২৫শে মার্চ প্রতিরোধ যুদ্ধে ঢাকা শহর
[প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ]
অসহযোগ আন্দোলনে আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল। আমি তখন ঢাকা সেনানিবাসে দ্বিতীয় বেঙ্গলে ছিলাম।
২৫ মার্চের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠি। আমরা বাঙ্গালি অফিসারদের সাথে কথা বললে তারা আমাকে নিরুৎসাহিত করেন। তারপর আমরা ১৬ জন যুবক আলাপ-আলোচনা করে ২৭ মার্চ সেনানিবাস থেকে পালিয়ে যাই।
তেজগাঁ ড্রাম ফ্যাক্টরির কাছে এসে দেখি মুক্তিবাহিনী গঠন হয়েছে। সেখানে ই-পি-আর, আনসার, মুজাহিদ, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, সবাই ছিল। আমি দলের নেতৃত্ব হাতে নেই। আমরা ৩৫০ জনের উপরে ছিলাম। তেজগাঁ রেললাইনের অপর দিকে ডিফেন্স নিয়ে ২৯ মার্চ পাকসেনাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হই। ১২৫ জন পাকসেনা হতাহত, ৩টি গাড়ি ধ্বংস এবং অনেক আহত হয়। বহু অস্ত্র ও আমরা উদ্ধার করি। অস্ত্র দ্বারা আমরা পুনর্গঠিত ও নববলে বলিয়ান হই। ৩০ মার্চ ঢাকা মহাখালিতে আমরা ১০ জন রেকি করতে বের হই। আগে থেকে আমরা বুঝতে পারিনি যে পাকসেনারা এমবুশ করে আছে। আমরা এমবুশে পড়ে যায়। শামসুল আলম নামক ই-পি-আর ওখানে শহীদ হন, বাকী নয়জন কোনরকমে বেঁচে আসি। সময় ছিল রাত সাড়ে দশটা।
৩১ মার্চ সেকেন্ড ক্যাপিটালে আসাদ গেটের নিকটে হাসপাতালের কাছে পাকসেনাদের অবস্থান ছিল। আমরা রাত ৩টায় আক্রমণ চালাই। এতে ৫ জন পাকসেনা খতম হয়। আমাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ভোর পাঁচটায় পাকসেনারা ব্যাপক সেনা ও অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর আক্রমণ চালায়। ওদের সামনে টিকতে না পেরে পালাবার চেষ্টা করি। সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, বেশ কিছু শহীদ হন। আমি সহ সাতজন পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়ি। তারিখ ছিল ১লা এপ্রিল।
[১৫৭] লে.(অব.) আনোয়ার হোসেন-এর সাক্ষাৎকার, সংকলন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত