তেলিগাতির যুদ্ধ, দৌলতপুর
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ৮ টা পার হয়ে গেছে। হঠাৎ ঢাকার সাথে খুলনার টেলিফোন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শহরবাসী শঙ্কিত হয়ে পড়ে। রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক কর্মীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরে। শহরবাসীরা ভাবছিল কী যেন একটা হতে যাচ্ছে। রাত ১২টা বাজল। শহরে পাকসেনাবাহিনী মাইকে ঘোষণা দিল “ আগামীকাল ২৬ মার্চ ভোর ৫টা হতে ৭২ ঘন্টার জন্য কারফিউ জারি করা হচ্ছে”। কিন্ত খুলনা ইপিআর লাইনের ইপিআর সদস্যরা বিষয়টি পূর্বেই আঁচ করতে পেরে কারফিউ ঘোষণার পূর্বে লাইন ত্যাগ করে। পুলিশ সদস্যরাও পুলিশ লাইন ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। যতদূর জানা যায় প্রায় তিন শত সশস্ত্র ই.পি. আর সদস্য লাইন থেকে পালিয়ে দৌলতপুর হয়ে রংপুর, শাহপুর ও লতা পাহাড়পুর প্রভৃতি গ্রামে আশ্রয় নেয়। এসময়ে খুলনা শহর থেকে কতিপয় বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা রাতের বেলা তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং দ্রুত মার্চ করে খুলনা শহর দখলের পরামর্শ দেন। এই পরামর্শে তারা রাজী হয়ে ২৬ মার্চ সকালবেলা লতা, শাহপুর ও রংপুরের মধ্যবর্তী আড়াংঘাটা গ্রামের মাঠে এসে সমবেত হয়। পালিয়ে আসার সময় ই. পি. আর সদস্যা যে অস্ত্র শস্ত্র সঙ্গে আনে তা নিয়েই তারা খুলনা শহর দখলের উদ্দেশ্য যাত্রা করে। এই সময়ে অগণিত মানুষ দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে তাদের সঙ্গে শামিল হয়। এক পর্যায়ে তারা তেলিগাতি গ্রামে অবস্থিত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমান বি.আই.টি) এর নিকট এসে পড়ে। তারা জানতে পারে এই কলেজে প্রায় ৩০ জন পাকসেনা পাহারারত আছে। ইপিআর সদস্যরা উক্ত পাকসেনাদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ সময় গুলিবর্ষণ অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে পাকসেনারা ২০ জন সৈনিকের লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে দু’জন পুলিশযোদ্ধা শহীদ হন। যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের ফেলে যাওয়া একটি ট্রাক, কয়েকটি জিপ এবং প্রচুর গোলাবারুদ পেয়ে যায়।
[১৮৮] মোঃ আবুবকর সিদ্দিকী
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত