You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.10 | দশদোনা অ্যাম্বুশ, নরসিংদী - সংগ্রামের নোটবুক

দশদোনা অ্যাম্বুশ, নরসিংদী

দশদোনা গ্রামটি নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার শুকন্দী ইউনিয়নের একটি গ্রাম। এই গ্রামেই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা একটি সফল অ্যাম্বুশ পরিচালনা করে।
উক্ত ঘটনাটি ঘটেছিল ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। দশদোনা গ্রামটি হাতিরদিয়া থেকে আনুমানিক ২ কি. মি. উত্তরে এবং মনোহরদী থেকে ৩ কি. মি. দক্ষিণে অবস্থিত। শিবপুর-মনোহরদী আধাপাকা সড়কে হাতিবদিয়া বাজার হয়ে এই গ্রামের মধ্য দিয়ে মনোহরদী পৌঁছেছে। এই গ্রামের পশ্চিম দিকে লাক্ষা নদী উত্তর-দক্ষিনে প্রবাহিত। হাতিরদিয়া বাস স্ট্যান্ডে হতে হাতিরদিয়া বাজারের মধ্য দিয়ে একটি রাস্তা উত্তর দিকে নারান্দি বাস স্ট্যান্ডে গিয়েছে। এই রাস্তায়ই পাকিস্তানী রশদ বহরের উপর অ্যাম্বুশ করা হয়।
ক. হাতিরদিয়া হতে মনোহরদীর মধ্যকার এই রাস্তা দিয়েই পাকিস্তানীরা শিবপুর থেকে মনোহরদীতে তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র, রশদ ও লোকজন পরিবহন করত। রাস্তা নিরাপদ রাখার জন্য তারা প্রায়ই ফাইটিং পেট্রোল বের করত। একই সাথে তারা রাস্তার দু’পাশের এলাকায় অত্যাচার নির্যাতনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে ভীতির সৃষ্টি করত যাতে সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো রকম সহায়তা করতে সাহস না পায়। এলাকার যুবক ছেলদের ধরে ক্যাম্পে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন শেষে অনেক ক্ষেত্রেই মেরে ফেলা হত।
খ. একদা ফাইটিং পেট্রোল এর সময় শক্রর একটি দল দশদোনা গ্রামের নাজিম উদ্দিন সরকার নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে ধরে নিয়ে যায়। এই ঘটনা সাধারণ গ্রামবাসী ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মনে পাকিস্তানীদের উপর প্রতিশোধ স্পৃহাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। মুক্তিবাহিনী কমান্ডার হিসেবে তখন কর্মরত ছিলেন ইপিআর এর নায়েক আকমল হোসেন (কুমিল্লা)। মনোহরদী থানার মুক্তিবাহিনী কমান্ডার তাঁর লোকজন নিয়ে পরিকল্পিতভাবে শক্রর নিকট থেকে নাজিম সরকারকে উদ্ধার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনা অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, পাকিস্তানী কোনো টহল দল অথবা যানবাহন যখনই ক্যাম্প থেকে বের হবে তখনই তাঁদের উপর অ্যাম্বুশ করা হবে। এই সিদ্ধান্তের পর মুক্তিযোদ্ধারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
গ. ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। সকালবেলা হাতিরদিয়া বাজারের ফাইজ উদ্দিন বেপারী মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদ দেয় যে, শক্রর রেশন বহনকারী গাড়িবহর মনোহরদী যাবে। উক্ত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আকমল হোসেন শক্রর গাড়িবহরে অ্যাম্বুশ করবেন বলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুসারে ২৫-৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা দশদোনা গ্রামে রাস্তার উভয় পাশে ফাঁদ পেতে অবস্থান গ্রহণ করে এবং গাড়ি বহর আগমনের অপেক্ষায় থাকে। আনুমানিক দুপুর সাড়ে বারোটায় পাক সেনাদের গাড়িবহর তাঁদের অ্যাম্বুশ এলাকায় প্রবেশের সাথে সাথে পরিকল্পিতভাবে রাস্তার উভয়পার্শ্ব হতে শক্রর উপর আক্রমণ করা হয়। এরূপ আচমকা আক্রমণে পাকসেনারা হতচকিত হয়ে পড়ে। উপায়ন্তর না দেখে তারাও পাল্টা ফায়ার করতে শুরু করে। এভাবে প্রায় ০৮-১০ মিনিট উভয় পক্ষের গোলাগুলি চলে।
এই যুদ্ধে কোনরূপ ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মুক্তিবাহিনী জয় লাভ করে। পক্ষান্তরে শক্রপক্ষের ২ জন সেনা নিহত ও ৫ জন আহত হয়। অবশিষ্ট পাকসেনারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত