নবাবগঞ্জ থানা পাকবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমন-১, ঢাকা
পাকিস্তানী সৌন্যরা এপ্রিল-নভেম্বর (১৯৭১) পর্যন্ত (ঢাকা) নবাবগঞ্জ ঘাঁটিতে অবস্থান করে। এই সাত মাসে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানীবাহিনীর নবাবগঞ্জ ঘাঁটি আক্রমণ করে চার চার বার। প্রতিবারই পাকিস্তানীবাহিনী পরাজিত হয়েছে, বহু সংখ্যক পাক সৈন্য হত –আহত হয়েছে এবং বিপুল অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা হস্তগত করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিজ্ঞাও ছিল যে কোনো মূল্যেই হোক বাংলার মাটি থেকে পাকিস্তানীবাহিনীকে তাড়াতে হবে। এই লক্ষ্যে ৪থ বার আক্রমণের জন্য ৩০ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী নেতৃত্বস্থানীয় কমান্ডারগণ পুনরায় মিলিত হয়ে ৪ নভেম্বর পাকিস্তানীবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ নভেম্বর ভোর থেকেই ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্রুপ পাকিস্তানীবাহিনীর ঘাঁটির পশ্চিম পাশে কবরস্থান ও কবরস্থানের আশে পাশে অবস্থান নেয় এবং সকাল সাড়ে ৭টা অথবা ৮টায় শুরু হয় মুক্তিবাহিনী কতৃক প্রথম আক্রমণ। এর পরপরই শুরু হয় উভয় পক্ষে প্রচণ্ড গুলি বিনিময়। গুলি বিনিময় চলে প্রায় ১১টা পর্যন্ত। ইতিমধ্যে ৯টা অথবা সাড়ে ৯টায় পাকিস্তানী সৈন্যদের পক্ষে ঢাকা থেকে এসে পৌঁছায় হেলিকপ্টার গানশিপ। হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে প্রচণ্ড গুলি বর্ষণ করা হয়। এতেও পাক সৈন্যদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। পরবর্তী আধা ঘণ্টা পর আরো ২টি হেলিকপ্টার এসে যোগ দেয় পাকিস্তানীবাহিনীর পক্ষে। ফলে কিছু মুক্তিযোদ্ধা কৌশলগত কারণে সরে পড়ে। অন্যদিকে কবরে অবস্থানরত অন্য মুক্তিযোদ্ধারা গুলি চালাতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন ১০টা সাড়ে ১০টায় এমনি এক কবর থেকে পাক সৈন্যদের গুলি করতে মাথা ওঠালে পাক সৈন্যরা তাদের ক্যাম্পের ছাদ থেকে গুলি চালায়। গুলি এসে লাগে মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেনের মাথায়। ফলে বক্তার নগরের অধিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন ওখানেই শহীদ হন। এই যুদ্ধে পাকিস্তানীবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য হত বা আহত হয়। তাদের হেলিকপ্টার দিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। কিন্ত সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ১১টা সাড়ে ১১টায় গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায় এবং এরই মাঝে আমির হোসেনের লাশ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। ৪ঠা নভেম্বরের পর পাকিস্তানীবাহিনী আর বেশি দিন নবাবগঞ্জে অবস্থান করে নি। নতুন আক্রমণের ভয়ে ১৭ দিন পর ২৪ নভেম্বর ঢাকার উদ্দেশ্যে তারা নবাবগঞ্জ ঘাঁটি ত্যাগ করে। এই যুদ্ধে যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা অংশ নিয়েছেন এবং যাদের নাম জানা সম্ভব হয়েছে তাঁরা হলেন-শহিদ আমির হোসেন, দেওয়ান আবদুর রফিক ও আরো অনেকে।
[৬৯] হারুন-অর-রশিদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত