ধর্মঘরবাজার যুদ্ধ, হবিগঞ্জ
মাধবপুর হবিগঞ্জ জেলার সর্বশেষ থানা। এরপরই শুরু হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। পূর্ব-দক্ষিণ দিকে ভারতের সীমান্তের খুবই কাছাকাছি অবস্থিত ধর্মঘরবাজার। এখানে ছিল পাকসেনাদের একটি ক্যাম্প। সংখ্যায় তাঁরা ১ কোম্পানি! আর বিপরীত দিকে ভারতের মাটিতে মুক্তিবাহিনীর নিদাই ক্যাম্প। ক্যাম্পের অধিনায়ক তৎকালীন ক্যাপ্টেন আবদুল মতিন। তিনি পরিকল্পনা করেন ধর্মঘরবাজার আক্রমণের। দিন তারিখ নির্ধারণ করা হলো। রেকির কাজও হলো সম্পন্ন সৈয়দ মিয়ার নেতৃত্বে। বাহিনীকে করা হলো প্রস্তুত। এ অপারেশনে অংশগ্রহণ করে ৩টি কোম্পানি। একটি ভারতের সেনাবাহিনীর, একটি এমএফআর, তৃতীয়টি এফএফ। ২/৩টি ক্যাম্প থেকে বাছাই করা জোয়ানদের জড়ো করা হয়েছিল। নির্দিষ্ট তারিখে প্রস্তুত সবাই। প্রয়োজনীয় অস্ত্র গোলাবারুদ তুলে নিলেন বীর যোদ্ধারা। তারপর শুরু হলো গন্তব্য পাক ক্যাম্প অভিমুখে যাত্রা। রাত তখন ৮টা। বৃষ্টি নেমেছে বেশ আগে থেকেই সেদিন। কিন্তু তাতেও দমেনি দামাল ছেলেরা। সুবেদার আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে এগিয়ে চলল সবাই। ধর্মঘরবাজারের পূর্বপাশে একটি সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়েছে মুক্তি সেনারা। আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। কিন্ত ততক্ষণে পাকিস্তানী সেনাদল মুক্তিবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে গেছে। তারা অপেক্ষা না করে আক্রমণ রচনা করে বসে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। প্রচণ্ড সে আক্রমণের ধারা। মুক্তিসেনারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকে। প্রায় ৩ মিনিট স্থায়ী এ যুদ্ধে পাকিস্তানীর ১ জন মেজরসহ ১৬ জন মারা যায় বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ৮/১০ জন নিহত হন। তবে নিহতদের প্রায় সবাই ছিলেন ভারতীয় বাহিনীর সদস্য। আধ ঘন্টা পর পাকিস্তানী বাহিনী ধর্মঘরবাজার ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। জয় হয় মুক্তিবাহিনীর। এ যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন খুরশেদ আহমদ খান, আসকির মিয়া, নূরউদ্দিন নূরুল ইসলাম ও মতি মিয়া প্রমুখ।
[৬৩] মাহফুজুর রহমান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত