You dont have javascript enabled! Please enable it!

ধলপাড়ায় যুদ্ধ, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে উত্তরে অবস্থিত ঘাটাইল থানার সর্ব পূর্বে ধলাপাড়ার অবস্থান। ১৬ আগস্ট সকাল সাড়ে সাতটায় পাকিস্তানীরা বিনা বাঁধায় ধলাপড়া চৌধুরীবাড়ির ঘাট পর্যন্ত এসে নদীর উঁচু পাড় ঘেঁষে শুয়ে অবস্থান নেয়। এদিকে নদীর পূর্ব পাড়ে কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার হাবিবুর রহমানের কোম্পানি সহ ৪টি কোমাপানির প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ওঁৎ পেতে বসে থাকে। জায়গাটা নিরাপদ ভেবে শক্ররা নিচে নেমে এসে চিৎকার করে পূর্বাপারের লোকজনকে ডাকএত শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা বাঙ্কারে আর শক্র উন্মুক্ত স্থানে। শক্ররা নলের মুকেহ আসতেই হাবিব, হাকিম, গফুর ওঁ হুমায়ূন এই চার কোম্পানি কমান্ডারের এলএমজি গর্জে উঠে। অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রও গর্জে ওঠে। প্রাথমিকভাবে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির পর শক্র কিছুটা নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধে লে. কর্নেল মোক্তার মোহাম্মদ ওঁ মেজর মমিন নদী পার হতে ব্যর্থ হয়ে এক ব্যাটালিয়ন নিয়মিত সেনা ও ২০০ রাজাকার নিয়ে দুপুর সাড়ে বারটার দিকে শতাধিক হতাহত সৈন্য রেখে পিছু হটতে শুরু করে। ঐদিকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ১০ জন সঙ্গী নিয়ে শক্র সেনারা যে রাস্তা ধরে ধলাপাড়া থেকে পিছু হটে আসছিল সে রাস্তায় অবস্থান নেয়ার জন্য অগ্রসর হন। কাদের সিদ্দিকী শেওড়াবাড়ি পৌঁছার আগেই মুক্তিযোদ্ধা হাতেম শহীদ হন। কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত হয়ে শক্রসেনাদের আগমন পথে পজিশন নেন। শক্ররা চল্লিশ গজের মধ্যে আসতেই বঙ্গবীরের লাইট মেশিন গান গর্জে ওঠে। অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারাও আক্রমণ চালায় শক্র সেনা লুটিয়ে পড়ে। বহু সেনা ছত্রভঙ্গ হয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে। কিছু সংখ্যক শক্র সেনা পজিশন নিয়ে পাল্টা গুলি চালায়। বঙ্গবীরের প্রচণ্ড গুলির মুখে শক্ররা পিছু হটতে বাধ্য হয়। ১০ মিনিটের এই যুদ্ধে ৩৮ জন শক্রসেনা নিহত হয়। কাদের সিদ্দিকী এই যুদ্ধে আহত হয় একটি বুলেট তাঁর হাতের তালু ভেদ করে হাঁটুর ইঞ্চি খানেক উপরে আঘাত করে।
আগস্টের যুদ্ধে শক্রসেনারা ব্যর্থ হয়ে ৭ নভেম্বর ধলপাড়ায় পুনরায় আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করে। উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ চললে ১০ জন রাজাকার নিহত হয়। এছাড়া ৪ জন শক্র সেনা ও ৪ জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর হাতে বন্দি হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা হারুন পাক বাহিনীর হাতে বন্দি হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে হানাদার বাহিনী পিছু হটে কালিহাতিতে ফিরে যায়। পরবর্তীতে হানাদাররা বন্দি মুক্তিযোদ্ধা হারুনকে দু’জন হানাদার ও ২ জন রাজাকারের বিনিময়ে মুক্তি দেয়। এভাবে হানাদারদের সাথে মুক্তিবাহিনীর বন্দি বিনিময় হয় এবং ধলাপাড়ায় ব্যর্থতা নিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হয়ে হানাদার বাহিনীর ফিরে যেতে হয়।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!