ধুনট পুলিশ স্টেশন অভিযান, বগুড়া
স্বাধীনতা যুদ্ধে রসময় বগুড়া এলাকায় যুদ্ধ ছিল মূলত খন্ড খন্ড আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মুক্তিবাহিনী শক্রর ওপর এ ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করে। তার মধ্যে ধুনট থানা আক্রমণ রেইড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ এই যুদ্ধের মাধ্যমে শক্রর জনবল, রসদ, অস্ত্র ও গোলাবারুদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। শেরপুর হতে ধুনট পর্যন্ত পৌছাতে পাকবাহিনী যে রাস্তা ব্যবহার করত তার (ধুনট) থানা সদরে পাকবাহিনীর অবস্থান ছিল, শেরপুর-বগুড়া এবং শেরপুর-সিরাজগঞ্জ পৌছাতে এই প্রধান সড়কের বিকল্প রাস্তা খুঁজে পাওয়া ছিল বড়ই মুশকিল। সেই কারণে ধুনট যুদ্ধ কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। পাকবাহিনী যাতে থানা সদর হতে নির্বিঘ্নে কোথাও চলাচল এবং কোনো অপারেশন পরিচালনা করতে না পারে সে জন্য মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের ওপর রেইড পরিচালনা করে। পাকবাহিনীর জনবল, অস্ত্র ও গোলাবারুদের ক্ষতি সাধন করার জন্য ধুনট পুলিশ স্টেশন হানা দেয়া হয়েছিল। ধুনট থানা সদরের পুলিশ স্টেশনে পাকসেনাদের একজন মেজরের নেতৃত্বে কিছু (৭-৮) পাকসেনা, ২৮ জন পুলিশ এবং ১৫-১৬ জন রাজাকার অবস্থান করছিল। মুক্তিবাহিনী থানাটিকে রেইডের পরিকল্পনা নেয়। রেইড পরিচালনার ২ দিন পূর্বে কালাই আটা স্কুলে অবস্থান নেয়। ২ দিন রেকি করার পর জুন মাসের ১৫ তারিখে পুলিশ স্টেশনের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয় এওবস্থান নেয়। রেইড দলটিতে মোট ৩১ জন সদস্য ছিল। পুরো দলটির নেতৃত্বে ছিলেন মোঃ আঃ হান্নান এবং উপ-অধিনায়ক ছিলেন ডা. মোঃ আ. করিম। এলএমজি, এসএলআর, রাইফেল, রকেট লঞ্চার, ৩ ইঞ্চি মর্টার এবং হ্যান্ড গ্রেনেড ইত্যাদি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাত ২.৩০ মিনিটে অবস্থান নেয়। মুক্তিবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল ভোর ৪টায় আক্রমন শুরু করবে। কিন্তু রাত ৩টার দিকে একজন রাজাকার নড়াচড়ার শব্দে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান টের পেয়ে যায়। তারপর সে চিৎকার কর এক্যাম্পের সবাইকে জাগিয়ে তোলে। সঙ্গে সঙ্গেই পাহারারত সৈন্যরা ক্যাম্পের পূর্বদিকে গুলিবর্ষণ শুরু করে। তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকেই তুমুল গুলিবর্ষণ শুরু করে। পাকসেনারা প্রথম দিকে মোটামুটি প্রতিরোধ গড়ে তুললেও মুক্তিযোদ্ধারা রকেট লাঞ্চার ও মর্টার ব্যাবহার শুরু করলে পুলিশ ও রাজাকার সদস্যরা পূর্ব দিকে সরে এসে আত্মসমর্পণ করে। পাকসেনাদের কয়েকজন সদস্য বাংকার থেকে গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখে এবং অবশেষে সকাল ৭.৩০ মিনিটে ৪ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে এবং এর মধ্যে দিয়ে ক্যাম্পটির পতন ঘটে। পাকসেনাদের ৩ জন পুলিশ এবং ৬ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ৩ জন গুরুতর আহত। এটি ছিল একটি সফল অভিযান।
[৫৯৫] রিয়াজ আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত