দুলালপুর যুদ্ধ, নরসিংদী
দুলালপুর ইউনিয়নের যুদ্ধ স্বাধীনতার শেষদিকে হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মজনু মৃধা। পাক হানাদার বাহিনী মনোহরদী থানা-হাতিরদিয়া বাজার হয়ে গড়বাড়ি বাজারের মধ্য দিয়ে দুলালপুর মোড়ে আসার সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালান। এতে নরসিংদী প্রত্যাবর্তনকারী পাক সামরিক বাহিনী দিশেহারা হয়ে যায়। প্রথম আক্রমণ সামাল দিতে দিতে অনেক পাকসৈন্য আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের এল.এম.জির ফায়ারে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে; কিন্ত কয়েক ঘন্টার মধ্যেই একত্র হয়ে ভারি অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে পাল্টা আঘাত হানে। আর বেশিক্ষণ টিকে থাকা সম্ভবপর নয় বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসারণ করে দরগার বন্দ এবং চিনারদী বিলের ভেতর দিয়ে লাখপুর শিমুলিয়া গ্রামে আশ্রয় নেন। এই লড়াইয়ে মুক্তযোদ্ধাদের পক্ষে তেমন হতাহত হয়নি। পাকসেনারা বিকেলের মধ্যেই নরসিংদী ফিরে যায়। শিবপুরের মুক্তিযোদ্ধারা অন্যান্য জায়গার লড়াইয়েও বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ব্রাহ্মণদী বিদ্যাওয় আক্রমণ, চন্দনদিয়া যুদ্ধ, হাঁটুভাঙ্গা যুদ্ধ, চনখোলা যুদ্ধম ছায়রচর যুদ্ধে কয়েকজন পাক হানাদার নিহত হয়। এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পাকিস্তানীরা অনেক নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে। গাসদিয়া যুদ্ধে অনেক বাঙালিকে হত্যা করে পাকসেনারা। এছাড়া ‘অপারেশন কাটিয়াদী’তে কাটিয়াদীর কুখ্যাত ডাকাত রহমতকে জনসাধারণের প্রকাশ্য রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আমিরগঞ্জ রেল সেতু আক্রমণ, ইটনা সরদার বাড়ি ঘাঁটি আক্রমণ, জিনারদী ঘাঁটি আক্রমণ এবং মজনু মৃধার নেতৃত্বে একটি ছোট্ট দুঃসাহসী দল চরনগরদীর তিতাস গ্যাসের সাবস্টেশনটি এক্সপ্লোসিভ দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার দুঃসাহসিক অভিযান চালায়।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত