You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.27 | দত্তনগর যুদ্ধ, মহেশ্বর, যশোর - সংগ্রামের নোটবুক

দত্তনগর যুদ্ধ, মহেশ্বর, যশোর
[প্রতক্ষদর্শীর বিবরণ]

এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বীজ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত দত্তনগর ফার্ম। ১৯৭১ সালে এখানে পাকিস্তানী আর্মি প্রতিরক্ষা অবস্থা নেয়। এই পাকহায়েনাদের সঙ্গে ছিল তাদের এদেশীয় দোসর বেশকিছু রাজাকার এবং পরামর্শদাতা ইউপি চেয়ারম্যান ময়েন উদ্দিন। এখানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুজিব–বাহিনীর যে যুদ্ধ হয়; যা ছিল মহেশপুর থানার শেষে যুদ্ধ।
মুজিব বাহিনীর সাথে আলোচনা (২৭ নভেম্বর দত্তনগর পাক ঘাঁটির ওপর আক্রমণের চূরান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। মুজিব বাহিনীর অস্ত্র যোগ হওয়াতে আমাদের মনোবল বেড়ে যায়। মুজিব বাহিনীর দুটি সেকশন, গেরিলাদের কোম্পানি ও সহযোগী তরুণদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয় আক্রমণ পরিচালনাকারী বাহিনী। একই সাথে জীবননগর থানার গেরিলাদের সাথেও যোগাযোগ করা হয়। নির্ধারিত দিনে দত্তনগর ফার্ম সংলগ্ন কয়া নামক গ্রামে সমবেত হয়ে আক্রমণে অংশ নেবে তারাও। ২৭ নভেম্বর সকালে বভিন্ন দল এবিভক্ত হয়ে দ্দত্তনগর আর্মি ক্যাম্প দখলের অভিযান শুরুর সময় ঘটে যায় এক অভাবিত ঘটনা। হাজার হাজার মানুষ জয়বাংলা শ্লোগানে এলাকা প্রকম্পিত করে পিছু নেয়। প্রত্যেকের হাতে বাঁশের লাঠি, দা, কুড়াল, কাস্তে, বল্লম, টেটা, মাছ ধরার কোচসহ দেশীয় নানা অস্ত্র। দুপুরে একটি দল যখন গোকুলনগর ফার্মের ভেতর দিয়ে অগ্রসরমান, অবিশ্বাস্য এক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। হাজার হাজার জনতার সাথে শিশু, কিশোর, কিশোরীরা লাঠি সোটা নিয়ে রুদ্ররোষে হানাদার ঘাঁটির দিকে দৌড়াতে থাকে। এ সময় পাকবাহিনীর ঘাঁটি থেকে মেশনগানের একটি ব্রাশ কেড়ে নিতে পারত শত শত মানুষের জীবন। কিন্তু পাকবাহিনী হাজার হাজার নিরস্ত্র জনতাকে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ভেবে ভয় পেয়ে বাংকারে আশ্রয় নেয়। এমনকি আত্মরক্ষারথে তারা গোলাগুলি করা থেকে বিরত থাকে। উৎসাহী জনতা এক সময় পাক ঘাঁটিকে বিভক্তকারী দত্তনগর খালের কাছাকাছি পৌছালে ভয়াবহ রক্তপাতের কথা ভেবে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়। এতে জনতা অগ্রাভিযান থেকে নিবৃত হয়। তাদের অধিকাংশই মাটিতে শুয়ে পড়ে। এভাবে কেটে যায় দুপুর। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলে অনেক অনুরোধ করে গ্রামবাসীদেরকে ফেরত পাঠানো হয়। গ্রামবাসীর এক্সল এগেলে এফ এফ ও বি এল এফ যোদ্ধারা একত্রিত হয়। পরিকল্পনা অনুসারে গভীর রাতে অতি সন্তর্পণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হানাদারদের রক্ষাকারী খালটি পার হয় সবাই। কিছু সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা গোলাবারুদনিয়ে খাল অতিক্রম করে। পাক ঘাঁটির মাত্র ২০০ মিটার দূরে তিন দিকে ছিল পাকা সেচ ক্যানেলের বিপরীত দিকে অবস্থান নেয়। তিন ফুট উঁচু ক্যানেল প্রতিরক্ষার জন্য ছিল যথেষ্ট। তখন ছিল রমজান মাস। পরদিন ২৯ রমজান। গুড় আর রুটি দিয়ে সেহরী করি। ফজরের নামাজের পর হানাদারদের ওপর শুরু করি আক্রমণ। এত কাছ থেকে একসাথে দুটি এলএমজি, অসংখ্য এসএলআর, রাইফেলের গুলি পাকবাহিনীকে বিস্মিত ও আতঙ্কিত করে তোলে। দশ-পনের মিনিট পর জবাব দেয় ওরা। ভারী মেশিনগানের গুলি বৃষ্টি শুরু হলে বিরতি দিয়ে জবাব দিতে থাকি আমরাও। প্রতি যুদ্ধের মতো মাহাতাব, মালেক, নাসির, নিজাম, হামজা প্রমুখ বীর যোদ্ধা বিভিন্ন পজিশনে গিয়ে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হানাদারদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে বীর যোদ্ধরা গ্রেনেড ছুড়ছে মাঝে মাঝে। ধীরে ধীরে আঁধার কেটে যায়। উদিত হয় টকটকে লাল সূর্য। ভোরের প্রকৃতির নির্মল বায়ু, সূর্যের হাসি যুদ্ধ প্রান্তরকে মনে হয় একটি খেলার মাঠ। পাশের আখ ক্ষেত থেকে মাঝে মাঝে দু’একটা শেয়াল উকি দিয়ে অজানা গন্তব্যে দৌড় দিয়ে লুকানোর চেষ্টা করছে। মেঘমুক্ত আকাশ ছিল একেবারে শূন্য। মাঝে মাঝে শক্রদের চাইনিজ গুলি চো চো শব্দ করে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। ওদের সম্ভাব্য আক্রমণ, প্রতি আক্রমণ, মর্টার শেলিং ইত্যাদি বিবেচনা করে বার বার পজিশন পাল্টাই আমরা। ধাঁধার মধ্যে পড়ে যায় শক্ররা। মেশিনগান দুটির পজিশন পরিবর্তনের ফলে হানাদারদের মনে বিশ্বাস জন্মে যে, হাজার হাজার যোদ্ধা ভারি অস্ত্র নিয়ে ঘিরে ফেলেছে ওদের। ভয়াবহ গোলাগুলি, মানুষ হত্যার প্রতিযোগিতা যেন ছেলে খেলার মতো মনে হয়। আমাদের একমাত্র ভয় ছিল শক্রদের মর্টার। ওদের সুরক্ষিত বাংকার থেকে নিক্ষেপ করা মর্টারের গোলা মাঝে মাঝে পড়ছে আশেপাশে। কিছু সময় পরে শক্রপক্ষের মর্টার সেলিং বন্ধ হয়ে যায়। আঘাতপ্রাপ্ত হলেও গুরুতর যখন হয়নি কেউ। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার মাঝে বেলা গড়িয়ে কখন যে সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ছিল খেয়াল নেই কারো। প্রতিবারের মতো খাবার সরবরাহের বিষয়টি ছিল অনিশ্চিত। বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে পরীগাছা, রঘুনাথপুর, হুশুরখালী, পান্তাপাড়া গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষের কয়েকটি গ্রুপ গামলা ভর্তি খিচুড়ি আর মাংস নিয়ে আসে। কাঁসার কলসিতে খাবার পানিও নিয়ে আসে তারা। অবাক করা বিষয়। গুলি বৃষ্টির মাঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ গ্রামবাসীদের যুদ্ধক্ষেত্রে খাবার নিয়ে আসার ঘটনা ইতিহাসে বিরল। বিকেলে হানাদারদের আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সন্ধ্যায় পালা বদল করে ইফতারি ও খাবার খেয়ে নেই। কৃতজ্ঞতা জানাই এলাকার মানুষের প্রতি। পরম কৃতজ্ঞতা জানাই আমার সে সব মা-বোনদের যারা অন্তরালে থেকে খাবার রান্না করে আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন। মাগরিবের পর গোলাগুলির মাঝে বিদায় নেয় গ্রামবাসীরা। পশ্চিম আকাশে বাঁকা চাঁদ দেখিয়ে ওরা জানিয়ে যায়, কাল ঈদ। তোমরা ভালো থেকোম শুভ রাত্রি। সন্ধ্যার পর অবিরাম গুলি ছুড়ছে পাকবাহিনী। আঁধারে ওদের মেশিনগানের অবস্থান সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। মেশিনগানের ব্যারেলে মুখে যেন আগুন জ্বলছে। গোলাবারুদ কম থাকায় হিসেব করে গুলি করতে হচ্ছিল। মাঝে মাঝে দু’একটা গ্রেনেড ছুড়ছি পাকবাহিনীর বাংকার লক্ষ্য করে। রাতে যুদ্ধের দৃশ্যপট একটু ভিন্ন। এক একটা গুলিতো নয় যেন ছুটন্ত উলকা। মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে অসংখ্য উলকা পিণ্ড। মাঝে মাঝে দু’একটা সেচ ক্যানেলের গায়ে আঘাত করছে। রাতের শব্দের গভীরতা অনেক বেশি। প্রতিধ্বনি হতে থাকে ক্রমশ দূর থেকে দূরে। গীটারের তারের মতো ঝুংকারের তুলে ক্রমশ বাতাসে হারিয়ে যায় যেন এক সুমধুর সুর। পাকবাহিনীর চাইনিজ মেশিনগানের গুলির ছন্দায়িত শব্দের বিপরীতে আমাদের ব্রিটিশ মডেলের এলএমজি দুটি যেন ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছিল। রাতের আঁধারে হামজা, নাসির, শাজাহান, ফজলুসহ বেশ কয়েকজন যোদ্ধা ক্যানেল টপকে হানাদারদের বাংকারের কাছে চলে যায়। হানাদারদের বাংকার ও ক্যানেলের মধ্যবর্তী জায়গা ছিল একেবারে সমতল। পাকবাহিনী টের পেলে ওদের বাঁচানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়ত। এটা ছিল এক ধরনের বিচ্ছিন্ন অভিযান। এই সাহসী যোদ্ধারা বাংকারের কাছাকাছি যেয়ে হ্যান্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে। প্রতিক্রিয়ায় হানাদারদের সবগুলো গান একসাথে গর্জে ওঠে। ওদের গোলাগুলির শব্দে থর থর যেন মাটি কাঁপছে। সহযোদ্ধাদের ভাগ্য ভালো যে, মাটি আর ঘাসের রঙের সাথে মিশে গিয়েছিল ওরা। তবুও সন্দেহপ্রবণ পাকবাহিনী চাওরপাশে অবিরাম গুলিবর্ষণ করে চলে। দীর্ঘ সময় পরেও সহযোদ্ধারা পজিশনে ফিরে না আসায় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা দেখা দেয় আমাদের মাঝে। ওদের জন্য আমরা হানাদারদের গুলির জবাব দিতে পারছিলাম না। পাছে ক্রস ফায়ারে পড়ে প্রাণ হারায়। রাত বারোটার দিকে ওরা এক এক করে সবাই ফিরে আসে। স্বস্তি পাই আমরা। ২০ নভেম্বর। ঈদের দিন। মুসলিম জাহানের উৎসবের দিন, বন্ধন আর সম্প্রীতির মহান দিবস। প্রতিবছরের ন্যায় উৎসবে মেতে ওঠে মুসলিম বিশ্ব। দেশে দেশে আনন্দের বন্যা, ধনী দরিদ্র মিশে যায় এক কাতারে। এই দিনে প্রতিটি মুসলমান হাসে, দুঃখ থাকে আড়ালে। রাশি রাশি সুস্বাদু খাবার, আতর গোলাপের সুবাদ, ঈদের নামায শেষে প্রাণের কোলাকুলি, পাড়া প্রতিবেশীর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, মেহমানদের আপ্যায়ন করা, ছোট ছোট বাচ্চাদের আতশ বাজির মহা উৎসবে সারা পৃথিবী আনন্দময় হয়ে উঠে। ব্যাতিক্রম বাংলাদেশ। মনে হলো, আজ পাকবাহিনী উন্মত্ততায় জীর্ণ আমার প্রিয় স্বদেশ। পাক দস্যুরা নতুন জোশে লাঞ্চিত করবে এদেশের মা-বোনদের, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারবে নিরীহ বাঙালিদের, ভুরি ভোজ করবে জল্লাদের দল। মহা ফুর্তি করবে রাজাকাররা। বিপদময় হয়ে থাকবে সারা দেশ। স্বজনহারা বেদনায় ঈদের আনন্দ ভুলে বিলাপ করবে অনেকে। হয়তো কোনো নব বধূর মেহেদীর রঙ না মুছতেই বিধবা হবে আজ। সিঁথির সিঁদুর মুছে যাবে আমার প্রিয় কোনো বোনের, মা হারাবে তার একমাত্র ছেলেকে। শকুনীরা ছেয়ে থাকবে বাংলার আকাশ। বাংলাদেশে আজ থাকবে হাসির বদলে কান্না, মিলনের পরিবর্তে বিচ্ছেদ, জল্লাদ বাহিনী রক্ত পিপাসায় কাপতে থাকবে ক্ষত-বিক্ষত আমার বাংলা। রক্ত স্রোতের শপথ নিয়ে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা মরণ আঘাত হানবে আজ। ভুলে গেলাম আজ ঈদ, খুশির দিন। শত সহস্র মায়ের চোখের পানি মুছে ফেলার দিন আজ। হারিয়ে যাওয়া লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধের অন্তিম সময়। সূর্য ওঠার সাথে সাথে আমরা হানাদারদের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু গুলি বৃষ্টির কারণে এগুতে পারিনি। এদিন সকালে হানাদার ঘাঁটি থেকে জীবননগরের রাস্তা বিচ্ছিন্ন করে ফেলি। এ অভিযানে জীবননগরের মুক্তিযোদ্ধারা সহযোগিতা করে। হানাদারদের পালাবার পথ বন্ধ হয়ে যায়। সরবরাহ বিচ্ছিন্ন পাকবাহিনী বুঝতে পারে তারা গেরিলাদের ফাঁদে পড়ে গেছে। ওদের গুলি করার প্রবণতা ক্রমে ক্রমে হ্রাস পাচ্ছিল। বেলা এগারোটার দিকে তাকিয়ে দেখি গ্রামের বেশ কিছু মানুষ। বিভিন্ন ধরনের পাত্র হাতে। রঘুনাথপুরের আউয়াল ভাই, ছোত ভাই আলমগীর, নজরুল, পান্তাপাড়ার হজরত আলী মোল্লা, রশিদ ভাইসহ অনেকে এসেছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সাথে সেমাই, ফিরনী, ভাত, মাংস জর্দাসহ নানা রকম সুস্বাদু খাবার। বিভিন্ন পাড়া ও গ্রামের মা-বোনেরা যত্নসহকারে রান্না করে পাঠিয়েছেন আমাদের জন্য। আনন্দের সীমা নেই। আমার প্তি প্রিয় খাবার গরুর মাংস রান্না করে পাঠিয়েছেন মা। আমি যেন বেহশতের খাবার পেলাম। সবাইকে নিয়ে খাবার শেষে ঈদের কোলাকুলি করি। সে এক অভাবিত দৃশ্য। এক দিকে চলছে গুলি, অন্যদিকে আনন্দ ভাগাভাগি। মহান করুণাময়ের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। পরস্পর গুলি বিনিময় ছাড়া বিশেষ কোনো দিকে মোড় নেয়নি সেদিনের যুদ্ধ। শেষ রাতে চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি নেই। প্রয়োজনে সামানাসামনি যুদ্ধ। সন্ধ্যার পর হানাদারদের কাছ থেকে বিশেষ কোনো জবাব পাচ্ছিলাম না। শেষ রাতে আমরা সর্বাত্মক আক্রমণে যাই। মুক্তিযোদ্ধা আমীর হামজার নেতৃত্বে অগ্রবর্তী একটি দল ভোর চারটার দিকে শক্র বাংকারের খুব কাছাকাছি চলে যায়। প্রতিটি বাংকারে গ্রেনেড নিক্ষেপ করার পর শক্রদের নীরবতা সন্দেহ সৃষ্টি করে। যোদ্ধারা শক্র ঘাঁটি পর্যবেক্ষণ করে শক্র সেনার অবস্থান সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে। ধীরে ধীরে ভোর হলে আমরা শক্র অবস্থানের কয়েক মিটারের মধ্যে পৌছি। আমাদের অনুমান সত্য। শক্ররা টিকতে না পেরে শেষ রাতে ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। জয়বাংলা শ্লোগানের সাথে শক্রদের ঘাঁটিতে ঢুকে পড়ি। এলোমেলো অবস্থা। বাংকারে ছোপ ছোপ রক্ত। মনে হলো শক্ররা তাদের কয়েকজনের লাশ সরিয়েছে। শক্র বাহিনীর পরাজয় ও পালিয়ে যাবার ঘটনা জানাজানি হলে গ্রামবাসীরা দলে দলে ছুটে আসে। পালিয়ে যাবার সময় শক্রদের কয়েকজনকে গ্রামের লোকজন পিটিয়ে মেরে গাছে ঝুলিয়ে রাখে। বিকেলে সংবাদ আসে যে, জীবননগর থানার পাকসেনারা পিছু হটেছে। বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ ওদেরকে পেলেই পিটিয়ে মেরে ফেলছে। এক্ষেত্রে গ্রামের মহিলারা ছিল অত্যান্ত তৎপর। মেয়েরাই অনেক পাক সেনাকে পিটিয়ে হত্যা করে। রাজাকাররা পোশাক বদল করে উধাও হয়ে যায়। দেখা পাই নি তাদের। হয়তো পাবো না কোনদিন।
[৬] আব্দুল আজিজ।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত