You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.13 | তারাবর অ্যাম্বুশ, চিলমারী, কুড়িগ্রাম - সংগ্রামের নোটবুক

তারাবর অ্যাম্বুশ, চিলমারী, কুড়িগ্রাম

যুদ্ধদিনের ১৩ আগস্ট। পশ্চিমা হায়েনার এক বিরাট দল বেরোয় চিলমারী বন্দর থেকে। প্রচুর অস্ত্র এবং গোলাবারুদ বহন করেছিল তারা। নৌপথে কোথায় ভ্রমণে বেরিয়েছিল তারা ? হ্যাঁ, গন্তব্যে তাদের জানা হয়ে গেছে মুক্তিবাহিনীর। সে এক অবাক করা কান্ড। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পুরো পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত ছিল মুক্তাঞ্চলে অবস্থানরত আফতার বাহিনী। আর এ সংবাদ সংগৃহীত হয়েছিল তাদের সভা থেকে। পাকবাহিনী তারাবরে অবস্থিত মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে আরো আগেই। সেটি নিয়ে তাদের পরিকল্পনাকারী বা সমর বিশেষজ্ঞদের একটি সভা অনুষ্টিত হয় ১১ আগস্ট। ভেনু ছিল চিলমারীর বালাবাড়ি। অতি গোপনে সভাটি ডাকা এবং পরিচালিত হলেও রাজাকার বেশে তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সে সংবাদ সরাসরি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জানলেন আক্রমণের তারিখ ও স্থান। কতজন পাকসেনা কী ধরনের অস্ত্র নিয়ে কোন পথে আসবে। কখন চালাতে চায় তারা আক্রমণ। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রাখে তারা। অপেক্ষা শুধু হায়েনা বধের। আসে তারা তারাবর ঘাটে। নৌযান থেকে অবতরণ করেই পায়ে হেঁটে অগ্রসর হতে থাকে লক্ষ্যের দিকে। কিন্ত মুক্তিযোদ্ধারা তারাবর থেকে শংকর মাধবপুর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি খালের পূর্ব পারে অ্যাম্বুশ করেছিল আগে থেকেই। ফলে ঐদিন দুপুরের পর থেকে শুরু হয় প্রচণ্ড যুদ্ধ। প্রথম আঘাতেই প্রাণ দিতে হয়েছে ১৭ জন পাকিস্তানী মিলিটারিকে। আর আহত হয়ে যুদ্ধের মাঠেই পড়ে থাকে ২৫ জন। এভাবে কয়েক ঘন্টা ধরে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ চালিয়েছে পাকিস্তানীরা। আর বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে আহতদের নিয়ে যেতে কিংবা লাশগুলো ওঠাতে। পাকিস্তানী মিলিটারিরা এক সময় গোপন পথে মৃত পাকিস্তানীদের লাশ উঠাতে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সে সময় পাক সেনাদের শরীর নিঃসৃত শোণিত রক্ত খেয়ে তৃপ্ত হচ্ছিল একটি বেওয়ারিশ কুকুর। চেটেচুটে পান করছে রক্ত। একজনের রক্তে অরুচি হলে চলে যাচ্ছে অন্যজনের কাছে। এ সময় পাকসেনাদের প্রত্যক্ষ করে কুকুর ভাবল তার খাদ্য পানীয়ের সম্রাজ্যে অংশ বসাতে আসছে ওরা। তাই ক্ষেপে যায় সে। ঘেউ ঘেউ শব্দে তেড়ে আসে ওদের দিকে। আর কুকুরটির গমনপথ লক্ষ্য করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আবার চালায় তীব্র আক্রমণ। স্তব্ধ হলো তাদের অগ্রযাত্রা। তবে রাত একটার দিকে প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হলে পাকিস্তানীরা সেই সুযোগে লাশগুলো উঠিয়ে নিতে সমর্থ হয়েছিল বলে জানা যায়। এ যুদ্ধে একটির পর একটি বিপর্যয়ে পরে পাকবাহিনী। আঘাতে আঘআতে একেবারেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
[৪৭] তাজুল মোহাম্মদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত