You dont have javascript enabled! Please enable it!

দালাল নিধন অভিযান, ফরিদপুর

৩০ এপ্রিল লুটপাট ও পাকসেনার সঙ্গে সহযোগিতার জন্য মুক্তিযাদ্ধোরা চরমাহেদির আবদুল ওদুদ মৌলভীকে গুলি করে হত্যা করে। এটাই ছিল ফরিদপুরে প্রথম দালাল নিধন। জাফর হত্যা: নগরকান্দার রাজাকার আবু জাফর চাদহাট যুদ্ধে জনতার হাতে ধরা পড়ে । জনতার রুদ্ররোষে বল্লম ও সড়কির আঘাতে আঘাতে তার মৃত্যু হয় এবং তার লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হলে হাজার হাজার নারী-পুরুষ তা দেখতে ভিড় করে এবং অনেকেই থুথু ছিটিয়ে ঘৃণা প্রকাশ করে। মুক্তিযাদ্ধোরা বিভিন্ন সময় পাকহানাদারদের দোসর নগরকান্দার জুঙ্গর্দী গ্রামের আয়নাল, আজলপট্টির নাজিমুদ্দিন চেয়ারম্যান, নওপাড়া গায়োলদীর আলী মাহোম্মদ খান, দেয়ালীকান্দার পেলু ফকিরকে মুক্তিযাদ্ধোরা গুলি করে হত্যা করে যার ফলে মুক্তিযাদ্ধোদের এলাকায় স্বাধীনভাবে চলাচলের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। একই থানার দুলাডাঙ্গীতে লুটপাটের পরপর ঐ গ্রামের বিশ্বনাথ ঠাকুরতা মাধবচন্দ্র, দুখাইকে (গায়োলচামট) হত্যার দায়ে মুক্তিযাদ্ধোরা আমিন শেখ ও কাদের শেখকে গুলি করে হত্যা করায় তা বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে আলািেড়ত হয়। ফলে অত্র এলাকাসহ নগরকান্দা, ভাঙ্গা ও সদরপুরের দালালদের অপতৎপরতা অনেকাংশে কমে যায়। মাওলানা হায়দার হত্যা: আলফাডাঙ্গা থানার রাজাকার ও পাকবাহিনীর দোসর মাওলানা আলী হায়দার (পিতা: মাওলানা আবদুল মান্নান মোস্তÍান, গ্রাম: কুসুমদি) এলাকায় রাজাকার সংগঠন গড়ে তালোর উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের বিভিন্নরকম হুমকি দিতে থাকে। ১০ মে মাওলানা হায়দার পার্শ্ববর্তী মালা গ্রামে এসে যুবকদের হুমকি প্রদর্শন করে এবং রাজাকার বাহিনীতে যাগে দেয়ার কথা বলে। তখন স্থানীয় যুবকরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধরে, জবাই করে । এ ঘঁনার পর এই দিন বিকেলে পাকসেনারা এসে আসাদুজ্জামানসহ ৭/৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মুক্তিযাদ্ধোরা আলফাডাঙ্গা শান্তি কমিটির সদস্য আবদুর বারী মিয়া, উকিল শেখ (কুসুমদি) এবং রুম ফকিরকেও (কুসুমদি) দালালি লুটপাটের অভিযােেগ হত্যা করে। তালমায় রাজাকার নিধন: নগরকান্দা থানার তালমা বাজারে কালা সাহার পাট গুদামে শান্তি কমিটির অফিস ছিল । ওরা হাটের ইজারা তুলে ভাগ-বটোয়ারা করে নিতো। ২৪ জুন সন্ধ্যায় শান্তি কমিটির সদস্য ও দালালরা গোপন পরামর্শের জন্য একত্রিত হয়। সন্ধ্যায় মুক্তিযাদ্ধোরা শুদাম ঘর ঘিরে ফেলে। তারপর স্টেন দিয়ে ব্রাশফায়ার করে। এতে আটজন দালাল একসঙ্গে লুটিয়ে পড়ে । নিহত দালালরা হলাে (১) মাহে-মৃধা-৫০, পিতা কোরবান মৃধা, তালমা, (২) ইউনুস মৃধা-২০, পিতা-হামিদ মৃধা, তালমা, (৩) দলিল উদ্দিন আহমেদ-৫০, পিতা-নাজিমউদ্দিন আহমেদ, তালমা, (৪) আবদুল গফুর সর্দার ৪৫, পিতা-রাসেদ সর্দার, শাকপালদিয়া, (৫) নিতাই মন্ডল-৪০, পিতা-অজ্ঞাত, মানিকদী, (৬) বাদশা খন্দকার-৫০, পিতা-আফসার উদ্দিন খন্দকার, ফুলসুতী, (৭) হাতেম-২৫, পিতা-অজ্ঞাত, কোনাগ্রাম ও (৮) জামাল উদ্দিন সিকদার, পিতা কোহেলউদ্দিন সিকদার, তালমা। ঐ অপারেশনে ৩০ জন মুক্তিযাদ্ধো অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আলতাফ খান, জাফর, সাহজাহান, হানিফ মাতুব্বর প্রমুখ। এ ঘটনায় ঘাতক দালালরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের স্বাভাবিক। চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কোটন হত্যা: কাটন বাহিনীর অত্যাচারে জনগণ অতিষ্ট হয়ে ওঠে। তখন মুক্তিযাদ্ধোরা মাহোম্মদপুরের জাঙ্গালিয়া গ্রাম থেকে কোটন ও তার দুই সহযাগেী ময়নার কানা জাফর ও চন্দনী গুনবাহারের মজিবর রহমানকে হত্যা করে। মাহোম্মদপুরের মুক্তিযাদ্ধো সিদ্দিক বিশ্বাসের সহায়তায় ঐ অপারেশনে বায়োলমারীর তবিবর মাস্টার তাজোম, আকবর, সালাম প্রমুখ। অংশগ্রহণ করেন । এরপর কোটন বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কোটনের একজন সহযাগী বায়োলমারীর কাদিরদী বাজারে গণপিটুনিতে নিহত হয় । বাদশা হত্যা: হাজীগঞ্জের বাদশা ছিল রাজাকার কমান্ডার । লুটপাট, নারী ধর্ষণ, মুক্তিযাদ্ধোদের ধরিয়ে দেয়া, পাকবাহিনীকে পথ দেখিয়ে আনা ইত্যাদি অপকর্মের অভিযােেগ মুক্তিযাদ্ধো কমান্ডার হাবিবুর রহমান ফরমানের গ্রুপ তাকে হত্যা করে। রাজ্জাক মিয়া হত্যা: কতুবদিয়া ক্যাম্পে মুক্তিযাদ্ধোদের কাছে খবর এলো, বায়োলমারী থানার চাদপুর ইউনিয়নের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক মিয়া কর্তৃক রা¯া মেরামত করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে তাকে রাস্তা মেরামত না করার জন্যে সতর্ক করে দেয়া হয় । সবার আশঙ্কা ছিল, ঐ রাস্তায় পাকসেনা এসে বায়োলমারীনগরকান্দা থানার সংযাগেস্থলে কতুবদিয়া মুক্তিযাদ্ধো কাম্পে হামলা চালাতে পারে। তাই চাঁদপুর ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক মিয়া ও তার সহযাগেী বাহিরদিয়ার আবেদ হাজীকে মুক্তিযযাদ্ধারা হত্যা করে । আজিমুদ্দিন চেয়ারম্যান হত্যা: মুক্তিযাদ্ধোরা লুটপাটসহ বিভিন্ন অপকর্মের জন্য মধুখালী থানার গাজনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও তৎকালীন বালিয়াকান্দি থানার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আজিমুদ্দিনের মৃত্যুদন্ড ঘাষেণা করে এবং তা কার্যকর করা হয় । লালচান ও সাজাহান মাস্টার হত্যা: ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই কুখ্যাত রাজাকার। লালচান ও সাজাহান মাস্টার মুন্সিবাজারে জনতার হাতে ধৃত হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মুক্তিযাদ্ধো কমান্ডার আজিজ মোল্লা অন্য মুক্তিযাদ্ধো কমান্ডারদের সঙ্গে আলাচেনা করে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদন্ড ঘাষেণা করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর করা হয়। দালাল নিধনের পাশাপাশি এলাকার শন্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের স্বার্থে চোর-ডাকতদেরও মুক্তিযাদ্ধোরা হত্যা করে। মে-জুনে ডাকাতি ও লুটপাটের অভিযােেগ বায়োলমারী থানার শুনদি গ্রামের জয়নাল নামক এক ব্যাক্তিকে হত্যা করে। নগরকান্দা থানার নকুলহাটি গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযাগে উত্থাপিত হলে মুক্তিযাদ্ধোরা তাকে ধরে এনে হত্যা করে।
[১৫] আবু সাঈদ খান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!