দোয়ারিকা ও জয়শ্রীর যুদ্ধ, বরিশাল
ঢাকা-বরিশালের পথে শিকারপুর খেয়ার গুরুত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি। খেয়াপথ বন্ধ করতে পারলে পাকিস্তানীবাহিনীর ঢাকার পথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই বরিশালের উজিরপুর ও বাবুগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা বার বার শিকারপুর ও দোয়ারিকায় অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনাদের আক্রমণ করে। জুন মাস হতে আগষ্ট পর্যন্ত আবুল কাসেম, মজিদ খাঁ ও রওন শরীফ দোয়ারিকা কয়েকবার আক্রমণ করে। সেপ্টেম্বর হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত রওন শরীফ, এমএ অদুদ, মজিদ খাঁর নেতৃত্বে কয়েকবার আক্রমণ করা হয় এবং ফেরী ডুবিয়ে দেয়া হয়। ৩ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় করপরাল রওন শরীফ দোয়ারিকা আক্রমণ করে এবং দুপুর ১টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা এ সংঘর্ষে অংশ নেয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নায়েক আবদুর রব, হাবিলদার আবুল হোসেন, রশিদ, রাজ্জাক, সিপাহী ওহাব প্রমুখ। এ যুদ্ধে হাবিলদার আবুল হোসেন ও রাকুদিয়া কলেজের ছাত্র রশীদ শহীদ হন। যুদ্ধে কৃতিত্বের জন্য রওন শরীফ বীর প্রতীক উপাধি লাভ এবং স্বাধীনতার পর ফ্লাইট সাজেন্ট পদে উত্তীর্ণ হন। চাখার কলেজের ভিপি হাবিবুর রহমান কিছুদিন উজিরপুর থানা কমান্ডার থাকার পর এমএ অদুদ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অদুদের নেতৃত্বে শিকারপুর ফেরী ডুবিয়ে দেয়া হয়। তার পর তিনি উজিরপুর থানা আক্রমণ করে অস্ত্র ছিনিয়ে নেন। জয়শ্রীর পুলটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং সেকারণে পাকিস্তানীবাহিনী পুলটি পাহারা দিত। ক্যাপ্টেন কাহারের নেতৃত্বে ২৮ নভেম্বর গৈরনদী হতে পাকিস্তানীসেনারা জীপে আটিপাড়া অপারেশনে যায়। তারা জীপগুলো জয়শ্রীর পুলের নিকট রেখে যায়। ফেরার পথে অদুদ, রওন শরীফ, নুরু, শাহজাহান, আবদুর রব, মতিন, মোতালেব, আউয়াল প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানীসেনাদের আক্রমণ করেন। এ যুদ্ধে জীপগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অনেকে নিহত হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান শহীদ হন। অদুদ ও নুরু কমান্ডার বাটাজোড় আক্রমণ করে পশ্চিমা পুলিশ ও রাজাকারদের নিকট হতে অস্ত্র উদ্ধার করেন। আগরপুর, বামরাইল, হাবিবপুর ও কালিজিরায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল।
[৫৭] সিরাজ উদ্দীন আহমদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত