You dont have javascript enabled! Please enable it! নরসিংদী ও ঘোড়াশালে গেরিলা হামলা - সংগ্রামের নোটবুক

নরসিংদী ও ঘোড়াশালে গেরিলা হামলা

চারদিকে একযোগে প্রচণ্ড গেরিলা আক্রমণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রথমদিকে এই গেরিলা আক্রমণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল নিম্নরূপ :
*পাকিস্তানী জালিম শাসকগোষ্টীর অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া।
*পাকিস্তানী বাহিনীর মনোবলে ভাঙন ধরানো।
*পাকিস্তানী বাহিনীর যোগাযোগব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া।
*জনসাধারণের মনে মুক্তিবাহিনীর যোগ্যতা সম্পর্কে উচ্চ ধারণার সৃষ্টি ও তাদের আস্থা অর্জন।
এই কর্মসূচির আওতায় নরসিংদী ও ঘোড়াশাল শিল্পাঞ্চলের শিল্প ইউনিটসমূহে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। নরসিংদীর আলীজান জুট মিলে এবং ঘোড়াশালের পূবালী জুট মিলে এরূপ হামলা চালিয়ে পাটের গুদামে আগুন ধরিয়ে শত শত মণ পাট পুড়িয়ে দেয়া হয়। অন্যান্য মিলেও অনুরূপ আক্রমণ চালিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করা হয়। এসব মিলে ক্যাম্প স্থাপন করে অবস্থানরত পাকিবাহিনীর সদস্য ও দালালেরা তখন মুক্তিবাহিনীর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী জিনাদরদীতে পাকিসেনাদের পদলেহী দু’জন দালালকে হত্যা করে স্থানীয় জনগণকে তাদের অত্যাচার থেকে মুক্তি দেয়। আগস্ট মাসের প্রথমদিকে ঘোড়াশাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি উড়িয়ে দেয়া হয় এবং মাধবদী টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি স্থায়ীভাবে বিকল করে দেয়া হয়। এর কাছাকাছি সময়ে ছনপাড়া ও বাগেরহাটায় ঢাকা-নরসিংদী মহাসড়কে দুটি ছোট সড়ক সেতু বিধ্বস্ত করা হয়। আগস্টের ৪ তারিখে আড়াইহাজার থানা কমান্ডার আবদুস সামাদের দল আড়াইহাজার থানার নিকটবর্তী পাঞ্চকপি এবং দড়গাঁও সড়ক সেতু উড়িয়ে দেয়। সে মাসেই তারা আড়াইহাজার থানা আক্রমণ করে সকল অস্ত্রশস্ত্র দখল করে নেয়। এরই কাছাকাছি সময়ে রূপগঞ্জ থানার মুক্তিবাহিনী কালীগঞ্জ থানা থেকে বের হয়ে আসা পশ্চিমা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল নৌকা আক্রমণ করে তাদের ডুবিয়ে হত্যা করে। শিবপুরে এ সময় যেসব আক্রমণ পরিচালিত হয়েছে টা আলাদাভাবে বর্ণিত হয়েছে। চারদিকে এভাবে প্রচণ্ড চোরাগোপ্তা আক্রমণের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানীদের ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
[১২৭] সিরাজ উদ্দীন সাথী

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত