You dont have javascript enabled! Please enable it!

নবীগঞ্জ থানা আক্রমণ-২,সিলেট

৩ নম্বর, ৪ নম্বর ও ৫ নম্বর সেক্টরের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন নেতৃত্বে পরপর কয়েকটি খন্ড যুদ্ধ পরিচালনা করার পর ৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী নবীগঞ্জ-শেরপুর রাস্তা হয়ে সিলেট চলে যায়। ৬ ডিসেম্বর ৪ নং সেক্ট্ররের সাব সেক্টর কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদী স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও শত শত দেশপ্রেমিক জনতাকে নিয়ে ট্রাক-বাস যোগে মিছিল করে নবীগঞ্জ থানার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে থানা সদরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। একই দিন স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। প্রথমদিকে স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনা করেন এম এ রউফ পরে এ দায়িত্ব পালন করেন সুরুজ আলী। এসময় আবদুস সালাম প্রশাসনকে সক্রিয় করবার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। একাদশ বেঙ্গলের টাস্ক দেয়া হলো চান্দুরার উত্তরাংশে একটি রোড ব্লক করতে যেতে সিলেট থেকে পলায়নপর পাকিস্তানী বাহিনী এদিকে না আসতে পারে। দ্বিতীয় কাজ হলো চান্দুরা থেকে সরাইল পর্যন্ত এলাকা শক্র মুক্ত করা। এই টাস্ককে বাস্তবায়ন করার জন্য ব্যাটালিয়ন কমান্ডার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভুঁইয়ার নেতৃত্বে একটি কোম্পানিকে চান্দুরার উত্তরাংশের সড়ক ব্লক করতে এবঙ ব্যাটালিয়নের অবশিষ্ট সৈন্যকে চান্দুরা থেকে সরাইল পর্যন্ত শক্রমুক্ত করে সামনে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিলেন। ক্যাপ্টেন ভুঁইয়া নির্দেশ পেয়ে যথাস্থান নিলেন। ব্যাটালিয়নের অবশিষ্ট সৈন্য হরশপুর-মির্জাপুর রাস্তা ধরে চান্দুরার দিকে অগ্রসর হয়। একাদশ বেঙ্গল পাইকপাড়া নামক স্থানে এলে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ক্যাপ্টেন নাসিম তার ট্রুপসকে চান্দুরা হয়ে শাহবাজপুর, সরাইল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হতে বললেন। ক্যাপ্টেন নজরুল তার কোম্পানি নিয়ে অগ্রবর্তী দল হিসেবে হেডকোয়ার্টারের সামনে অগ্রসর হচ্ছিল। ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারের বাহিনী সামনে অগ্রসর হয়ে ইসলামপুর নামক স্থানে এসে অবস্থান নেয়। হেডকোয়ার্টারে তখন এস ফোরস কমান্ডার মেজর শফিউল্লাহ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ক্যাপ্টেন নাসিমসহ মাত্র ৮ জন সৈনিক অবস্থান করছিলেন। মুক্তিবাহিনীর ক্রমাগত আক্রমণে পাকিস্তানীরা ক্রমশ পিছু হঠছিল। যদিও চান্দুরা মাধবপুরের মাঝামাঝি স্থানে ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভুঁইয়া তার বাহিনী নিয়ে অবস্থান করছিলেন; তথাপি পাকিস্তানীদের একটি গাড়ি ৭ ডিসেম্বর তেলিয়াপাড়া থেকে ক্যাপ্টেন ভুঁইয়াকে অতিক্রম করে চলে আসে। এই গাড়ির খবর মেজর শফিউল্লাহ এবং ক্যাপ্টেন ভুঁইয়া কেউই জানতেন না। এই সময় ইসলামপুরে একটা বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটে গেল। পাকিস্তানীদের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন মুক্তিবাহিনীর সদস্য শহীদ হন। ক্যাপ্টেন নাসিমসহ ১১ জন আহত হন। ৮ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভুঁইয়া শাহবাজপুরের কাছে তিতাস নদীর অপর পারে অবস্থানরত পাকিস্তানীদের পিছু হঠতে বাধ্য করেন। শাহবাজপুর হতে পাকিস্তানী বাহিনী পিছু হঠার সাথে সাথে মাধবপুর শক্রমুক্ত হয়। ৯ ডিসেম্বর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩০ নং আসামী মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী মাধবপুরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন এবং মাধবপুরের সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে দুলাল চৌধুরী এ দায়িত্ব পালন করেন।
[৬৩] মাহফুজুর রহমান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!