দাকোপ থানা আক্রমণ, খুলনা
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে দাকোপ থানার মুসলিম লীগ, পিস কিমিটি প্রভৃতি পাকিস্তান সমর্থনকারীদের তৎপরতা লক্ষ করা যায়। এ সময় তারা পুলিশের সহযোগিতায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ঘর-বাড়ি লুট করতে থাকে। এ অবস্থায় এখানে নকশাল বাহিনীর আবির্ভাব ঘটে। এর নেতৃত্বে ছিল চালনার আলাউদ্দিন মোল্লা। এর সাথে যোগ দেয় ডুমুরিয়ার ফারুক হোসেন। এরা এলাকার দরিদ্র জনসাধারণকে জমি ও অন্যান্য সম্পদ সমানভাবে ভাগ করে দেয়ার প্রলোভনে পক্ষ নেয়। ফলে তারা সংখ্যায় বেশি হয়ে একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়। আলাউদ্দিন প্রথমেই তার চাচা পীরালি মোল্লা ও মোবারক মোল্লাকে হত্যা করে। এরা উভয়েই ছিলেন বিত্তশালী। এরপর নকশালরা একে একে স্থানীয় বিত্তশালী রহমান খাঁ, আমীর আলী শেখ, মোহাম্মদ শেখকে হত্যা করে। নিহতদের সকলেই মুসলিম লীগের সমর্থক ছিল। নকশাল বাহিনীর এ তৎপরতায় মুসলিম লীগ ও পিস কমিটির লোকদের লুন্ঠন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় খুলনার সামরিক কতৃপক্ষের নির্দেশে দাকোপ থানার নকশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে উঠে। কিন্ত পুলিশের একটি দলের উপর ওঁৎ পেতে থাকা নকশাল সদস্যরা আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে দারোগাসহ ৬ জন পুলিশকে হত্যা করে তাঁদের রাইফেল হস্তগত করে। এতে থানার পুলিশ সদস্যরাও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তারা থানা এলাকা ত্যাগ করে চালনা বাজারে একটি পরিত্যাক্ত ভবনে আশ্রয় নিয়ে আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে থাকে। ফলে স্থানীয় লোকজন বিশেষ করে মুসলিম লীগ সমর্থক আতিয়ার মোল্লা, সায়েদুল হক, দীন মোহাম্মদ মোল্লা, কাজী মকবুল হোসেন এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক সিরাজুল ইসলাম, করমুদ্দিন, নাজিমউদ্দিনসহ এলাকার শতাধিক লোক খুলনা শহরে গিয়ে সবুর খান ও মওলানা ইউসুফের সাথে দেখা করে নিরাপত্তা দাবী জানায়। দাকোপের পানখালী ক্যাম্পের রাজাকার কমান্ডার আতিয়ার মোল্লা গবেষকের সাথে এর সাক্ষাতকারে জানায় যে, তাঁদের নিরাপত্তা দাবীর প্রেক্ষিতে মওলানা ইউসুফ তাদেরকে সেনা অভিযানের চেয়ে নিজেদেরকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় এলাকায় অবস্থান করার পরামর্শ দেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সেনা অভিযানের পর নকশালরা আবার হামলা চালাবে এবং এলাকা জ্বালিয়ে দেবে। তাই তারা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিতে সম্মত হয় এবং খুলনায় প্রশিক্ষণ নিয়ে জুন মাসে চালনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে অবস্থান নেয়। তাদের আগমনের পর দাকোপে নকশাল বাহিনীর তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায় ও দাকোপের উপর রাজাকার বাহিনীর একচেটিয়া কতৃত্ব প্রতিষ্টিত হয় বলে রাজাকার কমান্ডার আতিয়ার মোল্লার দাবী।
[৯২] মোল্লা আমীর হোসেন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত