তালতলা যুদ্ধ, মুন্সিগঞ্জ
মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানার তালতলার যুদ্ধের ঘটনা বর্ণনাকালে মুক্তিযুদ্ধকালীন ষোলঘর মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পের সহকারী কমান্ডার লিখেছেন-‘জুলাই মাসের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনিং নিয়ে প্রথম দিকে যেসব মুক্তিযোদ্ধা বিক্রমপুরে আসেন ও বাখরা গ্রামে অবস্থান গ্রহণ করেন, তারই একটি গ্রুপের কমান্ডার নুরুল ইসলাম। প্রশিক্ষণ শেষে বেশকিছু গোলাবারুদ ও অস্ত্র নিয়ে ভারত থেকে কুমিল্লা হয়ে আসা মুক্তিযোদ্ধারা কোথাও থাকার তেমন কোন উপায় পাচ্ছিলো না। তারা সবাই ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত ছিল। তাঁদের নৌকা তালতলা বাজারের নিকট দিয়ে যাবার সময় বাজার থেকে চিরাগুড়া ক্রয় করে আবার শ্রীনগরের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে।
রাত তখন গভীর। তালতলার ডাকবাংলার কাঠের পুল অতিক্রম করার পরই পাকিস্তানী মিলিটারীর সাথে মুখোমুখি হইয়ে পড়েন এবং সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। মুক্তিযোদ্ধারা নৌকা থেকে ডাকবাংলার ও পুলে পাকবাহিনীর দিকে গুলি ছুড়তে থাকে। দীর্ঘক্ষণ গুলি ছুড়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবস্থান দৃঢ় করেন এবং পুলের উপরে অবস্থিত পাক হানাদারদের গুলিবিদ্ধ করে পানিতে ফেলে দেয়। এমনি সময়ে তুমুল গোলাগুলির মধ্যে হঠাৎ করে ডাকবাংলোর দিক থেকে আসা একটি গুলি আমাদের এক সহযোদ্ধার গায়ে লেগে গুরুতর ভাবে আহত হন। এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবস্থান থেকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সরে আসে এবং ধলেশ্বরীর কূল বেয়ে বয়রাগাদি গ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
পানির নীচে ফেলে দেয়া এবং পানের বরজ লুকানো গোলাবারুদ পড়ে কমান্ডার নুরুল ইসলাম এবং সহকারী কমান্ডার মাহফুজসহ সাংবাদিক আব্দুল মোতালেব ও আমি উদ্ধারের জন্য সচেষ্ট হই। … পানির নীচ থেকে উদ্ধার স্টেনগান করে তিন-চার দিন পর আমি শ্রীনগর পৌছি এবং কমান্ডার নূরুল ইসলাম পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক মঙ্গলবার দেউলভোগের গরুর হাটে গরু ক্রয় করার জন্য। বাখরা থেকে আসা পাইকারদের সাথে এসে অস্ত্রটি গরুর নৌকায় করে নিয়ে যান, যাতে কেউ বুঝতে না পারে।
আমার জানামতে তালতলা যুদ্ধই হচ্ছে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বিক্রমপুরের প্রথম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আমাদের একজন শহীদ হন এবং পাকিস্তানীদের বেশ কয়েকজন নিহত হয়। দেশ স্বাধীন হবার কিছুদিন পূর্বে সহকারী কমান্ডার মাহফুজ হরিরামপুর যুদ্ধে শহীদ হন।
[৬২৩] হাসিনা আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত