হয়ে কেবল জানালা বরাবর কক্ষের ক্ষতি হয়। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এলাকা কেঁপে ওঠে। সাথে সাথে রাজাকার ভবনের দোতলায় গিয়ে চারদিকে অনর্গল গুলি ছুঁড়তে থাকে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা আরসিএল আক্রমণ করে। আর.সি.এল ব্যবহারকারী আশোক নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়। এভাবে দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ চলে। রাজাকাররা দোতলায় উঠে সিঁড়ির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। তাদের এ প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেদ করে মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিতীয় তলায় উঠতে পারেনি। ভোর হয়ে এলে টুকু আক্রমণ প্রত্যাহার করে ক্যাম্পে ফিরে যান। মুক্তিযোদ্ধারা এ ঘাঁটি দখল করতে না পারলেও তাদের এ আক্রমণে রাজাকাররা এত ভিত-সন্ত্রস্ত হয় যে, মুক্তিযোদ্ধাদের চলে যাবার পরপরই তারা ঘাঁটি ত্যাগ করে চলে যায়। সকালে এলাকাবাসী রাজাকারমুক্ত পরিবেশ দেখতে পায়। শেখ কামরুজ্জামান টুকু সাক্ষাৎকারে বলেন, মুজিবাহিনীর পরিকল্পনাই ছিল এরকম-রাতে আকস্মিক আক্রমণ করে সরে পড়া। রাজাকাররা ঘাঁটি ত্যাগ না করলে আমরা আবার আক্রমণ করতাম এবং তা বুঝতে পেরে ও আমাদের উন্নততর অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহারে ভীত হয়ে তারা এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। এটাই আমাদের বিজর।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত