ধলঘাট রেলসেতু অপারেশন, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ধলঘাট এলাকা ছিল অপারেশন স্থান। চট্টগ্রাম-দোহাজারি রেললাইন দিয়ে প্রতিনিয়ত রাজাকার ও পাকসেনারা রেলে করে বিভিন্ন স্টেশনে নেমে সাধারণ মানুষদেরকে অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যা করত। আগস্ট মাসের প্রথম দিকে কমান্ডার শাহ আলম ও ডেপুটি কমান্ডার উদয়ন নাগের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের লোকবল, অস্ত্রবল বিবেচনা করে সম্মুখযুদ্ধ না করে, রেললাইন উপড়ে ফেলা ও ট্রান্সপোর্ট ট্রেনের উপর আক্রমণ চালানোর সিদ্ধনাত হয়। ঠিক হয়, জনগনের সহায়তায় তাঁরা রেললাইনের পাশাপাশি যে খাল রয়েছে তার একদিকে মাটি দিয়ে ভরাট এবং খালের গতি প্রবাহ রেলসড়ক কেটে তার নিচ দিয়ে প্রবাহিত করে দেবে এবং রেল লাইন উপড়ে ফেলবে। মুক্তিযোদ্ধারা ৩ গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। একটি দল পটিয়া রেললাইনের পাশে উপস্থিত হয়। তৃতীয় গ্রুপ ধলঘাট স্টেশনে রাজাকার বা পাকসেনা থাকলে স্টেন দ্বারা ব্রাশ ফায়ার করা ও যদি রাজাকার না থাকে তা হলে একটি সিঙ্গেল শট দিবেন। তবে তৃতীয় গ্রুপটি ভুল করে ব্রাশ ফায়ার করে অথচ রাজাকার বা পাক সেনা কেউ স্টেশনে ছিল না। ২য় গ্রুপ, ৩য় গ্রুপের এই সংবাদ পাওয়ার পর আসার কথা, কিন্তু সময় অনেকক্ষণ হলেও ২য় গ্রুপ না আসায়, ৩য় গ্রুপ এসে ২য় গ্রুপকে জানায় যে, কোনো রাজাকার পাক সেনা এখানে নেই। এবার ২য় ও ৩য় গ্রুপ জনগণকে (প্রায় ২০০/২৫০ জনসাধারণ) সাথে নিয়ে ধলঘাট স্টেশনের দিকে অগ্রসর হন। সবাই মিলে প্রায় আধ কিলোমিটার রেলপথ উপড়ে ফেলেন। বেঙ্গুরা রাজাকার ক্যাম্পের রাজাকাররা রেললাইন উপড়ে ফেলার ঘটনা জানতে পেরে গুলি করতে করতে এগিয়ে আসে, ভোর ৪টা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গোলাগুলি চলে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা রেলসেতুর গার্ডার প্লাস্টিক বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেন। উদ্দেশ্য সফল হয়।
[৫৯৭] কে.এম. আহসান কবীর
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত