You dont have javascript enabled! Please enable it!

টাঙ্গাইল জেলা শহর শত্রু মুক্ত

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল শক্রুমুক্ত হয়। ওই দিন রাতেই কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা ঢাকা-তাঙ্গাইল সড়কে পুঁতে রাখা এন্টি ট্যাংক মাইন অপসারণ শুরু করে। প্রচন্ড ঝুঁকি নিয়ে মাইন অপসারণে যারা নেতৃত্ব দেন তারা হলেন বায়োজিদ, সোলেমান, শামসুল হক, গাজী লুৎফুর রহমান ও নায়েক আলম। মাইন অপসারণ করতে গিওয়ে কাদেরিয়া বাহিনীর দু’জন সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক বিপদমুক্ত হবার পর ১২ ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্র বাহিনী এবং কাদেরিয়া বাহিনীর সন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী ঢাকা অভিযানের জন্য অগ্রসর হয়। যৌথ বাহিনী বিনা বাধায় সকাল আটটায় মির্জাপুর এবং বেলা বারোটায় কালিয়াকৈর উপস্থিত হয়। ১২ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনী সারাদিন কালিয়াকৈরে অবস্থান করে। ১৩ ডিসেম্বর ব্রিগেডিয়ার ক্লের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর পাঁচ হাজার সদস্য কড্ডাতে উপস্থিত হন। ইতোমধ্যে ব্রিগেডিয়ার শান্ত সিংহের (বাবাজী) নেতৃত্বে তার বাহিনী হালুয়াঘাট, ফুলপুর। ময়মনসিংহ মুক্ত করে টাঙ্গাইল এসে উপস্থিত হয় ১৩ ডিসেম্বর। সামান্য বিশ্রাম নেয়ার পর রাত দশটায় ব্রিগেডিয়ার শান্ত সিংহ কালিয়াকৈর উপস্থিত হন। ১৩ ডিসেম্বর রাত ৯ টায় জেনারেল নাগরা টাঙ্গালিল উপস্থিত হন। তিনি ব্রিগেডিয়ার শান্ত সিংহ, ব্রিগেডিয়ার ক্লে ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে ঢাকা অভিযানের পরিকল্পনা করে আলোচনায় বসেন।
জেনারেল নাগরা আলোচনার শুরুতেই কাদেরিয়া বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করে বার বার ধন্যবাদ জানান। তিনি আন্তরিকভাবে বলেন-বিনা বাধায় অতটা পাড়ি দিতে কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা সাহায্য না করতেন, তাহলে মিত্র বাহিনী দীর্ঘ পথ যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়তো। পথেই আমাদের অনেক শক্তি ক্ষয় হয়ে যেতো। ১৪ ডিসেম্বর সকালে মৌচাকে ঠঙ্গার বান্দ্রের নিকট ৩১ জন শক্রু সেনাসহ হানাদার বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার কাদের খান যৌথ বাহিনীর নিকট বন্দি হন। শক্রু সেনাসহ কাদের খানকে কাদেরিয়া বাহিনীর হেফাজতে রাখা হয়।
ব্রিগেডিয়ার ক্লের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীকে কড্ডায় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধ করতে হয়। কড্ডা নদীর দক্ষিণ পাশে হানাদারদের অত্যান্ত শক্তিশালী অবস্থান ছিল। এখানে ঢাকা থেকে এক ব্যাটালিয়ান পাক সেনা আগে থেকেই অবস্থান নিয়েছিল। এর স্তাহে আবার ময়মনসিংহ জামালপুরেও টাঙ্গাইল থেকে পালায়নপর হাজার দুই সৈন্য কড্ডা পর্যন্ত এসে প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। ১৪ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর সঙ্গে হানাদার বাহিনীর এক মরণপণ যুদ্ধ হল। ব্রিগেডিয়ার ক্লের হাতে ভারী অস্ত্র না থাকায় প্রথম দিকে যৌথ বাহিনী তেমন সুবিধা করতে পারেনি। এছাড়াও ক্লে এই যুদ্ধে তেম একটা ক্ষতির শিকার হতে রাজী ছিলেন না। তিনি সম্মুখ যুদ্ধে বেশি জোর না দিয়ে তার বাহিনীকে ডানে-বামে ভাগ করে দিয়ে স্থানীয় জনগণের সাহায্যে ছোট ছোট নৌকায় প্রায় প্রায় অর্ধেক সৌন্যকে নদী পার করে দিতে সক্ষম হন। নৌকা সংগ্রহও নদী পারাপারেও কাদেরিয়া বাহিনী অত্যান্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে।
মূলত ১১ ডিসেম্বরের পর হানাদার বাহিনী কিংবা তাদের সহায়ক শক্তি টাঙ্গাইল শহরে কোন সংঘাত ঘটাতে পারেনি।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!