নাগবাড়ীর চৌধুরী বাড়ি অপারেশন, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি থানার দক্ষিণ-পূবে নাগবাড়ী গ্রাম অবস্থিত। দেওয়াপাড়ায় কাদের সিদ্দিকীর আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পাকিস্তানিরা নাগবাড়ীর দিকে পিছু হটতে শুরু করে। কালাহাতি ফিরে যাওয়ার পথ তখন কাদের সিদ্দিকী একদল মুক্তিসেনা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। নাগবাড়ীর দিকে পিছু হটে যাওয়া শক্রকে ধাওয়া করে কাদেরীয়া বাহিনীর যোদ্ধারা। ডুবাইলে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা নাগবাড়ী উপস্থিত হয়ে চৌধুরী বাড়িতে লুটপাটরত শক্রর উপর আক্রমণ চালায়। শক্র চৌধুরী বাড়ির কেয়ারটেকার মুচুমিয়াকে হত্যা করে অপর লোকজনদের উপর নির্যাতন চালিয়ে চৌধুরী বাড়িতে আগুন লাগাবার চেষ্টার সময় মুক্তিবাহিনীর হামলা শুরু হয়। শক্ররা বুঝতে পারে যে, আর বিলম্ব করলে মুক্তিবাহিনীর দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়বে। তাই শক্ররা নাগবাড়ী ছেড়ে কালিহাতির দিকে পলায়ন করে। ওদিকে বল্লা থেকে মুক্তিবাহিনীর আর একটি দল চারান হয়ে নাগবাড়ীর পথে রওয়ানা হয়। শক্র চারানোর ভিতর দিয়ে কালিহাতিতে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ঠিক সময়ে চারানে পৌছাতে পারলে শক্রর ভাগ্যে চরম বিপর্যয় ঘটত।
কাদের সিদ্দিকী চৌধুরী বাড়িতে ঢুকে দেখেন চৌধুরী বাড়ির কেয়ারটেকার মুচু মিয়া রক্তাক্ত দেহে মাটিতে পড়ে আছে। জিনিসপত্র তছনছ হয়েছে। অন্য লোকজন আহত আর বাড়ির উপর শেলের গোলার বড় বড় ক্ষতচিহ্ন। কাদের সিদ্দিকী আহতদের চিকিৎসার দ্রুত ব্যবস্থা ও শহীদ মুচু মিয়ার লাশ দাফনের বন্দোবস্ত করেন।
মুক্তিবাহিনীর অসীম সাহসিকতা ও অপূর্ব দেশপ্রেমের জন্য ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী বাড়ি রক্ষা পায়। শিক্ষা, সেবা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক চৌধুরী সাহেবের এই ভবনটি মুক্তিযোদ্ধারা মনে করেছিল নিজেদের সম্পদ। চৌধুরী বাড়িকে দেশের সম্পদ মনে করতে পেরেছিল বলেই মাত্র একটি লাইট মেশিনগান ও বাকী ৩০৩ রাইফেল দিয়ে তারা শক্রর মোকাবিলা করে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত