তিস্তামুখ ঘাটে জাহাজ আক্রমণ, রংপুর
পাকিস্তানী বাহিনীর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানরত ৭২ ব্রিগেডিকে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত করে রৌমারী ও চিলমারীর মুক্তাঞ্চল দখল করার উদ্দেশ্যে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম থেকে অস্ত্রশস্ত্র ভর্তি তিনটি জাহাজ তিস্তামুখ ঘাটে আসে। তিস্তামুখ ঘাট থেকে ট্রেনযোগে সেগুলি রংপুর সেনানিবাসে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল। রোস্তম কোম্পানি ট্রেনযোগে সেগুলি রংপুর সেনানিবাসে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল। রোস্তম কোম্পানী ঘাটের কর্মচারীদের মারফত এই তথ্য পেয়ে সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি তৎক্ষণাৎ জাহাজ আক্রমণের জন্য রঞ্জু ও রোস্তম কোম্পানীকে দায়িত্ব দেন। তাদেরকে সাহায্য করার জন্য গৌহাটি নৌদফতর থেকে তিনজন নৌকমান্ডো অপারেশনে প্রেরণ করা হয়। নৌকমান্ডো তিনজন তিস্তামুখ ঘাট এলাকায় পৌঁছুলে তাদের নিয়ে তিস্তামুখ ঘাট এলাকা এবং অস্ত্র ভর্তি জাহাজ তিনটি রেকি করানো হয়। অপারেশনের রাতে মুক্তিযোদ্ধাদল নৌকমান্ডো তিনজনকে সহ গলনারচরে আবেদ মেম্বারের বাড়ীর হাউড আউট থেকে ৩টি নৌকাযোগে তিস্তামুখ ঘাটের কাছাকাছি নেমে পড়ে। নৌকমান্ডোরা সাঁতরিয়ে জাহাজের দিকে চলে যায়। মুক্তিসেনারা তাদের নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত স্থানে পজিশন নেয়। নৌকমান্ডোরা জাহাজ তিনটির তলদেশে গিয়ে মাইন স্থাপনের প্রস্তুতি নেয়। ঐ রাতে ছিল আমাবস্যা আর প্রবল বৃষ্টিপাত। ব্রহ্মপুত্র ছিল উত্তাল। প্রবল স্রোতের কারণে নৌকমান্ডোরা ঠকমত মাইন লাগাতে সক্ষম হয়নি। ভর হওয়ার পূর্বেই তিন নৌকমান্ডোর একজন (ফজলু) মুক্তিবাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। কিন্ত অন্য দুজন আর ফিরে আসেনি। সম্ভবতঃ জাহাজের ফ্যানে আটকে গিয়ে তারা শাহাদৎ বরণ করে।
[৫৮০] ড. মোঃ মাহবুবর রহমান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত