You dont have javascript enabled! Please enable it!

ধলঘাট হাসপাতাল অপারেশন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম জেলার ধলঘাটের বেতাগী ও দক্ষিণে চন্দনাইশ থানা অবস্থিত। ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১, ধলঘাটে অবস্থিত ‘ধলঘাট হাসপাতালে’ মুক্তিযোদ্ধারা এক অপারেশন পরিচালনা করে। তাঁদের এই অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল, ধলঘাট হাসপাতালে অত্যাচার ও নির্যাতন পরিচালনাকারী আলবদর বাহিনীর সদস্যদের হত্যা ও তাঁদের অস্ত্র হস্তগত করা। ওই দিন মুক্তিযোদ্ধা নাসির তাঁর গ্রুপের ইনফরমার মারফত খবর পান যে, আলবদর বাহিনীর একটি গ্রুপ ধলঘাট হাসপাতালে কর্মরত মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ও সহযোগী ডাক্তার বদিউর আলমকে হত্যা করার জন্য ধরে নিয়ে গেছে। এ খবরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাসির তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেন, তিনি তাঁর গ্রুপসহ এর প্রতিকারারথে এবং সম্পূর্ণ বিষয়টি অবগত হতে হাসপাতালে যাবেন। তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার আলমের দু মেয়েকে ক্রন্দরত অবস্থায় দেখতে পান। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পারেন আল বদর বাহিনী তাদের লালসা নিবৃত্তির উদ্দেশ্যে ফের এই হাসপাতালে আসবে। ফলে তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে পরিকল্পনা করেন যে, এবার এলে তাঁরা আলবদর বাহিনীকে হাসপাতালেই আক্রমণ ও হত্যা করবেন। পরিকল্পনা মাফিক মুক্তিযোদ্ধারা ডাক্তারের দুই মেয়েকে নিরাপদে পৌছে দিয়ে পর্যাপ্ত লোকবল ও অস্ত্র সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েন। এ সময় ধলঘাটের গোপন আশ্রয়স্থলে তাঁর গ্রুপসহ অবস্থানকারী ক্যাপ্টেঙ্করিমের সাথে কমান্ডার নাসির দেখা করেন। তাঁরা পরিকল্পনা করেন- মুক্তিযোদ্ধারা ৩টি পৃথক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আল বদরদের আক্রমণ করবে। গ্রুপ ৩টির নেতৃত্ব দেবেন যথাক্রমে কমান্ডার নাসির, হাবিলদার গোলাপুর রহমান ও হাবিলদার নূর আলম। এ পরিকল্পনায় গ্রুপ ৩টির অবস্থানের স্থান এবং কর্মপন্থাও নির্ধারণ করা হয়। তবে মুক্তিযোদ্ধারা যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে হাসপাতালের দিকে আসার পথেই খবর পান যে, তাঁদের পূর্বেই আল-বদর বাহিনী হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয়েছে। ফলে পূর্ব পরিকল্পনা বাদ দিয়ে নাসির গ্রুপ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে হাসপাতালের পূর্ব দিক থেকে বেতঝাড়ের ভেতর দিয়ে গুলি করতে করতে হাসপাতালের দিকে এগোতে থাকে। গুলির আওয়াজ পেয়ে আলবদর বাহিনীও হাসপাতালের ভেতর থেকে পাল্টা গুলি শুরু করে। ৫/৭ মিনিট গুলি বিনিময়ের পর আল বদর বাহিনী হাসপাতাল ত্যাগ করে পসচিম দিকের রাস্তা দিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় অপর দুই গ্রুপ আলবদর বাহিনী ওপর দুই দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। তবে কোনোরকমে আলবদর বাহিনী পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। পালানোর সময় আলবদররা ৩টি রাইফেল ও ১ টি রিভলভার ফেলে যায়। ২৮/৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা এই অপারেশনে ১টি স্টেনগান ও ২৫/২৬টি রাইফেল ব্যবহার করেন। এই অপারেশনে একজন বেসামরিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং তাঁরা শক্রুপক্ষের ৩টি রাইফেল ও ১টি রিভলভার হস্তগত করে। এই অপারেশনের ফলে মুক্তিবাহিনীর ওপর মুক্তিকামী জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পায়।
[৫৯৭] কে.এম.আহসান কবীর

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!