You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.27 | টনির বাজার ও ঘুইংগার হাট যুদ্ধ, ভোলা - সংগ্রামের নোটবুক

টনির বাজার ও ঘুইংগার হাট যুদ্ধ, ভোলা

টনির বাজার বা বাংলাবাজারের যুদ্ধ ছিল মুক্তিবাহিনীর জন্য সবচেয়ে হৃদয়বিদারক। টনি নামে নোয়াখালীর এক মুন্সী ভোলা থেকে ৭ মেইল দূরে বোরহান উদ্দীন রাস্তার পাশে বাস করতো এবং তার নামে একটি বাজার বসে। বাজারের নাম ছিল টনির বাজার। আনছার কমান্ডার আকবর একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য টনির বাজারে অবস্থান করে। টনি মুক্তিযোদ্ধাদের তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে ভোলায় পাকসেনাদের সংবাদ দেয়। সেদিন ছিল ২৭ অক্টোবর। পাকবাহিনী হঠাৎ ভোলা থেকে এসে টনির বাজার ও বাড়ি আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে ও কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। কিন্তু প্রতিকূল অবস্থানের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়। ২৭ অক্টোবর পাকবাহিনীর সাথে এ যুদ্ধ্বে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। এত বড় হৃদয়বিদারক ঘটনা বরিশালের অন্য কোন রণাঙ্গনে ঘটেনি। টনির বাজার যুদ্ধে সেদিন যে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করতে করতে প্রাণ দিয়েছেন তারা হলেন- সৈয়দ আহমেদ, জেবল হক ফকির, মোজাম্মেলহক, নান্নু মিয়া, আবু আব্দুল্লাহ, মোতাহার আলী, নুরুল হক, ইপিআর আবুল কাসেম, হানিফ, রাজ্জাক, ইদ্রিস, সিরাজ, সোবহান হায়দারী প্রমুখ ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা ও অনেক গ্রামবাসী শহীদ হয়। টনির বাজার যুদ্ধের সংবাদ পেয়ে দেউলির সিদ্দিকুর রহমান তাঁর বাহিনী নিয়ে ভোলা থেকে ৫ মাইল দক্ষিণে ঘুইংগার হাটে অবস্থান নেয়। টনির বাজার যুদ্ধে জয় করে যখন পাকসেনারা ভোলায় ফিরছিল তখন সিদ্দিকুর রহমান তাদের উপর আক্রমণ চালায়। ৫ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং তারা পালিয়ে ভোলায় চলে যায়। ঘুইংগার হাট যুদ্ধে ভোলার চরকুমদিয়ার শাহে আলম নিহত হয়। এ যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা টনির বাজারের নাম রাখলেন বাংলাবাজার। স্বাধীনতার পর টনিকে হত্যা করা হয়। ২৯ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা দৌলতখাঁ ও বোরহান উদ্দীন থানা আক্রমণ করে অস্ত্র কেড়ে নেয়। ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ বেতারে ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়, পাক-বাহিনীর পরাজয় ও থানাগুলো দখলের সংবাদ প্রচারিত হয়। টনির বাজার বিপর্যয়ের পর মুক্তিযোদ্ধারা দৌলতখাঁ, তজমুদ্দিন, লালমোহন, বোরহান উদ্দীন থানা দখল করে নেয় এবং নভেম্বর মাসে পাকসেনারা ভোলা শহরে সীমাবদ্ধ থাকে। মনপুরা সকল সময় মুক্ত এলাকা ছিল। ৬ ডিসেম্বর ভোলা মহকুমা শক্রু মুক্ত হয় এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
[৩৯৮] সিরাজ উদ্দীন আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত