You dont have javascript enabled! Please enable it! নূর মোহাম্মদ শেখ, ল্যান্স নায়েক (-১৯৭১) বীরশ্রেষ্ট - সংগ্রামের নোটবুক

নূর মোহাম্মদ শেখ, ল্যান্স নায়েক (-১৯৭১) বীরশ্রেষ্ট

মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সরবোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাবধারী বীরশ্রেষ্ট ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ নড়াইল জেলার মহিষখোলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ১৯৫৯ সালের ২৬ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, এই বীর, দেশ মাতৃকার টানে তাঁর নতুন কর্মস্থল যশোরে যোগদান না করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। নূর মোহাম্মদ এই সময়ে ছুটিতে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর অধিনায়ক ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদের সাথে ৪ জন সৈনিক দিয়ে সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষার সামনে গোয়ালহাটি গ্রামে পেট্রোল পাঠানো হয়। সকাল ৯টার দিকে হটাৎ পাকিস্তানি বাহিনী পেট্রোলটির তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এই সময় সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে নূর মোহাম্মদ তাকে কাঁধে তুলে নেন এবং তাঁর হাতের এলএমজি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে শক্রকে পশ্চাৎ পদাসরণ করতে বাধ্য করেন। হঠাৎ শক্রর একটি মর্টার তাঁর কাধে এসে পড়লে তিনি পড়ে যান। এই সময় সিপাহি মোস্তফার নিকট তাঁর এলএমজি দিয়ে তাঁর রাইফেলটি চেয়ে নেন এবং নান্নু মিয়াকে নিয়ে যেতে বলেন। তাঁর সঙ্গীরা তাঁকেও নিয়ে যেতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁকে নিতে হলে সকলেই মারা পড়বে। এই কারণে অধিনায়ক হিসেবে তিনি সকলকে সন্তর্পণে ক্যাম্পে চলে যেতে নির্দেশ দেন। শক্রর মনোযোগ তাঁর দিকে নিবদ্ধ করার জন্য তিনি রাইফেল দিয়ে গুলি চালাতে থাকেন। শক্রপক্ষের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে এক সময় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা এই মৃত বীর সৈনিকের চোখ বেয়োনেট দিয়ে উপড়ে ফেলে। পরবর্তীতে প্রতিরক্ষা ব্যুহ থেকে অন্য সৈন্যরা এসে জঙ্গলে এই বীর সৈনিকের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই অমর শহীদের আত্মদানে আজ আমরা পেয়েছি লাল সবুজ পতাকা।
মোঃ সিদ্দিকুর রহমান স্বপন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত