You dont have javascript enabled! Please enable it!

পটিয়া মুক্তকরণ অভিযান, চট্টগ্রাম

ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই রণাঙ্গনে পাকবাহিনী পরাজিত হতে থাকে এবং নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করে। ৭ ডিসেম্বর (মতান্তরে ৫ ডিসেম্বর) পটিয়া, সাতকানিয়া, চাকরিয়া থেকে পাকিস্তানী বাহিনী, পুলিশ, রাজাকার ও মুজাহিদরা চট্টগ্রাম শহরের দিকে পালিয়ে আসার পথে শাহ আলম গ্রুপের দ্বারা গৈড়লারটেকে আক্রান্ত হয়। এতে ৩ জন শক্র সেনা নিহত এবং শতাধিক সৈন্য মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। তাদের অস্ত্রগুলো মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে। ৭ ডিসেম্বর (মতান্তরে ১৩ ডিসেম্বর) হাসিমপুর দেয়াংজিঘিল পাহাড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩টি গ্রুপের ৮০ জন সদস্য অবস্থান নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে স্থানীয় দালাল কাঞ্চন মিয়া পাকবাহিনীর নিকটস্থ ঘাঁটিতে গিয়ে জানালে তারা অতর্কিত আক্রমণ চালায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর। পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে সেদিন মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ (লোহাগড়া), বিমল (নলুয়া) ও স্বপন দাশ চৌধুরী (সাতকানিয়া) শহীদ হন। এই তিন শহীদের স্মরণে দেয়াংজিঘিল এবং জামিজুগিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। এ ঘটনার পরই পাকবাহিনী পাহাড়ে ছেড়ে ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। পরদিন দোহাজারী ব্রিজের সঙ্গে সংযুক্ত বেলি ব্রিজটি উড়িয়ে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের চতুর্মুখী তাড়া খেয়ে দোহাজারী স্কুলে রাজাকার ও আল বদররা আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ৯ ডিসেম্বর পটিয়া স্বল্প সময়ের জন্য পাক হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহ আলম প্রথম থানায় জৈনিক মওলানাকে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করান। পড়ে শাহজাহান ইসলামাবাদীরা দলটি থানায় আসেন এবং দু’দলের মধ্যে দ্বন্ধ দেখা দেয়। শাহ আলম গ্রুপের অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে ইসলামাবাদী আটক করে থানা হাজতে রাখেন। এই দ্বন্দের সুযোগে শক্র সেনারা পুনরায় পটিয়া দখল করে। অবশ্য পটিয়ায় এরপর পাকবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ১১ ডিসেম্বর পাকসেনারাদের একটি দল চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চল ছেড়ে শহর অভিমুখে চলে যাওয়ার পথে ১৫/২০ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল হঠাৎ বাধা দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ঝটিকা আক্রমণে পাকসেনারা ইন্দ্রপোল থেকে মুন্সেফ বাজার পর্যন্ত এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে দোহাজারী চলে যায়। যাওয়ার সময় তাদের গুলিতে কর্মরত কয়েকজন দিনমজুর ও ডা. পি. কে চৌধুরীর মা নিহত হন। এসময় পাকসেনাদের উদ্ধার করার জন্য চট্টগ্রাম শহর থেকে একটি দল ইন্দ্রপোল পর্যন্ত আসে। পাকবাহিনীর দোহাজারীর দলটি তাদের অগ্রগমন পথে কমল মুন্সির হাট, গিরি চৌধুরী বাজার ও করল প্রভৃতি এলাকায় হামলা করে শেখ মোহাম্মদ পাড়ার আবদুস সাত্তারসহ ৮ জন নিরীহ লোককে হত্যা, পাশাপাশি লুট ও অগ্নিযংযোগ করে। ঐদিনই মুক্তিযোদ্ধারা শ্রীমাই ব্রিজটি ভেঙে ফেলে। পাকসেনারা চলে যাওয়ার পথে ইন্দ্রপোল লবণ মিল একালা ভস্মীভূত এবং ইন্দ্রপুলটিও ধ্বংস করে দেয়। ১২ ডিসেম্বর সকালে দোহাজারী শংখ ব্রিজের উত্তরে মুক্তি ও মিত্র বাহিনী (ভারতের দেমাগি থেকে আসা কমান্ডার ক্যাপ্টেন গুরুংগু) বালুর চরের খেতে বাঙ্কারে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন। দক্ষিণ পাড়ে হানাদারবাহিনী, রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের অবস্থান ছিল এ সময়ে পাক হানাদারবাহিনীর মেজর ও তার সঙ্গী তাদের বাহিনীর অবস্থানে এসে জিপ থেকে নামার সাথে সাথে দোহাজারী শঙ্খ ব্রিজের উত্তরপাড় থেকে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে গোলাগুলি শুরু করে। একটানা বিরতিহীন ৩৬ ঘন্টা যুদ্ধে নিহত হয় হানাদার বাহিনীর মেজর আশরাফ ও তার সঙ্গীরা যুদ্ধ শুরু হওয়ার দু’এক ঘন্টার মধ্যে রাজাকার, আল শামসরা পালিয়ে যায়। ৩৬ ঘন্টা যুদ্ধের পর পাকবাহিনীর পরাজয় ঘটে। বাংলাদেশ ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন প্রকৃতপক্ষে পটিয়াসহ সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রাম তার দু’দিন আগে অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীন হয়। ঐদিন বিকেলে পাকসেনারা পটিয়ে তথা দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছেড়ে শহর অভিমুখে চলে যায়। যাওয়ার পথে ইন্দ্রপোল ব্রিজটি শক্তিশালী মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেয়। পড়ে পটিয়া (ব্ররহত্তর পটিয়া) স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের করতলগত হয়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!