You dont have javascript enabled! Please enable it!

পদ্মা ও পলাশ বিধ্বস্ত
[অংশগ্রহণকারীর বিবরণ]

মিত্র বাহিনীর দেয়া দুইটি টাগ বোট সংস্কার করে পদ্মা ও পলাশ নামে দুটি রণতরী তৈরি করা হয় এবং খুলনায় পিএনএস তিতুমীরকে ধ্বংস করার জন্য ৯ ডিসেম্বর রাতে হিরণ পয়েন্টে প্রবেশ করে। এর সাথে “পানভেলা” নামে একটি ভারতীয় রণতরী ছিল। ভারতীয় পতাকাবাহী এ রণতরীতে ছিল মিত্র বাহিনীর সদস্যরা আর বাংলাদেশের পতাকবাহী পদ্মা-পলাশে ছিল বাঙালি নৌ-কমান্ডার সদস্যরা। হিরণ পয়েন্টে প্রবেশের মুখে এ বহরের সম্মুখে পড়ে যায় বঙ্গোপসাগরগামী পিএনএস তিতুমীরের একটি জাহাজ। এতে তখন খুলনাস্থ পাকিস্তানী নোউ-বাহিনীর সদস্যেরা সপরিবারে পালিয়ে যায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা নাগালের মধ্যে পেয়েও মানবিকতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে তাদের আক্রমণ করেনি। নৌ-কমান্ডার জালাল উদ্দিন বলেন, আমাদের সামনে পড়ে যাওয়ায় জাহাজটির মধ্যে থাকা মহিলা ও শিশুরা ক্রন্দন শুরু করে। মানবতার দিকে তাকিয়ে আমরা সেটিকে বাধা দেইনি। ১০ ডিসেম্বর এই নোউবহর খুলনার শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি এলে হঠাৎ কয়েকটি জঙ্গি বিমান এসে এ রণতরীর উপর বোমা নিক্ষেপ করে। স.ম বাবর আলী এ বিমানকে পাকিস্তানী বিমান বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু জালাল উদ্দিন এ ঘটনাকে ‘same side’হিসেবে হিসেবে বিমানটিকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বলে সনাক্ত করেন। মূলত তখন আর পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর কোনো বিমান অক্ষত ছিল না। নভেম্বর মাসে দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর পতন শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানী কোনো বিমানের হামলার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এমন কী যশোর ক্যান্টেনমেন্টের পতনের সময় নয়। উপরন্তু ভারতের স্বীকৃতির পর থেকেই এ এলাকায় যথারীতি ভারতীয় বিমানই পাকিস্তানী বাহিনীর অবস্থানের উপর হামলা অব্যাহত রাখে। শিরোমনিতে যুদ্ধেও ভারতীয় বিমান হামলা পাকবাহিনী মোকাবেলা করতে পারেনি। এ হামলাই শিরোমনিতে পাকবাহিনীকে বিধ্বস্ত করে। তারা পাল্টা কোনো হামলাই পাকিস্তানী বিমান বাহিনী করতে পারেনি। ভারতীয় বিমান বাহিনীর এই একতরফা বিমান হামলার ধারাবাহিকতায়ই পদ্মা-পলাশের হামলা হয়েছে। বিমান হামলায় পদ্মা-পলাশ বিধ্বস্ত হয়। তবে অক্ষত থাকে পানভিলা। পদ্মার কমান্ডার নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুপসার পশ্চিম তীরে উঠে। এদের মধ্যে জালাল উদ্দিনসহ ৬ জন চলে আসতে সক্ষম হলেও ১৮ জন শিপইয়ার্ডে থাকা রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে এবং সেখানে তাদের ওপর নির্যাতন হয়। খুলনা বিজয়ের পর তারা সেখান থেকে মুক্তি পায়। পলাশের কমান্ডাররা বিমান হামলা মোকাবেলার সর্বশেষ চেষ্টা চালায়। কিন্তু হঠাৎ একটি গোলায় ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। এ সময় নাবিকরা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেও রুহুল আমীন পলাশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাঁকে পূর্ব তীরে ভিড়াতে সচেষ্ট হন। অবশেষে ভিড়াতে সক্ষম হলেও তখন আর তার কুলে ওঠার শক্তি ছিল না। মারাত্মক আহত এ বীর রণতরীতেই শাহাদৎ বরণ করেন। স.ম. বাবর আলী রুহুল আমীনের শেষ অবস্থা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন যে, অবশেষে গুরুতর অবস্থায় তিনি (রুহুল আমীন) নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বহু কষ্টে কূলে এসে উঠলেও সেখানে রাজাকারদের হাতে তিনি ধরা পড়েন এবং তারা তাঁকে নির্যাতন করে হত্যা করে। কিন্তু এ অভিযানে অংশগ্রহনকারী জালাল উদ্দিন এ দাবী প্রত্যাখান করে বলেন দু’দিন পরে লোকমুখে খবর পাই যে পলাশ লঞ্চটি রুপসার পূর্বে তীরে চরে আটকে আছে এবং তাতে একটি লাশ পড়ে আছে। খবর পেয়ে আমি আমার কয়েকজন সাথী নিয়ে সেখানে যাই। পলাশে উঠে দেখি রুহুল আমিনের লাশ। তখন স্থানীয় লোকদের সাহায্যে কূলে এনে সেখানেই দাফনের ব্যবস্থা করি।
[৯২] রিয়াজ আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!