You dont have javascript enabled! Please enable it!

২৫শে মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ যুদ্ধ
[প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ]

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ সকাল থেকে আমাদের পুলিশ লাইনে নীরব, নিস্তব্ধ ও থমথমে ভাব বিরাজ করছিল। স্পেশাল আরম ফোরস-এ আমার লাইনে রাত আটটায় বাইরের কর্তব্যরত সিপাহী বাদে আমি নাম ডাকার সময় মাত্র তিরিশজন বাঙ্গালি সিপাহীকে উপস্থিত পেয়েছি। আমি কোন অবাঙ্গালি সিপাহীকে লাইনে উপস্থিত পাইনি। ওরা সন্ধ্যার পরপরই আমার লাইন থেকে ডিউটি ত্যাগ করে কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিল তার কোন হদিস পাইনি। নাম ডাকার সময় বিপুল সংখ্যক সিপাহীরা এভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ইতিহাসে আর ঘটেনি। ঢাকা জেলা রিজার্ভ লাইনের এ অবস্থা ছাড়া কেন্দ্রীয় লাইন থেকেও সেদিন সকল অবাঙ্গালী সিপাহী তাঁদের পদস্থ অফিসারদের নির্দেশ ও মর্যাদা একেবারে উলঙ্গভাবে, পুলিশের ইতিহাসে এই প্রথম, অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে সম্মিলিতভাবে একযোগে উধাও হয়ে গিয়েছিল। অবাঙ্গালি সিপাহিদের রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে এভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার পর আমরা আসন্ন বিপদের কথা বুঝতে পারি এবং আমার অধীন বাঙ্গালি সিপাহীদের হাতে অস্ত্র দিয়ে পুলিশ লাইনের সকল প্রবেশ পথে তাদেরকে কড়া প্রহরায় নিযুক্ত করি। পুলিশ লাইনের চারটি প্রবেশপথে চারজন হাবিলদারের সাথে ছয়জন করে সশস্ত্র সিপাহী মোতায়েন রাখি। আমি খুব চিন্তাযুক্তভাবে পুলিশ লাইনে টহলরত ছিলাম। আমি এক সময় দোতলা থেকে অস্ত্রাগারের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলাম। এমন স্ময় অস্ত্রাগারের ভিতরের টেলিফোনটি বেজে উঠলে আমরা কর্তব্যরত নায়েক চিৎকার করে আমাকে টেলিফোন ধরতে বলে। আমি দৌ’ড়ে গয়ে টেলিফোন ধরলাম। অস্ত্রাগারের সেই টেলিফোনে এক ভীতসন্ত্রস্ত কাঁদো কাঁদো কম্পিত চাপাচাপা অস্ফুট কন্ঠে বলছিল “মিলিটারি হেডকোয়ার্টারে বহু সশস্ত্র আর্মি ট্রাক লাইন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা এক্ষুনি রাজধানী আক্রমণ করতে যাচ্ছে”। সেই ভীত কন্ঠে আরো বলছিল- “ওদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ই-পি-আর হেডকোয়ার্টার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল”। একথা বলেই সেই কন্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেল। “কে বলছেন ? কোথা থেকে বলছেন?” আমি চিৎকার করে এসব প্রশ্ন করার সাথে সাথে টেলিফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। সিপাহীরা টেলিফোনের এ মারাত্মক সংবাদ লাইনের সর্বত্র চিৎকার করে ছড়িয়ে দিচ্ছিল। এ সংবাদে সকল সিপাহী অস্ত্রাগারের দিকে ছুটে এসে টেলিফোনের সংবাদ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করতে থাকে। এ সময় আমি লাইনে বসে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের তৎকালীন আর-আই-মি, মফিজউদ্দীনের সাথে তাঁর বাসায় টেলিফোনে যোগাযোগ করে ঢাকা সেনানিবাস থেকে বাঙ্গালি কন্ঠে ভেসে আসা পাকসেনাদের আক্রমণের কথা।
*[এরপর রাজারবাগ আক্রান্ত হয়।]
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হাবিলদার মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সাক্ষাৎকার: শরীফ খান মোহাম্মদ আলী, আর্মড সাব-ইন্সপেক্টির অব পুলিশ, ০৩-০২-৭৪

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!