You dont have javascript enabled! Please enable it!

দুধলীতে যুদ্ধ, খুলনা

পিরোজপুর যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনী আরো দক্ষিণে নেমে যায়; কোন এলাকা বা জায়গা দখল করা মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য ছিল না। বরং পাকহানাদার বাহিনীকে সর্বদা ত্রাসে রাখা ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। তারা উপলব্ধি করে বাঙালিরা তাদের কোন অবস্থাতেই ছাড়বে না। তারা বাংলাদেশ স্বাধীন করবেই। তাই পিরোজপুর প্রতিরক্ষা ঘাঁটি পরিত্যাগ করে সুন্দরবন এলাকার দিকে কয়েক মাইল নেমে যায় এবং আর একটি শক্ত প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপন করে। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এটাও ছিল হানাদার বাহিনীর প্রতি মুক্তিবাহিনীর একটি আমন্ত্রণ এবং টোপ। এবার তারাও বুঝে যায়। মুক্তিবাহিনীর সদস্যরাও আরো অধিক সতর্কতা অবলম্বন করে অপেক্ষায় থাকে।
অধিনায়ক ওয়াহিদ, তার সঙ্গী হামিদ, হাকিম, আয়ূব আলী, আহসান, লাকী, মুকুল, রজব আলী, আশরাফ, আকবর, মোকছেদ, অজিয়ার, আলাউদ্দিন, জাহিদসহ প্রায় ৪০/৪৫ জনের দল পাকহানাদারবাহিনীর চরিত্র খুব ভালভাবেই জানে। দুধলীতে তারা আসবেই আসবে। কাজেই প্রস্তুতি নেয়া হল সেই ভাবে। চারদিকে মুক্তিবাহিনীর গোয়েন্দারা ঘুরে ফিরছে প্রতি মিনিটে। আছে গ্রামবাসী, যারা কখনও কখনও ঝুঁকি নিয়ে প্রাণ দিয়েও মুক্তিবাহিনীকে খবর দেয়, আর দেবে না-ই বা কেন? যুদ্ধ করছে তো তাদের ছেলেরাই-স্বাধীনতার লক্ষ্যে, তাদের দেশ শক্র মুক্তি লক্ষ্যে। মার খাওয়া বাঘের মতো কখনও যে ওরা কিভাবে কি গতিতে আসবে তা কেউ জানে না।
অবশেষে মুক্তিবাহিনীর সাহসী গেরিলারাও অবস্থান নিল বিভিন্ন ট্রেঞ্চে। না এবার আর কেউ কাউকে তেমন এম্বুশ আক্রমণের সুযোগ পেল না, তাই শুরু হল মুখোমুখি যুদ্ধ। অধিনায়ক ঘড়ি দেখলেন, রাত তখন ১২-৩০ মিনিট। ঘন্টাকানেকের যুদ্ধের পর কেউ কাউকে পরাস্ত করতে পারে না। পাকসেনারও অগ্রসর হয় না। আবার মুক্তিবাহিনী বেশ নিকটে অবস্থান করছে। এমন সময় সকলকে অনাক করে দিয়ে পাকবাহিনী অধিনায়ক উর্দুতে বলে উঠলেন, ‘আরে দোস্ত, কেন খামাকা যুদ্ধ, কেন ভারতের হিন্দুদের দালালী, এসো না আমরা এক সাথে দেশ গড়ি’।
এ আমন্ত্রণ শুনে মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক জবাব দেয়, ‘ আরে ইয়ার, আমরা তো তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে চাই না, তোমরা কেন আমাদের উপর হামলা করছ? তোমরা কেন এখানে এভাবে আমাদের এই অজ পাড়াগাঁয়ে এসে জীবন দেবে ? তার চেয়ে তোমরা চলে যাও, আমরা স্বাধীনভাবে বাস করি। আমরা তো তোমাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছি না। জবাব শেষ হওয়ার পূর্বেই পাকঅধিনায়ক নোংরা ভাষায় গালাগালি করে, ‘হারামজাদা ভারতের দালালদের শেষ কর, গুলি করে খতম করে দাও পাক দুশমনদের’। গর্জে ওঠে হাতিয়ার। ওয়াহিদও কম যায় না, নির্দেশ দেয়-হারামী জল্লাদদের আর ফিরে যেতে দেয়া হবে না। করো গুলি, জবাব দেয় মুক্তিবাহিনী। মুক্তিবাহিনী ১ টা গুলি করলে ওরা করে ১০০টা। পাঁচ মিনিট যুদ্ধ হয় আবার উর্দুতে আহবান আসে, ‘ ভাই আমরা ক্লান্ত, তোমাদের মেহমান, দাও না কিছু খাবার পানি, গুলি কর কেন ?
‘যুদ্ধময়দান ত্যাগ কর, অস্ত্র হাতে এসব চলে না, আত্মসমর্পণ কর, তবে যা চাও তাই দেব’। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে জবাব দেয়া হয়।
এসব কথাবার্তার আড়ালে পাকসেনারা কৌশলে ঘেরাও করে ধরে ফেলার বেশ কয়েকটি সুযোগ নেয়, কিন্ত মুক্তিবাহিনীর কড়া সতর্কতার মধ্যে সেসব ব্যর্থ হয়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!