You dont have javascript enabled! Please enable it!

তাড়াশ থানা আক্রমণ, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সফল রেইডগুলোর মধ্যে তাড়াশ থানা রেইডটি ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই রেইডের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা শুধু অনেক অস্ত্র এবং গোলাবারুদই দখল করেনি, বরং এই সফল রেইডের মাধ্যমে তাঁদের মনোবলও বৃদ্ধি পেয়েছিল বহুগুণে। মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মাত্র কিছু ৩০৩ রাইফেল ছাড়া তেমন কিছুই ছিল না। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদের জোগান দেয়ার উদ্দেশ্যই তাড়াশ থানার ওপর রেইড করা হয়। পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের কলেবর দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশকে স্বাধীন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল। যার ফলে তাঁদের প্রশিক্ষণ এয়া এবং প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তাই হাইকমান্ড জরুরি মিটিং ডেকে জরুরি ভিত্তিতে সর্বসম্মতক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, এখন থেকে হানাদার বাহিনীর এবং তাঁদের দোসর রাজাকাররা যে যেখানে সশস্ত্র অবস্থায় থাকবে তাঁকে সেখানেই খতম করে তাঁর অস্ত্র সংগ্রহ করে নেয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধারা তাড়াশ থানায় রেইড করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। খুব সম্ভব ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে হান্ডিয়াল নওগাঁ এলাকা থেকে প্রায় ১ কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা বিকেল ৫টার দিকে নৌকাযোগে তাড়াশ থানা অভিমুখে রওয়ানা হয়। নৌকাগুলো আগে থেকেই বিভিন্ন উপদলে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। আর ঠিক সেভাবেই যে যার অবস্থানের দিকে এগিয়ে চলছিল। সন্ধ্যার পরেই চারদিকে নেমে আসে গাঢ় অন্ধকার। ঠিক সেই সময় মুক্তিযোদ্ধারা থানার সমস্ত নৌকা তাড়াশ থানাসংলগ্ন রাস্তায় ভিড়ল। চোখের পলকে মুক্তিযোদ্ধারা থানার সদর দরজা দিয়ে ভেতর ঢুকে যার যার অবস্থান নিল। এতা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল যে, কে কোথায় পজিশন নেবে। থানার ভেতরে থাকা পুলিশরা কিছু বুঝে ওথার আগেই কোম্পানি কমান্দার অস্ত্রের কোত দখল করে নেয়। ওখানে এক পুলিশ গুলি করার চেষ্টা করলে তাকে সেখানেই খতম করে দেয়া হয়। তখইনই প্রথম গুলির আওয়াজ শোনা যায়। তখন সকলেই বুঝতে পারল এটা নিজেদের বাহিনীর গুলির শব্দ। এই অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা যার যার অবস্থানে প্রস্তুত থেকে ফায়ার না করার নির্দেশ মেনে চলল। যাতে করে রাতের অন্ধকারে নিজেদের গুলিতে নিজেরা মারা না যায়। এই অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক পুলিশ ও রাজাকারসহ সমস্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করে। পুলিশ ও রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা করবে এবং যাদের সামর্থ্য আছে তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার নিশ্চয়তা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। ওরা সবাই জীবনে বেঁচে যাওয়ার আনন্দে কেঁদে ফেলে। প্রায় ২১-২২টির মতো ৩০৩ রাইফেল এবং বেশ কিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করা হলো।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!