You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.27 | টাঙ্গাইল শহরে আতঙ্ক সৃষ্টি - সংগ্রামের নোটবুক

টাঙ্গাইল শহরে আতঙ্ক সৃষ্টি

টাঙ্গাইল শহরে অবস্থানরত শত্রুসেনাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং তাদেরকে হয়রানি, নাজেহাল, ধ্বংস এবং সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি জানানোর জন্য কাদের সিদ্দিকী শক্রুর উপর চোরাগোপ্তা হামলা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭ জুলাই রাতে আমান উল্লাহ এবং আনিস নামে দুই মুক্তিযোদ্ধা সাথে আরো চারজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে টাঙ্গাইলের নতুন জেলা সদর পুলিশ লাইন ও সদর থানার দিকে এগিয়ে যায়। তারা ধুলের চরের কাছাকাছি পুলিশ লাইন ও সদর থানার কাছে নির্বিঘ্নে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু সেখানে উপস্থিত হয়ে তারা দেখে যে, নতুন জেলা সদর সার্চ লাইট জ্বালিয়ে দিনের মতো আলোকিত করে রাখা হয়েছে। ফলে শক্রুদের নিকটবর্তী হওয়া বিপদজনক। এমন সময় মুক্তিযোদ্ধা আনিস নতুন এক পরিকল্পনা করে যে, আমান উল্লাহসহ চারজন চারটি পোস্টের নিচে গিয়ে সার্চ লাইট গুলি ছুঁড়ে নিভিয়ে দিবে। অতঃপর এই পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা চারটি পোস্টের নিচে অবস্থান নেয়। ফায়ার করার পূর্বেই সবাই হানাদারদের বাঙ্কারে অবস্থান দেখে নেয়। ভালোভাবে সমস্ত জায়গাটা দেখে নিয়ে চারজন সার্চ লাইটে ফায়ার করে। ফলে বাতিগুলো নিভে যায় এবং গভীর অন্ধকারে সমস্ত এলাকাটি ডুবে যায়। এরপর শুরু হয় শক্রুর গুলি বৃষ্টি। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে শক্রুর তেমন কোনো ক্ষয় না হ্লেও সারারাত তাদের চরম উদ্বিগ্নতায় কাটাতে হয়। শহরেও হানাদার বাহিনীর ঘাটির উপর পরপর উনিশ কুড়িটা গ্রেনেড গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এতে পাক বাহিনীর অবস্থা চরম দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ আগস্ট কাদেরিয়া বাহিনীর একদল গেরিলার ঝাটিকা আক্রমণে ২ জন শক্রুসেনা নিহত এবং ৪ জন আহত হয়। এই আক্রমণের ফলে টাঙ্গাইল শহরে পাকসেনাদের অবাধ চলাফেরা অনেকটা কমে যায়। মুক্ত মিয়া, নুরুল ইসলাম, মনছুর আলী,ইদ্রিস আলী, লুৎফুর রহমান ও আজিজুল হক গেরিলা আক্রমণে অংশগ্রহণ করেন।
৫ নেভেম্বর টাঙ্গাইল শহরে নিষ্প্রদীপ মহড়া পালিত হয়। রাতটি মুক্তিবাহিনীকে এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। এবার তাদের টার্গেট পাওয়ার স্টেশন, টাঙ্গাইল জিপিও এবং শিবনাথ স্কুলের রাজাকার ঘাঁটি। করটিয়ার আশেপাশে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত বায়েজিদ আলমের নেতৃত্বে বজ্র কোম্পানি এবং স্বেচ্ছাসেবক কমান্ডার আনোয়ার দলের সুইসাইড স্কোয়াড পুরো রাত গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। টাঙ্গাইল শহরের উপর নানাদিক থেকে প্রায় ৩ শত গ্রেনেড ছোড়া হয়। কাগমারী ওয়ারলেস স্টেশনের কাছে রাজাকার ঘাঁটি, নগর জলফই পুলের নিকট টাঙ্গাইল পাওয়ার স্টেশন, টাঙ্গাইল জিপিও এর পিছনে শিবনাথ স্কুলের রাজাকার ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে ৬/৭ জন রাজাকার নিহত ও চল্লিশজন আহত হয়। ফলে পাকবাহিনীর নির্বিঘ্ন চলাফেরা বন্ধ হয়।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত