You dont have javascript enabled! Please enable it!

নওগাঁর যুদ্ধ

১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হয় নওগাঁয়। নওগাঁ পাবনা জেলার চাটমোহর থানার আওতায় হলেও যুদ্ধস্থলের বিরাট অংশ ছিল উল্লাপাড়া ও তাড়াশ এলাকার মধ্যে। বস্তুত এ জায়গাটি উল্লাপাড়া, চাটমোহর ও ভাঙ্গুড় থানার সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। দেশের উত্তরাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বিরাট অংশ ছিল তদানীন্তন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের আওতায়। এ যুব শিবিরই নওগাঁয় যুদ্ধ করে পাকবাহিনীর সঙ্গে। উত্তরবঙ্গের লাল সূর্য বলে খ্যাত উল্লাপাড়ার বংকিরট গ্রামের আবদুল লতিফ মির্জা এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব দেন। বস্তুত তিনিই ছিলেন এই এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক। ১৯৭১ সালের জুন মাসে সিরাজগঞ্জ জেলার ভদ্রঘাটে পলাশডাঙ্গা যুবশিবির গঠিত হয়। প্রায় ৭শ’ মুক্তিযোদ্ধার এই সংগঠনের পরিচালক মনোনীত হন আবদুল লতিফ মির্জা। সে সময় সংগঠনের অন্যান্য পদে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছে-সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম, যুগ্ম পরিচালক আবদুস সামাদ (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ রাকসুর তৎকালীন জি.এস), কমান্ডার-ইন-চিফ বিমল কুমার দাস, ব্যাটেলিয়ন কমান্ডার লুৎফুর রহমান অরুণ, কম্পানি কমান্ডার আবদুস সামাদ, প্লাটুন কমান্ডার আবদুস সালাম ও মোজাহারুল ইসলাম এবং হেডকোয়ার্টারস বি সেকশন কমান্ডার চৌধুরী ইফতেখার মোবিন। পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরে দুটি কোম্পানি ছিল, কোম্পানি দুটির অধীনে ছিল চারটি প্লাটুন। এসব প্লাটুনের আওতায় সেকশন ছিল ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশটি। জুন মাসে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির গঠিত হলেও ক্যাম্পিং শুরু হয় জুলাই মাসে। তখন ছিল বর্ষাকাল। মোট ৩৫ টি নৌকায় এই শিবিরের মুক্তিযোদ্ধারা তখন থাকত এবং চলাচল করতো। নভেম্বর মাসের প্রথমদিকে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির অবস্থান নেয় নওগাঁ বাজারের পাশে। এদের ক্যাম্পের পাশেই ছিল চিমনাই নদী। মুক্তিযোদ্ধাদের এই ক্যাম্পিংয়ের খবর কয়েকদিনের মধ্যেই পৌঁছায় পার্শ্ববর্তী উল্লাপাড়া, তাড়াশ ও ভাঙ্গুড় থানা সদরে অবস্থিত পাকবাহিনীর ক্যাম্পে। পাকবাহিনী তখন এ অঞ্চলে ব্যাপক জ্বালাও পোড়াও শুরু করেছিল। পাকবাহিনী বিভিন্ন থানা সদরে বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সংগঠিত হতে থাকে এবং চারদিক থেকে এই ক্যাম্পের ওপর আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করে। মুক্তিযোদ্ধা দলও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় প্রস্তুতি নেয়। দিনটি ছিল ১১ নভেম্বর। যুবশিবিরের ক্যাম্পের চারপাশে নওগাঁ থেকে তাড়াশ, উল্লাপাড়া, চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া যাওয়ার বিভিন্ন পথে পৃথকভাবে বেশ ক’জন সেন্ট্রি নিয়োজিত ছিল। ফজরের নামাজ পড়তে এসে নওগাঁ মাজার মসজিদের সামনে বেশ কিছু পাকসেনার অবস্থান দেখতে পান নওগাঁ গ্রামের মুরুব্বি ফজল আহমেদ। তিনি দ্রুত এই খবর একটি চিরকুটে লিখে মসজিদে আসা অপর এক ব্যাক্তিকে দিয়ে লতিফ মির্জার ইকট পাঠান। নওগাঁ মাজার থেকে লতিফ মির্জার দলের অবস্থান ছিল প্রায় অর্ধকিলোমিটার দূরে।
[৫৯৬] রিয়াজ আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!