You dont have javascript enabled! Please enable it!

ডুলাহাজারা সেতু অপারেশন, কক্সবাজার

সেতুটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজারমহাসড়কে অবস্থিত। মূলত দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে সেতুটিতে মুক্তিযোদ্ধা অপারেশন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন : সেতু নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাজাকার ও পুলিশবাহিনীকে আক্রমণ করার মাধ্যমে পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচলকে গতিশীল ও নিরাপদ করা। রাজাকার ও পুলিশদের অস্ত্রগুলো আয়তে করে মুক্তিবাহিনীর অস্ত্রভান্ডারকে শক্তিশালী করা। হাবিলদার সোবহানের নেতৃত্বে ২ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে অতর্কিত হামলার মাধ্যমে এই সেতুতে অপারেশনের পরিকল্পনা করা হয়। এই ক্ষেত্রে চারজনের একটি দলকে সাধারণ পথচারী হিসেবে পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। এই চারজন হলেন মুক্তিযোদ্ধা এমদাদ আহমেদ চৌধুরী, জামাল মিয়া, মোহাম্মদ হোসেন এবং আইয়ুব বাঙালি। তাঁরা অত্যান্ত দক্ষতার সাথে অপারেশনের দুইদিন আগে পর্যবেক্ষণ সমাপ্ত করেন। নিজ অবস্থান নতুন মুরংপাড়া থেকে অপারেশনের পূর্বে চুড়ান্ত মিলনস্থানের গমনপথটি দীর্ঘ ও দুর্গম। পাহাড়ি ও জংগলাকীর্ণ দীর্ঘ ২৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাদেরকে চুড়ান্ত মিলনস্থলে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ পৌছাতে হয়। চুড়ান্ত মিলনস্থান ছিল সেতুর পশ্চিমের পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে যা আলী মিয়ার খামার নামেই পরিচিত। অপারেশন পরিচালনার জন্য স্থিরীকৃত দলবিন্যাস গতানুগতিক না হয়ে যে ধারা অবলম্বন করে নিম্নরূপ : কমান্ড গ্রুপ : হাবিলদার সোবহান ও সাথে ৪ জন। মোট ৪টি অস্ত্র। অবস্থান আএতুর দক্ষিণ-পূর্বে। একশন গ্রুপ-১ : নায়েক আব্দুল কাদের ও সাথে ৮ জন। অস্ত্রের সংখ্যা ৫টি। অবস্থান সেতুর দক্ষিণ-পূর্বে। একশন গ্রুপ-২ : ল্যান্স নায়েক আব্দুস সালাম ও সাথে ৭ জন। অস্ত্র ৪টি। অবস্থান সেতুর দক্ষিণ-পূর্বে। এই গ্রুপটি কার্ট অফ পার্টিরও দায়িত্বে ছিল। একশন গ্রুপ -৩ : ল্যান্স নায়েক আমিনুল হক ও সাথে ৭ জন। অস্ত্র ৪টি। অবস্থান সেতুর উত্তর-পশ্চিম পাশে। একশন গ্রুপ-৪ : ল্যান্স নায়েক ছায়েদুল ও তাঁর সাথের ৬ জনের দায়িত্ব ছিল সেতুর উত্তর-পশ্চিম পাশে অবস্থান নিয়ে কাট অফ পার্টি ও কভারিং পার্টির কাজ করা। তাঁদের সাথে মোট ৫টি অস্ত্র ছিল। রেইডের জন্য সময় নির্ধারিত হয় রাত ১.৩০ ঘটিকা। এর আগেই রাত ১.৩০ ঘটিকার মধ্যে চুড়ান্ত মিলনস্থআন থেকে সকল গ্রুপই শক্রর অজ্ঞাতসারে টার্গেট অবস্থানে পৌঁছে যায়। রাজাকার ও পুলিশরা মুক্তিযোদ্ধাদের এ ধরনের আকস্মিক হামলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না। ১০ জন রাজাকার ও পুলিশের এই দলটির বেশিরভাগই ছিল ঘুমন্ত। রাত ১.৩০ ঘটিকায় এই রেইডের প্রথম আঘাতে ডিউটি পোস্টের ১ জন রাজাকার নিহত ও অপরজন আহত হয়। বিশ্রাম এলাকায় আহত হয় আরো একজন রাজাকার। তবে সেতুতে উঠে চার্জ করাও খুব সহজসাধ্য হয়নি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। প্রায় পনের মিনিট ধরে দুপক্ষে গুলিবিনিময়ের পর মুক্তিযোদ্ধারা দুইদিক থেকে সেতুর দিকে অকুতোভয় অগ্রসর হতে থাকলে শক্রপক্ষ রণে ভঙ্গ দেয়। তবু আশেপাশের পুকুর ও ডোবা তল্লাশি করে পাওয়া যায় আরো কয়েকজন রাজাকারকে। ততক্ষণে আশেপাশের লোকজন মুক্তিযোদ্ধাদের দেখবার জন্য ছুটে আসতে থাকে। কিন্তু গোপনীয়তা বজায় রাখার স্বার্থেই মুক্তিযোদ্ধা দলটি খানিক বিশ্রামের মায়াকে ত্যাগ করে ঘাঁটিতে প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এই অকুতোভয় যোদ্ধাদের মাঝে কেউ আহত হয়নি। বরং তাঁরা দখলে নিয়েছে শক্রর ৩টি ৩০৩ রাইফেল ও প্রায় ৩০ রাউন্ড গুলি।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!