তারাইল ফুকরার যুদ্ধ, ফরিদপুর
ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস ষ্টেশন পাকসেনা লঞ্চযোগে গোপালগঞ্জ থেকে আসে। পাকসেনাদের এই লঞ্চের উপর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণের পরিকল্পনা নেয়। রাজৈর থানার শাহজাহান সিকদার নামে একজন এফএফ কমান্ডার ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ জুন মাসের প্রথম দিকে এসে উড়াকান্দি অবস্থান করতে থাকে। অত্র এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের কাজে সে নিয়োজিত ছিল। ইতিমধ্যে নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল ও কয়েকশত মুক্তিযোদ্ধা উন্নতমানের হাতিয়ারসহ এসে উরাকান্দি ঘাঁটি করে থাকে।
ঘটনার দিন গোপালগঞ্জ হতে তিনখানা লঞ্চ ভর্তি পাকসেনারা মধুমতি নদী দিয়ে ভাটিয়াপাড়া যায়। সেখান হতে ফেরার পথে তাঁদের আক্রমণের জন্য এফএফ কমান্ডার শাহজাহান সিকদার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রস্তুত থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা তারাইল ফুকরার নিকট নদী পাড়ে ট্রেঞ্জ কেটে তিন ভাগে বিভক্তর হয়ে ডিফেন্স নিয়ে পাকহানাদার বাহিনীর লঞ্চ ভাটিয়াপারা হতে ফেরত আসার অপেক্ষায় থাকে। কমান্ডার শাহজাহান সিকদার একটা তালগাছের আড়াল থেকে একটা মর্টার নিয়ে ফায়ার করার জন্য তৈরি থাকে। প্রায় ২৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা এই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে।
পাকসেনাদের লঞ্চ মুক্তিযোদ্ধাদের ডিফেন্স অবস্থানের নিকট মধুমতি নদী দিয়ে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ডভাবে আক্রমণ করে। কমান্ডার শাহজাহান মর্টারের শেল পাকসেনাদের লঞ্চ লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা চেষ্টা করছিল লঞ্চের নিচের দিকে বডিতে গুলি লাগাতে। এতে পাকসেনারা আহত বা নিহত হচ্ছিল ঠিকই কিন্তু লঞ্চের কোন ক্ষতি হচ্ছিল না। মর্টারের শেল নদীর পানিতে পড়ার কারণে সেগুলি বিস্ফোরিত হচ্ছিল না। একটি মাত্র শেল লঞ্চের উপরের অংশে পড়ে ছাদ উড়ে যায় কিন্তু ডুবল না।
পাকসেনারা তখন বহু কষ্টে একটি লঞ্চ নদীর পাড়ে ভিড়িয়ে তারা ক্রলিং করে মুক্তিযোদ্ধাদের ডিফেন্স পজিশনের দিকে আসতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে শাহজাহান সিকদার হুইসেল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওখান থেকে চলে আসার সংকেত দেয়। তাঁর এই সংকেত মতো প্রায় সকলেই চলে আসে। কিন্তু আগের দিকে ১ম ট্রেন্সে যুদ্ধ অব্যাহত রাখে। মেশিন গান ও রাইফেলের গুলি বর্ষণ করছিল তারা। পাকসেনারা নদীর পাড়ে নেমে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের চোখের আড়ালে নদী পাড়ের নীচু দিয়ে ক্রলিং করে এসে পিছনের দিক থেকে তাঁদের অস্ত্রসহ বাংকারের মধ্যে ধরে ফেলে। ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা গুলি লেগে ট্রেন্সের মধ্যে শাহাদাত বরণ করে এবং অবশিষ্ট ৪ জনকে ধরে নিয়ে যায়। তারা আর কোনদিনই তাঁদের মায়ের কোলে ফিরে আসেনি। ২টা এলএমজিসহ ৬টি রাইফেল পাকসেনাদের দখলে চলে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে যাওয়ার পর পাকসেনারা পার্শ্ববর্তী গ্রামে কয়েকটি বাড়ি জ্বালায়। তাদের গুলিতে সদ্য প্রসূতি একটি মেয়ে নিহত হয়। খানসেনারা বেশি দেরি না করে তাড়াতাড়ি গোপালগঞ্জে ফিরে যায়।
[৬৪৫] মোঃ সোলায়মান আলী
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত