You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.13 | দরগাহ বাড়ীর যুদ্ধ, ঝালকাঠি - সংগ্রামের নোটবুক

দরগাহ বাড়ীর যুদ্ধ, ঝালকাঠি

নলছিটি থানার ফয়রা কুশাঙ্গলের বীর সন্তান আলতাফ মাহমুদের নাম বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তার পিতার নাম তাহের আলী খান। তিনি ঝালকাঠি কলেজের বিএ ক্লাসের ছাত্র ও ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ছিলেন। তিনি বড় ভাই মুজিবর রহমানকে নিয়ে জুন-জুলাই মাসে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন। পরে নলছিটি থানা মুক্তিবাহিনীদের সিভিল চীফ নিযুক্ত হন। থানা কমান্ডার ছিলেন বিহঙ্গল গ্রামের ইবিআর সেকান্দার আলী। সেকান্দার ও আলতাফ কয়েকটি সংঘর্ষে কৃতিত্বের পরিচয় দেয়। ৯ই আগস্টে সেকান্দার, আলতাফ, রব, চুন্নু, মালেক, ফারুক, হঠাৎ কাঠালিয়া থানা আক্রমণ করে সব অস্ত্র নিয়ে আসেন। তাদের এ অপূর্ব বিজয় দক্ষিণ অঞ্চলের জনগণের মধ্যে শক্তি ও প্রেরণা সৃষ্টি করে। ১৩ই নভেম্বর সেকান্দার ও হাবিব পাক হানাদারদের ঘাঁটি নলছিটি থানা আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সে কান্দার, ইবিআর, আব্দুর রব, চুন্নু, আলতাফ মাহমুদ, মালেক, বিন্দু, ঘোষ, ওয়াহেদ, হামিদ প্রমুখ ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নলছিটি থানা আক্রমণ করেন। বিজয়ের শেষ মুহূর্তে মালেক এবং বরিশাল গোরস্থান রোডের মমতাজ উদ্দীনের পুত্র ফজলুল করিম সেলিম থানার ভিতরে প্রবেশের সময় গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা যান। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের লাশ বাহাদুরপুর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। থানা আক্রমণের কথা শুনে পাকিস্তানীসেনারা চলে আসে। তারা দেওপাশা ও পরমপাশা গ্রামের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা পিছু না হটে নিরীহ গ্রামবাসীদের রক্ষার জন্য পাকিস্তানীবাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। মুক্তিযোদ্ধারা পরমপাশা স্কুল, তালতলা ও বাসন্ডার পাশে অবস্থান নিয়ে পাকবাহিনীর আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর মাত্র একটি এলএমজি ছিল। বিকেল ৩টায় যুদ্ধ শুরু হয় এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। আলতাফ ও কবীর শীতল পারা পুলের নিচে অবস্থান নেন। হঠাৎ পিছন থেকে ৩ জন পাকিস্তানীসেনা গুলি করে আলতাফ ও কবীরকে হত্যা করে। আলতাফকে রক্ষা করার জন্য সুবেদার কবীর তার নিকট এসে গুলি বিদ্ধ হন। আলতাফের গলায় এবং কবীরের বুকে গুলি বিদ্ধ হয়। সন্ধ্যার পর পাকিস্তানীসেনারা পালিয়ে যায় এবং এবং মুক্তিযোদ্ধারা আলতাফ ও কবীরের লাশ নিয়ে আসে। আলতাফকে তার বাড়িতে কবর দেয়া হয় এবং কবীরের লাশ রাজাপুরে তার গ্রামে কবর দেয়া হয়।
[৫৭] সিরাজউদ্দীন আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত