ত্রিমোহনীর যুদ্ধ, গাইবান্ধা
গাইবান্ধা জেলার এই যুদ্ধ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর অন্যতম বড় যুদ্ধ। এই যুদ্ধ হয় ২৪ অক্টোবর। ত্রিমোহনী বোনারপাড়া থেকে তিন মেইল পশ্চিমে। বোনারপাড়া মুক্ত করার উদ্দেশ্যে রোস্তম কোম্পানী ২৩ অক্টোবর কোম্পানীর হেড কোয়ার্টার স্থাপন করে পশ্চিম রাঘবপুরের মমতাজ মেম্বারের বাড়ীতে। তিন দিক থেকে ২৬ অক্টোবর বোনারপাড়া আক্রমণের প্ল্যান করা হয়। সেজন্য একটি দলকে বোনারপাড়ার পূর্বে তেলিয়ান গ্রামে, একটি দলকে ত্রিমোহনীর পশ্চিমে তালুক সোনাইডাঙ্গা গ্রামে এবং একটি দল থাকে পশ্চিমে রাঘবপুরে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর এই প্রস্তুতির কথা পাকবাহিনী জেনে ফেলে। স্থানীয় এক দালাল পাকবাহিনীর বোনারপাড়া ক্যাম্পে খবরটী পৌঁছে দেয়। ফলে মুক্তিবাহিনীর নির্ধারিত দিনের ২ দিন আগেই ২৪ অক্টোবর পাক বাহিনী তিনদিক থেকে মুক্তিবাহিনীর তালুক সোনাডাঙ্গার হাইড আউটের উপর আক্রমণ করে বসে। কিন্তু মুক্তিবাহিনী দল ঐ অবস্থান পরিবর্তন করে ত্রিমোহনী ঘাটে চলে আসে। সেখানেও পাক বাহিনী আক্রমণ পরিচালনা করে। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। এক পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর গুলী শেষ হয়ে যায়। তখন তারা পিছু হটে। পিছু হটার সময় মুক্তিবাহিনীর ১২ জন যোদ্ধা শহীদ হন এবং আহত হন ৭ জন। পক্ষান্তরে হানাদার ২১ জন নিহত হয় অনেকেই আহত হয়। শাহাদতবরণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের ১২ জনের মধ্যে ৫ জন হিন্দু ধর্মালম্বী ছিলেন। ১২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামঃ (১) শহীদুল্লাহ, ফুলছড়ি থানা, (২) হাবিবুর রহমান, ফুলছড়ি থানা, (৩) আনছার আলী, সাঘাটা থানা, (৪) আব্দুল হাই, সাগাটা থানা, (৫) হামিদুল হক মধু, গাইবান্ধা থানা, (৬) হাবিবুর রহমান, পাবনা, (৭) আব্দুল হাই, হাতিবান্ধা থানা, (৮) বোচারাম দাস, হাতিবান্দা থানা, (৯) ধনঞ্জয়, হাতিবান্ধা থানা, (১০) প্রভাত চন্দ্র, হাতিবান্ধা থানা’। শহীদদের একজনের মৃতদেহ তার আত্মীয়-স্বজন নিজ গ্রাম মতরপাড়ায় দাফন করে। অবশিষ্ট ১১ জনকে ত্রিমোহনীর পার্শ্ববর্তী দলদলিয়া গ্রামে দাফন করা হয়। হিন্দু পাঁচজনের পাশাপাশি এক জায়গায় মুসলমান ছয়জনকে একটু দূরে এক জায়গায় পাশাপাশি কবর দেয়া হয়। এই কবরগুলি পরবর্তীতে পাকা করা হয়েছে।
(৫৮০) ড. মোঃ মাহবুবর রহমান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত