You dont have javascript enabled! Please enable it!

ত্রিশালের যুদ্ধ, দিনাজপুর

দিনাজপুর জেলার সদর থানার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ত্রিশাল অবস্থিত। এখানে পাকিস্তানীদের একটি ক্যাম্প ছিল। ক্যাম্পটি একটি বড় পুকুরপাড়ে অবস্থিত। পুকুরপাড়ের চাওরদিকে বাঙ্কার। ক্যাম্পের সামনে চারশ গজ দূরে আত্রাই নদী। নদীটিই ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত নির্ধারণ রেখা। নদীর পাড় ঘেঁষে সমান্তরালভাবে চলে গেছে ডাঙ্গারহাট-বালুরঘাট পাকা রাস্তা। ত্রিশাল থেকে দক্ষিণ-পূর্বে কোণে অবস্থিত ডাঙ্গারহাট বাজার। বাজারের ওপারে আত্রাই নদীর পাড়ে অবস্থিত শক্রর সীমান্ত ফাঁড়ি। ত্রিশাল ক্যাম্পের উত্তর দিক দিয়ে চলে গেছে দিনাজপুর-ফুলবাড়ী পাকা সড়ক। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ। সকাল থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য সরঞ্জামের হিসেবপত্র নিয়ে ব্যাস্ত আছেন সব মুক্তিযোদ্ধা। বেলা নয়টার সময় ক্যাপ্টেনের তাঁবুতে কমান্ডার এটিএম হামিদুল হোসেন তারেকের ডাক পরল। তাঁবুতে ঢুকেই দেখতে পেলেন আরো তিনজন সেনাবাহিনীর অফিসার বসে আছেন। ক্যাপ্টেন থাপা সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং পূর্বের অপারেশন সম্বন্ধে ওদের ব্যাখ্যা করলনে। তারপর তিনি যা বললেন তা হলো আর ভেতরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ একটি স্পেশাল অপারেশন করতে হবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায়। আগামীকাল দল বাছাই শুরু হবে এবং ওই অপারেশনে প্রায় দেড়শ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রয়োজন হবে। সেই রাতেই আবার ডাক পড়ল ক্যাপ্টেন থাপার তাঁবুতে। রাত সাড়ে তিনটা। সমাবেশ এলাকা থেলে ওরা রওয়ানা দিল বিন্যাসভূমির উদ্দেশ্যে। রাত সাড়ে চারটার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা বিন্যাসভূমিতে পৌঁছে গেলেন। তৎপরভাবে সবাই এক লাইনে, যাকে বলে অ্যাসল্ট লাইনে দাঁড়িয়ে গেলেন। পাকিস্তানী ক্যাম্পটি মাত্র চারশ গজ দূরেই। আদেশ এলো আক্রমণের। জয়বাংলা চিৎকারে মুক্তিযোদ্ধারা দৌড়ে চলল শক্রর অবস্থান লক্ষ করে। দেড়শ মুক্তিবাহিনীর সম্মিলিত জয়বাংলা চিৎকারে খান খান হয়ে ভেঙে পড়ল রাতের আঁধার। অনবরত লক্ষ্যবস্তুর উদ্দেশে রাইফেল গর্জে উঠেছে। সারিবদ্ধ দল ভেঙে গেছে, একে কুয়াশা, অন্যদিকে রাতের আঁধার তার ওপর নিয়মিত বাহিনীর আক্রমণ নয়, সুতরাং সারিবদ্ধ সম্মিলিত আক্রমণ সম্ভব হলো না। তবুও ছুটছে পাকিস্তানীদের অবস্থান লক্ষ করে। হঠাৎ করে এভাবে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না পাকিস্তানীরা। মুক্তিযোদ্ধারা যখন তিনশ গজ দূরে তখন ওরা বাঙ্কার থেকে এলএমজি দিয়ে ফায়ার করল। আবারও জয়বাংলা বলে চিৎকার রব ছুটে গেল ওদিকে। শুধু ভয় হতে লাগলো যেহেতু আগেপিছে হয়ে গেছে সুতরাং নিজেদের গুলিতে নিজেরা মারা না পড়ে। কিন্তু এখন সবাইকে কন্ট্রোল করা একেবারে অসম্ভব। প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছে। দলের কার কোথায় অবস্থান তা জানা সম্ভব নয়। কমান্ডারের সঙ্গে দশ থেকে বারোজন আছে। মরণপণ যুদ্ধ করে চলেছে তারা। অনবরত গুলি করছে আর জয়বাংলা বলে চিৎকার করছে। তিনজন শক্র নিহত হয়। আহতের সংখ্যা জানা যায় নি। বাকিরা পালিয়ে যায়। ওয়ারল্যাস সেট একটি, চীনা ভারী মেশিনগান একটি, এসএমজি একটি, ৩০৩ রাইফেল নয়টি এবং বিভিন্ন অস্ত্রের প্রচুর গুলি উদ্ধার করা হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!