You dont have javascript enabled! Please enable it!

দেউলায় চৌধুরী বাড়িতে অ্যাম্বুশ, ভোলা

১৫ সেপ্টেম্বর দেউলা ইউনিয়নের এক চৌকিদার দেউলা ক্যাম্পে কয়জন মুক্তিযোদ্ধা আছে, কী অস্ত্র আছে এসব খবর পাচারের উদ্দেশ্যে খবরাখবর সংগ্রহ করছিল। ওই খবর ছিদ্দিক গ্রুপের কাছে সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসে। দ্রুত পরামর্শ করে চৌকিদারকে ধরা হয় এবং এক পর্যায়ে সে সিকার করে যে বোরহানউদ্দিন থানা থেকে তাকে রাজাক্র কমান্ডার পাঠিয়েছে এই তথ্য সংগ্র করার জন্য। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে হত্যা করে। এই খবর বোরহানউদ্দিন থানায় পোউছলে পরদিন সকালে একজন এসআইসহ ১৫ জন রাজাক্রের একটি দল দৌলার তৎকালীন চেয়ারাম্যান নসু মিয়া তালিকদারের সঙ্গে ওই বাড়িতে দেখা করতে আসে। ইতিমধ্যে নজিব খবর নিয়ে আসে, চৌধুরী বাড়ির শাহজাহান এসআইসহ রাজাকারদের সেই গ্রুপকে চৌধুরী বাড়িতে দুপুরে খাবার ব্যবস্থা করেছে। খবর শুনে দেউলা ক্যাম্পের সবাই অতর্কিত হামলা চালিয়ে রাজাকারদের অস্ত্র-গুলি দখল করার এক দুঃসাহসিক পরিকল্পনা নেয়। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিক করা হয় যতদূর সম্ভব গোলাগুলি এড়িয়ে অতর্কিতে হামলা চালানো হবে। মূল অস্ত্র থাকবে হাতবোমা আর গ্রেনেড। সেই বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে সবাই অপেক্ষা করতে থাকে। দিন-দুপুরে এমনভাবে সবাই বসে আছে যাতে কেউ দেখলে মনে হবে কোনো সালিস অথবা আলোচনা চলছে। বাড়ির ভেতরের সব খবরাখবর কিছুক্ষণ পরপর নজিব দিয়ে যাচ্ছে। আক্রমণের একেবারে অন্তিম সময়টি হলো, যখন সবাই হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসবে ঠিক তখন। অপেক্ষার পালা শেষ, নজিব দৌড়ে এসে খবর দিল দোতলায় সবাইকে খাবার দেয়া হয়েছে। সবাই খাওয়া শুরু করেছে। ওই বাড়িতে এই গ্রুপের সবারই বিভিন্ন সময়ে আসা-যাওয়া ছিল। তাই বিনা দ্বিধায় কোনো দিক দিয়ে দোতলায় উঠতে হবে ইতাদি জানা থাকায় দোতলায় উঠতে কোনো বেগ পেতে হয়নি। আমির হোসেন, গিয়াস, সামসু হাতে হায়ন্ড গ্রেনেডসহ দৌড়ে দোতলায় ওঠে, সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির উঠোনে দুটি হাতবোমা ফাটানো হয়। এত দ্রুত ঘটনাটি ঘটে যে রাজাকার গ্রুপ ও এসআই তখনও খাবার টেবিল থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়বে তারও কোনো সুযোগ পায়নি। সামসু চিৎকার করে বলে, যদি কোনো রকম প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয় তবে হ্যান্ড গ্রেনেড দিয়ে শেষ করে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে ছিদ্দিক, নাসির, কাঞ্চন, আলম চৌকিদার, সানু, আচমত, জেবল ও মকছু ভাই দোতলায় উঠে আসে। বিনা রক্তপাতে শাহজাহানের মধ্যস্থতায় রাজাকাররা তাঁদের অস্ত্র সমর্পণ করে। এই গ্রুপের কাছ থেকে মোত ১৩টি রাইফেল ও ২৬০টি গুলি দখল করা হয়। রাজাকার গ্রুপটি ও এসআইকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং কারো নাম যেন পাকবাহিনীর কাছে প্রকাশ না করে তার ওয়াদা করানো হয়। সেদিনের এই অভাবনীয় সাফল্যে একদিকে যেমন অস্ত্র সংগ্রহের এক বিরাট বিজয় অন্যদিকে দেউলাতে ওই গ্রুপের থাকাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
[৬৪] মাহফুজুর রহমান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!